শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক : জাতিসংঘে নিযুক্ত আমেরিকার প্রতিনিধি নিকি হ্যালি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এনে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নাটক মঞ্চায়িত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইরানের ব্যাপারে করণীয় বিষয় ঠিক করার জন্য যে শহরে বৈঠক ডাকা হয়েছে এর আগে গতমাসে সেখানেই নিকি হ্যালি বিধ্বস্ত ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু টুকরা দেখিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ বাহিনী সৌদি আরবে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে তার পেছনে ইরানের সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে।
গত নভেম্বর মাসে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ বাহিনী রিয়াদের উপকণ্ঠে বিমানবন্দর লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। এরপর নিকি হ্যালি ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরার পাশে দাঁড়িয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন, এটা ইরানের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ইশতেহার লঙ্ঘন করেছে তেহরান। কিন্তু এর কিছু পরেই জাতিসংঘ মহাসচিবের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ফারহান হক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, “আনসারুল্লাহ যোদ্ধাদের ছোঁড়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র কোন দেশের তৈরি তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
ইয়েমেনের আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. আব্দুর রহমান আল রাজাহ এ ব্যাপারে বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরা প্রদর্শনের পেছনে আমেরিকার তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, সৌদি আরবের কাছ থেকে অধিক সুবিধা আদায় করা। আমেরিকা নিজেকে সৌদি ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের প্রধান মিত্র হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়েছে যাতে ওই দেশটি আমেরিকার কাছ থেকে আরো বেশি অস্ত্র কিনতে উৎসাহি হয়।
দ্বিতীয়ত, তেহরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতবিরোধ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহযোগিতা না করার কারণে ওয়াশিংটন এখন পরমাণু বিতর্ক থেকে সরে এসে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে টার্গেট করেছে এবং এই ইস্যুতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
আমেরিকার তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় থেকে সবার দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ফেরানো। কারণ সৌদি আগ্রাসনে আমেরিকাও জড়িত। এ অবস্থায় ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরা প্রদর্শন করে আমেরিকা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি অমানবিক আগ্রাসন ও অবরোধকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে।
আমেরিকা, সৌদি আরব ও ইসরাইল নিরলসভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরা এবং মিথ্যা প্রদর্শনীর মাধ্যমে সবাইকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এ সম্পর্কে লিখেছে, “আমেরিকা সৌদি আরবকে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে সমগ্র ওই অঞ্চলকে চরম বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করা বিস্ময়কর।”
যাইহোক, আমেরিকা ইয়েমেনকে ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার জন্য ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে। অথচ গত প্রায় তিন বছর ধরে আমেরিকা সৌদি আরবকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানোর পাশাপাশি ওই দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। মার্কিন সমর্থন নিয়ে সৌদি অবরোধ ও আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ইয়েমেনের হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৭০ লাখের বেশি মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে।