‘ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি যে বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই একটি চক্র আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরবে। আমি চিন্তাও করতে পারিনি, ডাক্তার এম আর খানের সহায় সম্পত্তিকে গ্রাস করবে। আমি বাবার একমাত্র সন্তান এবং কন্যাসন্তান। আমার কোনো ভাই নেই। সেই আমাকেই কেউ আমার ন্যায্য উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।’
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলছিলেন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এম আর খানের মেয়ে ম্যান্ডি করিম।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি’ এবং ‘সেন্ট্রাল হাসপাতাল’ জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের অভিযোগে তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ম্যান্ডি করিমের স্বামী রেজা করিম ও তাঁদের আইনজীবী তামিম রহমান উপস্থিত ছিলেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন নাট্যকার মামুনুর রশীদ।
ম্যান্ডি করিম বলেন, ‘বাবার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমার পাওনা শেয়ার, উত্তরাধিকার এবং ট্রাস্টি পদ থেকে আমাকে কৌশলে সরিয়ে রাখা ও বঞ্চিত করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমার কোনো অধিকার নেই, আমি এম আর খানের কেউ নই। আমার বাবা প্রয়াত অধ্যাপক এম আর খানকে ভালোবেসে এবং তাঁর ওপর ভরসা করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার নাম “সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি”।
ম্যান্ডি করিম বলেন, ‘আমার বাবা যখন হাসপাতালে মৃত্যুপথযাত্রী, তখন গাজী সালাম নামের এক ব্যক্তি চক্রান্ত ও জালিয়াতি করে ইউনিভার্সিটির সকল প্রকার রেজুলেশন, ডকুমেন্টস এবং ট্রাস্টি বোর্ডের তালিকা থেকে আমার বাবার নাম বাদ দিয়ে দেন। আমার বাবা এবং ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিনি এ কাজ করেন। আমার বাবার নাম বাদ দিয়ে নিজেকে ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েদের সমন্বয়ে একটি ভুয়া ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে জমা দেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অধ্যাপক এম আর খান ছিলেন অ্যাডভান্স ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তাঁর এই ফাউন্ডেশনের নামে তিন বিঘা জমি বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। সেই জমিটিও বেদখল হয়ে গেছে। এম আর খানের হাতে গড়া অ্যাডভান্স ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন থেকেও অত্যন্ত কৌশলে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবারের কাউকেই রাখা হয়নি। নানা মানুষের কাছ থেকে ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করার কথা বলে কোটি কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে।
ম্যান্ডি করিম বলেন, তাঁর এক চাচাতো ভাই এই হাসপাতালে আমার বাবার শেয়ারের অংশ দাবি করে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে প্রভাবিত হয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালের বর্তমান পরিচালনা পরিষদ আজ অবধি কোনো বোর্ড মিটিংয়ে শেয়ার ট্রান্সফারের ব্যাপারটি উপস্থাপন করেননি। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে আরও একটি প্রতিষ্ঠান নিবেদিতা নার্সিং হোম, যা এম আর খান প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেও সেই সেন্ট্রাল হাসপাতালের মতো কয়েকজন পরিচালক তাঁকে সব কার্যক্রম থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের তিনজন পরিচালক আবার সেন্ট্রাল হাসপাতালেরও পরিচালক।