রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মিরপুরের কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরিদর্শনকালে তিনি সেবাগ্রহীতাদের যথাযথ সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
নতুন নিয়ম অনুসারে, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয় কি না, সে বিষয়েও খোঁজ রাখবেন বলে জানিয়ে দেন তিনি। পাশাপাশি এই সেবা দেওয়া হচ্ছে কি না, কিভাবে দেওয়া হচ্ছে সেসব বিষয়েও ঘুরে ঘুরে খোঁজখবর নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, গত রাতে সড়কমন্ত্রীর হঠাৎ পরিদর্শনে মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। কারণ এই কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কালের খবর’র প্রধান শিরোনামও ছিল ‘লাইসেন্স ফিটনেসে টাকার খেলা’। ঢাকার মিরপুর ও কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া কার্যালয় এবং বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে গতকাল সকাল থেকেই প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা ছিল। ঢাকার রাস্তায় আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরাও বিআরটিএর এই ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করে সঠিক সময়ে সেবা দেওয়ার জন্য এর আগে বহুবার মিরপুর, ইকুরিয়াসহ বিআরটিএর বিভিন্ন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছেন। আকস্মিক পরিদর্শন করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে শাসিয়েছেন।
শাস্তির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
গতকাল রাতে সড়কমন্ত্রী বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে মোটরযান পরিদর্শন কেন্দ্রে ফিটনেস সার্টিফিকেট কিভাবে দেওয়া হচ্ছে তা নিজের চোখে দেখেন। ওই সময় ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষায় ছিল প্রায় ১০০ যানবাহন। মন্ত্রী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন—সেবা দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হবে রাত ৯টায়। তবে এসব গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁরা কাজ করেন।
কালের খবররে গতকাল প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনে বিআরটিএ কার্যালয়ে দালালের মাধ্যমে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। জানা গেছে, বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে গতকাল পাঁচ দালালকে এক মাস করে কারাদণ্ড ও তিন দালালকে অর্থদণ্ড দেন।
সড়কমন্ত্রী গতকাল রাতে সাংবাদিকদের বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিআরটিএতে কাজের চাপ দ্বিগুণ বেড়েছে। অভিযানে ভোগান্তি হলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়িত হলে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আসবে।
ফিটনেস পরীক্ষা করতে মিরপুর বিআরটিএতে ২০১৬ সালে ডিজিটাল গাড়ি পরিদর্শন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। অন্য কোথাও এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নেই। ১৯৯৬ সালেই এ ধরনের পরিদর্শন ব্যবস্থা বিআরটিএর বিভিন্ন কার্যালয়ে স্থাপনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান বিআরটিএর কর্মকর্তারাই। শেষ পর্যন্ত সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্যোগী হয়ে এই কেন্দ্র স্থাপন করিয়েছেন। তিনি বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে বারবার অভিযান চালিয়েছেন সেবা পরিস্থিতি দেখতে, দালালমুক্ত সেবাকেন্দ্র গড়তে। তবে মন্ত্রীর এমন তৎপরতার ফাঁকেও দালালরা কর্মকর্তাদের ইশারায় ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
কালের খবররে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অটোরিকশা ধ্বংসে অটোপ্রতি ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ঘুষ না দিলে মালিকদের হয়রানি, এমনকি লাঞ্ছিতও করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে এমনই লাঞ্ছনার শিকার একজন অটোরিকশা মালিককে হয়রানির বিষয় উঠে এসেছে। বিআরটিএ ইকুরিয়া কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতাদের মাধ্যমে নানা ধরনের চাপ দিতে থাকেন ওই অটোরিকশা মালিককে।