কেনা ১২ একর, দখল ১৮ একর
বরিশাল-কুয়াকাটা সড়ক ধরে যেতেই তুলাতলীর মহাসড়কের পাশের বিশাল একটি এলাকা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কয়েক মাস আগে এই জমিতে কেআর ফ্যাশনের সাইনবোর্ড ঝুলত। এখন সেই সাইনবোর্ড নেই। স্থায়ীরা জানান, কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া জমির ১২ একর রুহুল আমিন হাওলাদার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কিনেছেন আর অন্যের ১৮ একর জমি দখল করেছেন।
ভুক্তভোগী আব্দুর রশিদ মোল্লার ছেলে সিদ্দিক মোল্লা বলেন, ‘রুহুল আমিন হাওলাদার ভুয়া ডিক্রিমূলে ১২ একর জমি কিনেছেন এবং দখলে রেখেছেন আরও ১৮ একর জমি। অথচ জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি ওই জমি আমাদের। দলিলপত্রও আছে। আমরাই ভোগ-দখল করছিলাম। কিন্তু তিনি সাত্তার ফরাজী, কালাম ফরাজী গংকে ভুয়া মালিক সাজিয়ে পেট্রলবোমা মামলা, গার্মেন্টসে অগ্নিসংযোগসহ আরও সাত-আটটি মামলায় আমাকে আসামি করে মিথ্যা মামলা করেন। ২০২৩ সালে দায়ের করা এ রকম দুটি মামলা এখনো চলছে। একটি মামলায় আমাকে ১৯ দিন জেল খাটতে হয়েছে। তিনি আমার বৃদ্ধ মা লাইলি বেগমসহ পাঁচ ভাই ও চার বোনকে গ্রেপ্তার করিয়ে আমাদের অংশের জমি দখল করেছেন।’
গ্রেপ্তার করিয়ে ৩৬ শতাংশ জমি দখল
কুয়াকাটা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে ৩৬ শতাংশ জমির মালিক শাহাজান শেখ। তার ভাই নুরুল ইসলাম, সোবাহান শেখ, আবু বকর ও বোন নাসিমা বেগম। ২০১০ সালের দিকে রুহুল আমিন হাওলাদার ওই জমি কেনার জন্য শাহাজান শেখের কাছে প্রস্তাব পাঠান। শাজাহান পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করতে আপত্তি জানালে ২০১১ সালে কুয়াকাটা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিজানুর রহমানকে দিয়ে তাদের মহীপুর থানায় ডেকে পাঠান। থানায় বসে শাহাজান শেখসহ তার ভাইবোনদের কাছ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারের অনুকূলে দলিল লিখে দেওয়ার জন্য পুলিশ চাপ সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে কুয়াকাটা হোটেল ব্যবসায়ী সমিতির তৎকালীন সভাপতি মো. চান মিয়া থানায় মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।
শাহাজান শেখ বলেন, ‘ওই ঘটনার ৮-১০ দিন পর চাঁদাবাজির অভিযোগে চার ভাই, বোন ও বোন জামাইসহ ছয়জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। গ্রেপ্তারের পর রুহুল আমিন আমাদের পৈতৃক জমি দখল করে নেন। জমিতে মাটি ফেলে উঁচু করে সামনের অংশে সীমানাদেয়াল নির্মাণ করিয়ে ‘হোটেল হানিমুন প্যালেস’-এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। ওই মামলায় দুই মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়ে আমরা আদালতে মামলা করি। চলতি বছরের ১৮ আগস্ট ওই মামলায় আমাদের পক্ষে রায় হয়। কিন্তু তার ক্যাডারদের জন্য আমরা ওই জমিতে ঢুকতে পারছি না।’
থমকে যায় দুদকের অনুসন্ধান
এরশাদ সরকারের আমলে বস্ত্রমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টেন্ডার ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়ে অবৈধ পন্থায় আর্থিক লাভবান হওয়ার অভিযোগে ১৯৯১ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর উপপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় রুহুল আমিন হাওলাদারকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল।
এ ছাড়া ২০১৮ সালে রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য নাসরিন রত্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবার এবং একই বছরের ১০ নভেম্বর দ্বিতীয়বার তলব করে। ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাওলাদার উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। আদালত প্রাথমিক শুনানি শেষে দুদকের তলব স্থগিত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান বিরোধী দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় দুদকের ওপর প্রভাব খাটানোর কারণে তার বিরুদ্ধে তদন্ত বেশি দূর এগোয়নি।
এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ সম্পর্কে গত ৮ অক্টোবর রাতে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘কুয়াকাটা ও কলাপাড়া এলাকার স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে সমাজে হেয় করার জন্য বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। একটি মহল ৫ আগস্টের পর আমার কেনা বিভিন্ন মৌজার জমি দখল করেছে।’