শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক :
ইতিহাস সৃষ্টি করে মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় ফিরলেন ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ। বুধবারের নির্বাচনে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয় তার দল পাকাতান হারাপান। ক্ষমতার মসনদে চমকপ্রদ এ প্রত্যাবর্তনে দু দুটো ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন দেশটির সাবেক ও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ৬১ বছরে এবারই প্রথম ক্ষমতার পালাবদল হলো মালয়েশিয়ায়। আর ৯২ বছরের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক হতে চলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রধানমন্ত্রী।
১৫ বছর আগে ক্ষমতা ছাড়ার পর মালয়েশিয়ার সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবারই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাহাথির। স্থানীয় সময় ভোর তিনটায় দলের বিজয় ঘোষণার সময় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। একইসঙ্গে তিনি আগামী তিন দিন ছুটি ঘোষণা করেন। মালয়েশিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক বন্দি আনোয়ার ইব্রাহীমের প্রসঙ্গে তিনি জানান, সাবেক ওই নেতার সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করবেন। মাহাথির বলেন, ‘তিনি জুন মাসে মুক্তি পাবেন। ক্ষমা ঘোষণার পর তিনি ফের সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। তবে তার আগে নির্বাচনের মাধ্যমে তাকে পার্লামেন্টের সদস্য হতে হবে।
এর আগে মালয়েশিয়ার নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী জোট পাকাতান হারাপান’কে বিজয়ী ঘোষণা করে। দলটি সরকার গঠনে প্রয়োজন নূন্যতম সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১১২ টি আসন ছুঁয়ে ফেলার পরই আসে এ ঘোষণা। ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল তখন ৮০ আসনও পার করতে পারে নি।
নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভরাডুবির তিক্ত স্বাদ পাওয়া ক্ষমতাসীন জোটের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এক সময় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদেরই শিষ্য।
নাজিব ওয়ান এমডিবি রাষ্ট্রীয় তহবিল কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার পর ন্যাশনাল ফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ একটি দল ছেড়ে বিরোধী দলে যোগ দেন মাহাথির। তিনি নাজিবের পদত্যাগ দাবি করেন।
এই কেলেঙ্কারিতে জড়ানো ছড়াও দেশে ক্রমাগত জীবিকা নির্বাহের ব্যয় বাড়ার কারণে জনপ্রিয়তা তলানীতে যেতে থাকে নাজিবের।
২০১৩ সালে গেল নির্বাচনে ন্যাশনাল ফ্রন্ট জনপ্রিয় ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। তবে নিম্ন কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে কূল রক্ষা হয় নি তার। জাতিগত বহু মালয় যারা কিনা ঐতিহ্যগতভাবে ক্ষমতাসীন জোটকে সমর্থন করে আসছেন, তারা ব্যালটে তাদের পছন্দ পাল্টেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভোটের ফলও সেটাই বলছে কেননা, দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা হলো মালয়। এরপরই রয়েছে জাতিগত চীনা ও ভারতীয়।
রাত সোয়া একটায় নির্বাচন কমিশন পাকাতান হারাপানকে বিজয়ী ঘোষণার পরই দেশটির রাজা সুলতান মোহাম্মদ জোটের প্রধান মাহাথির মোহাম্মদকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনের আগ দিয়ে কিছু বিশ্লেষক আগাম ধারণা করেছিলেন যে ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য সামনের পথচলা হতে চলেছে কণ্টকাকীর্ণ। নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তারা বলেছেন, একেতো দেশটি কখনও ক্ষমতার পালাবদল প্রত্যক্ষ করে নি, তার ওপর সরকারের নতুন মন্ত্রীদের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি রয়েছে। তবে, প্রেক্ষাপট যাই ছিল না কেন, ইতিহাস রচিত হয়ে গেছে। আর তাতে একক নাম খচিত থাকবে মাহাথিরের।
.………দৈনিক কালের খবর