সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন
মোঃ জসিম উদ্দিন, নিজস্ব প্রতিনিধি, কালের খবর
২০০১ সালে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগে প্রবাসে কর্মরত ১ কোটি ৫০ লক্ষ প্রবাসী, দেশে অবস্থানরত তাদের পরিবারের সেবা প্রদান এবং ১০৪ টি কারিগরি প্রশিক্ষণ (টিটিসি) কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদেশে গমনিচ্ছুদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ২০০১ সালে ২০ ডিসেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নামে একটি নতুন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন।মন্ত্রণালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সচিবালয়ের ৭ নাম্বার ভবনে এর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু ২০১২ সালে একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় ও ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে তৎকালীন মন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ব্যতিরেখে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে মন্ত্রণালয়টি ইস্কাটন গার্ডেন প্রবাসী কল্যাণ ভবনে স্থানান্তর করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকার কারণে অদ্যবধী মন্ত্রণালয় কোন পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নাই। শুধু আনসার দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ মন্ত্রনালয়টি সচিবালার বাইরের নেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ ও বিদেশে গমনচ্ছুক কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা। অনুসন্ধানে জানা গেছে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফের লোকজন বিদেশ গমনিচ্ছুক কর্মী প্রতি নিয়োগানুমতির জন্য ১০হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করতেন, যার পরিমান তার মন্ত্রীত্ব কালিন সময়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বলে অনেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন এবং তার সাথে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানীতে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বোরাক রিয়েল এষ্টেটের মালিক নুর আলীর সাথে স্বখ্যতার কারনে, নুর আলীর নিজস্ব বিল্ডং, বোরাক টাওয়ারে এই অফিসটি ভাড়া নেন। তার এই ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের টাকা ও অপচয় করেছেন, যা শুধু অফিস ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ২৫ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয় , এবং যার জন্য রাষ্ট্রকে প্রতি বছর ৩ কোটি ৬ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা বহন করতে হচ্ছে। এছাড়া এই মন্ত্রণালয় ইস্কাটন গার্ডেনে অবস্থিত হওয়ার কারণে দক্ষ যোগ্য কর্মকর্তারা বেশিদিন এই মন্ত্রণালয়ে সার্ভিস দিতে অনীহা প্রকাশ করে, কারণ সকল দক্ষ কর্মকর্তা সচিবালয়ে অবস্থিত মন্ত্রণালয় গুলোতে চাকরি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। শেখ হাসিনার পতনের পর ও তার ধারাবাহিকতা এখন বিদ্যমান, এখন ও বিভিন্ন গ্রুপের হুমকি ধামকিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীএবং এই সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে।এই মন্ত্রণালয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সি ক্যাটাগরির মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিগনিত হয়েছে। যদিও গত ১মাসে উল্ল্যেখযোগ্য পরিমান রেমিটেন্স দেশে এসেছে। যা্র মধ্যে শুধু চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে ই (১৪ দিনে) ১১৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ১৪ হাজার ৬ কোটি টাকা। তাছাড়া অর্ন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে দেশের রেমিটেন্সের অন্যতম প্রধান এই খাতে ও সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। জনশক্তি রপ্তানীতে মালয়শিয়া, মধ্যপ্রাচ্য সহ পৃথিবীর অনেক দেশে কর্মী নিয়োগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
এখানে উল্লেখ্য যে সহজে অনুপ্রবেশ যোগ্য হওয়ায় দেশের জনশক্তির একটি বড় অংশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স এর গুরুত্ব কে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী মহল এই মন্ত্রণালয় কেন্দ্রে বিভিন্ন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। যার ফলে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, সার্বিক বিবেচনায় দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা এবং এ সকল কুচক্রি মহলের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য মন্ত্রণালয়টি সচিবালের ভিতরে স্থানান্তর হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
তাছাড়া এই মন্ত্রণালয় চাকরিজীবী কর্মকর্তা কর্মচারীগণ বিভিন্ন সযোগ সুবিধা যেমন পরিবহন, ডাক্তার, রেশ্ন ক্যান্টিন, আবাস্ন,ডে কেয়ার হতে ও বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তদন্ত সাপেক্ষে অনতি বিলম্বে রাষ্ট্রে এই বিশাল অপচয় ও দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং তার সাথে সাথে এই গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয় টি সচিবালয়ের ভিতরে পুনরায় স্থানান্তর করে সেবার মান বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই।