মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন
কালের খবর : সাবধান, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ, পায়ে হেঁটে পারাপার হউন। গাড়ী চলন্ত অবস্থায় ধরা পরিলে একশত টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য থাকিবেন। আদেশক্রমে খোলাহাটী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে মো. আশরাফুল ইসলাম। কথাগুলো লেখা কাউনিয়া-বোনারপাড়া রেলরুটের গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের কিশামত বালুয়া গ্রামে ঘাঘট নদীর উপর ভেড়ামারা রেলসেতুর পশ্চিম পাশে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি একটি কাঠের সাঁকোর দুইপাশে।
খোলাহাটী ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে স্থানীয় আব্দুল লতিফ, ফরিদ উদ্দিন, সাইদার রহমান ও এরশাদ হোসেন নামের চার যুবকের উদ্যোগে ও তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান কাজী ইব্রাহীম খলিল উলফাত এবং গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমে এই কাঠের সাঁকোটি তৈরি করা হয়। এরপর সাঁকোটি দিয়ে পাশ্ববর্তী বল্লমঝাড় ও কুপতলাসহ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার সহ¯্রাধিক মানুষের সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকসা, ভ্যান, অটোরিকসা, সিএনজি ও মানুষ চলাচল শুরু করে। এরপর থেকে দীর্ঘদিনেও আর কোন মেরামত কাজ না করায় সাঁকোটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরে। বর্তমানে সাঁকোটি দিয়ে রিকসা, ভ্যান, অটোরিকসা ও সিএনজি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু সাইকেল ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সুত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-সুলতানপুর রেলওয়ে ব্রাঞ্চ নামে একটি কোম্পানি ১৮৯৯-১৯০০ সালে সান্তাহার জংশন থেকে ফুলছড়ি পর্যন্ত মিটার গেজ সেকশনটি চালু করে। এই কোম্পানিও ১৯০৪ সালের ১ এপ্রিল ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে আসে। ১৯০৫ সালে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাউনিয়া-বোনারপাড়া মিটারগেজ সেকশনটি চালু হয়। এরপর থেকে কিশামত বালুয়া গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অল্প সময়ে জেলা শহরে আসার জন্য ভেড়ামারা রেলসেতুর উপর দিয়ে চলাচল করে। এতে করে রেলসেতু থেকে সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে নদীতে পরে গিয়ে বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় সাইকেল-মোটরসাইকেল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াসহ মানুষ মারাত্বকভাবে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে দীর্ঘদিন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চলাচলে মানুষকে সাবধান করে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকোটির দুইপাশেই লাগানো হয়েছে সাইনবোর্ড। মানুষ সাইকেল ও মোটরসাইকেল থেকে নেমে সাঁকোটি হেটে চলাচল করছে। ব্যাটারিচালিত রিকসা-ভ্যান ও অটোরিকসা যাতে সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করতে না পারে সেজন্য দক্ষিণ পাশে সাঁকোতে উঠতেই মাঝখানে একটি খুঁটি পুতে রাখা হয়েছে। নদীতে পুঁতে রাখা কাঠের সাঁকোটির খুঁটির গোড়া আলগা হয়ে যাওয়ায় সাইকেল ও মোটরসাইকেল চলাচলের সময় সাঁকোটি দোলে। এসময় ধীরে ধীরে মানুষকে হেটে চলাচল হতে হয়।
কিশামত বালুয়া গ্রামের রিকসাচালক সেলিম মিয়া বলেন, আগে রেলসেতুর উপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মানুষদের দুর্ঘটনায় পরতে হতো। এই কাঠের সাঁকোটি হওয়ার পর সহ¯্রাধিক মানুষের সেই দুর্ভোগ লাঘব হয়। কিন্তু বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে কাঠের সাঁকোটির উপর দিয়ে রিকসা-ভ্যান ও অটোরিকসা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এটি তৈরির পর আমাদের অনেক উপকার হয়েছিল। এখন আবার বেশি এলাকা ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছুতে হচ্ছে। এজন্য খুব সমস্যায় পরতে হচ্ছে আমাদের। তাড়াতাড়ি সাঁকোটি মেরামত করা দরকার।
খোলাহাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামাদ আজাদ বলেন, কাঠের সাঁকোর ওই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। যা এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাস হয়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আনিছুর রহমান বলেন, এই কাঠের সাঁকো আমরা তৈরি করিনি। তাই সাঁকোটি মেরামতের সাথে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন সেতু নির্মাণ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তাই আপাতত কাঠের সাঁকোটি মেরামতের বিষয়ে আমি দু-একদিনের মধ্যেই ওই কাঠের সাঁকোটি দেখতে যাবো। এরপর আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।