শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন
গোদাগাড়ী প্রতিনিধি, কালের খবর : দেশে মাদক অভিযানে একে একে মাদক সম্রাট ধরা পড়লেও গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক সম্রাট জুয়াড়ী জুয়েল এখনও ধরা ছুয়ার বাইরে ! জুয়েলের খুটির জুর কোথায় ? রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা দেশের সব চাইতে পাইকারী মাদকের মোকাম বলে ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে। এই উপজেলায় রিতিমত মাদক পাইকারী বেচা-কেনা হয় বলেও জানা যায়।
প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে প্রতিদিন মাদকের শত শত চালান ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এভাবেই গোদাগাড়ী উপজেলা মাদকের সম্রাজ্য বলে পরিচিতি লাভ করে । এখানে সবজি বিক্রির মত মাদক বিক্রয় হচ্ছে।
প্রকাশ্যেই সব ধরণের মাদক বিক্রয় হয় বলে জানা যায়, তাই হাত বাড়ালেই মেলে হেরোইন,ফেন্সিডিল,গাঁজা সহ নানা ধরণের মাদক। সম্প্রতি যোগ হয়েছে মরণ নেশা ইয়াবাও। মাদক ব্যবসায়ী কেউ কেউ হচ্ছেন কোটিপতি আবার কেউ হচ্ছেন নেশাগ্রস্থ,চোর পোকেট মার, ছিনতাই কারী এবং সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত মানুষ। এভাবেই নষ্ট হচ্ছে একটি পরিবার, একটি সমাজ,একটি জাতি ও জাতির মেরুদণ্ড। উপকৃত হচ্ছে কিছু কিছু সংখ্যক মানুষ। যারা মানুষ নামের কলংক।
দেশ ও জাতির শত্রু। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই কিছু মাদক ব্যবসায়ীর নাম। গোদাগাড়ীর মাদক সম্রাটদের কথা বললে যার কথা না বললেই নয়,যার নিয়ন্ত্রনে চলে গোদাগাড়ীর কিছু কিছু শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা। মাত্র কয়েক মাস আগের ব্যবধানে ৮০/৯০ লক্ষ টাকা খরচ করে বাড়ি করায় সমালোচনায় উঠে আসেন এই মাদক সম্রাট জুয়াড়ী জুয়েল। পিতা সাইফুল হিরোইনচি নামে পরিচিতি। দুই ভাই আর মাকে নিয়ে টানা পোড়নে চলত যার সংসার। অভাবের তাড়নায় দিন মজুর হোটেল বয়,রিক্সা চালানো সহ কাজ করত মাছে আড়তে।একদিন মাছের আড়তে চুরি করে পালিয়ে যায় সিরাজগঞ্জে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক,তারই একজন সহযোগী আমাদেরকে জানায় আজ থেকে প্রায় ১৮/১৯ মাস পূর্বে গোদাগাড়ী থেকে পালিয়ে সিরাজগঞ্জের গ্রিনচিলস নামের খাবার হোটেলে কাজ নেয় এই জুয়াড়ী জুয়েল এবং খান বোডিং এবং বিসমিল্লাহ হোটেলে বয়ের কাজ করে। এভাবেই শুরু হয় তার জীবন যাত্রা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর হেরোইনের রাজধাণী নামে পরিচিত রেলবাজার বাড়ি হওয়ায় সিরাজগঞ্জের স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের নজরে আসে এই জুয়েল। এইভাবেই শুরু হয় তার মাদক ব্যবসাহ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের মার্চ মাসে নাটোরের ডিবি পুলিশের হাতে ২শ গ্রাম হেরাইন সহ ধৃত হন এই জুয়েল। পরবর্তীতে টাকার জোরে ছাড়াও পেয়ে যায়।
পুনঃরায় শুরু হয় মাদকের চোরাচালান। এরই ৩মাস পরে ২০১৩ সালের জুন মাসে হানিফ পরিবহনে যাত্রীবাহি বাসে ৩শ গ্রাম হেরোইন সহ ধরা খেয়েও পার পেয়ে যায় এই জুয়ারি জুয়েল।বার বার ধরা পড়ায় কোনঠাসা হয়ে পরে জুয়েল।দিশেহারা হয়ে তার আপন ছোই ভাইকে দিয়ে আবার শুরু করে তার চোরাকারবার।৫/৬ মাস পরে সেও ধরা পরে বগুড়ার ডিবি পুলিশের হাতে।তারপরেও ক্ষ্যান্ত হয়নি সে।এরপর রুবেল,ফুলারী মাসুদ, ফেন্সি মাসুদ ইয়াবা জহুরুল আরো অনেককে টাকার লোভ দেখিয়ে মাদক বহনকারী হিসাবে ব্যবহার করত।তার মাদক বহনকারী রুবেল আমাদেরকে জানায় আমি একজন রিক্সা চালক প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে ২০০-২৫০ টাকা জোগার করতাম।হঠাৎ জুয়েল আমাকে বলে আমার কাজ করলে ৪০/৫০ হাজার টাকা মাসে আয় করতে পারবি এবং তোর কিছু হলে তোর পরিবারকে সম্পূন্ন দেখা শুনা করব।তার বিনিময়ে তার আমি হোরোইন বহন করি। আমি তার হোরোইন ফকির বেশে সিরাজগঞ্জ, নাটোর,বগুড়া,সিলেট, পাবনা,চট্টগ্রাম,ঢাকাসহ
দেশের বিভিন্ন স্থানে বহন করতাম।একদিন তার কিছু হেরোইন আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলে
জুয়েল আমাকে ২দিন ঘরে বন্ধি করে রাখে এবং আমার বাম পা ভেঙ্গে দেয়।রুবেল আমাদেরকে আরো জানায় যে তার রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার পিছনে মূল কারণ হলো যে সে একজন বড় মাপের হেরোইন কারিগর।সে নিজেই পাশের দেশ ভারতের লাল গোলা,কৃষ্ট পুর, ভবন গোলা,বহরমপুর থেকে হেরোইন তৈরীর সরঞ্জাম ও কেমিক্যাল চোরাকারবারিদের মাধ্যমে নিয়ে এসে আনায়াসে বাড়িতে বসে এই হেরোইন তৈরী করতে পারে।এই জন্য তার বাড়িতে ৫/৬ জন নিয়োগ দেয়া থাকত।এতে করে সে প্রতিরাতে ২/৩ কেজি হেরোইন তৈরি করতে সক্ষম হতো।রুবেল আমাদেরকে আরো জানায় তার একজন আত্নীয় মতি যে তার হেরোইন নিয়ে ঢাকা যাওযার পথে ৫শ গ্রাম হেরোইন সহ সিরাজগঞ্জের র্যাবের হাতে ধরা পড়ে এখনও জেল খাটচ্ছে।আর তার ২ মেয়ে নিয়ে তার স্ত্রী অভাবে অনাহারে জীবন যাপন করছে।জুয়াড়ী জুয়েল এর আরেজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী আমাদেরকে জানায় জুয়াড়ী জুয়েল হেরোইন ও ইয়াবা দেশের সিরাজগঞ্জের কুখ্যাত ব্যবসায়ী রাজ্জাকের জামাই সাচ্চু, সেরপুর জামালপুরের মনীরা, পাবনার আরশাদ,সেলিম আরো অনেকের কাছেই সরবরাহ করত। এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করতে তার এলাকায় রেলবাজার গেলে জানা যায় মাছের আড়তে যখন সে কাজ করত তখন সে দিনেই মাছ আড়তে কাজ করত আর রাতে জুয়া খেলত। এর জন্যই তার নাম জুয়াড়ী জুয়েল নামে পরিচিত।
এই উপজেলায় বহু লোক আছেন যারা অতি অল্প দিনে হেরোইনের কারবার করপ শূন্য থেকে কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন। গোদাগাড়ীর নাগরিক
কিমিটির সভাতি শাস্ত কুমার মজুমদার বলেন ধরা না পরলে অল্প দিনেই কোটিপতি হওয়া যায় এই মাদক ব্যবসায়।ছোটকাল থেকেই তিনি এমন অনেক জন কে চিনেন যারা এভাবেই হত দরিদ্র থেকে রাতা রাতি কোটিপতি হয়েছেন।
স্থানী দের থেকে আরো জানা যায়, মাদকের এ ভায়াবহ পরিচিতি নিয়ন্ত্রনে মাঝে মধ্যে বিজিবি, র্যাব,পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করে যাদের আটক করা হয় তাদের বেশিভাগই বনহকারী।
সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এ.এস.পি) আব্দুর রশীদ বলেন, পুলিশ অন্যান্য কাজের ফাকে মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে থাকে।তিনি আরো বলেন, মাদক ব্যবসায়ী দের সাথে পুলিশের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন তিনি।কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তবে সম্প্রতি সময়ে এ রকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে আছে বলেই গত বছর শুধু গোদাগাড়ীতেই ৬ কোটি টাকার বেশি মাদক দ্রব্য উদ্ধার হয়েছে।মামলা দায়ের হয়েছে ২শ ৮৯ টি।গোদাগাড়ীর সাধারণ মানুষ বলেন : এদের মত মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে গোদাগাড়ী চিহ্নিত হচ্ছে মাদক রাজ্যে।
দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন ।