সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদন :
আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের জনসমর্থন নয়, বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, তাদের জন্য একমাত্র চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের ভাষ্যে, টানা এক দশক ক্ষমতাসীন হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত সহায়-সম্পদ বেড়েছে। কিন্তু, দল হিসেবে এখন আর তারা সংগঠিত নয়। মূলত দলটির সভাপতি কখন, কী রাজনৈতিক চাল দেন, তা ধরাই বিএনপির নেতাদের কাছে দুষ্কর হয়ে গেছে।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, গত দেড় যুগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নিজেকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে তার রাজনৈতিক কৌশলের পাল্টা কৌশল দেয়াটা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করলেও বিএনপির একাধিক শীর্ষনেতা এমনটিই মনে করেন। আবার কেউ কেউ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে স্বীকার করে নেন, আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় নিতে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা কী কৌশল নেন, তার দিকে তারা তাকিয়ে আছেন। সেটি দেখার পরই পাল্টা কৌশল নির্ধারণ করবেন বলেও জানান তারা।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, তাদের সামনে একটাই পথ খোলা, যে করেই হোক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া। কারণ, বৃহৎ পরিসরে নির্বাচন হলে রাজধানীর মতো একক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার মতো সামর্থ আওয়ামী লীগের থাকবে না।
এমন অবস্থায় সরকার নির্বাচন না দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত ভিন্ন কৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে বলেও বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা আশঙ্কা করছেন।
ইতোমধ্যে বিএনপির মুখপাত্র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ একাধিক নেতা তাদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের জন্য ‘এক নম্বর সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
কারণ, বিএনপি নেতারা ভালো করেই জানেন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের কৌশল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতা কিংবা বর্তমান এমপি-মন্ত্রীদের মাথা থেকে আসবে না। একমাত্র শেখ হাসিনাই বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন।
এমন প্রসঙ্গের ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের খবরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে শিখতে শেখ হাসিনা এখন প্রাজ্ঞ। বহির্বিশ্বেও তিনি মোটামুটি ক্যারিশমা দেখাতে পেরেছেন। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যেমন সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করেছেন। চীনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ভারত ও চীনকে দিয়েই শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করেছেন। তিনি আগের চেয়ে এখন অনেক পরিপক্ক।’
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন কালের খবরকে বলেন, ‘ভয় কিংবা আতঙ্কের কিছু নেই। নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। বিএনপির দুর্বলতা হোক আর নিজের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়েই হোক তিনি সেটি করতে পেরেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সরকার তার (শেখ হাসিনা) পরিকল্পনা অনুযায়ীই করবে। তবে এই নির্বাচনকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়, বিএনপিকে এখনই তা নিয়ে ভাবতে হবে। হতে পারে এই নির্বাচনই হবে বিএনপির বর্তমান দশা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন কালের খবরকে বলেন, ‘এটা তো সত্য, ব্যাপক দুর্নীতি, বিচার বিভাগকে হেয়প্রতিপন্ন, প্রশাসন যন্ত্রকে ভঙ্গুর এবং রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ভারতের কাছে নতজানু করার দায়ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। একচ্ছত্র ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। সেদিক থেকে দেখলে তাকে আমাদের একমাত্র সমস্যা মনে করাটা দোষের কিছু নয়।’
বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কালের খবরকে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশের একমাত্র সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা বিএনপির আরেকটি বড় ভুল। এর মাধ্যমে তারা সমস্যাকে এককেন্দ্রিক করে ফেলেছে।’
তিনি পরামর্শ দেন, ‘শেখ হাসিনাকে নিয়ে চিন্তা না করে বিএনপির উচিত ঘর থেকে বেরিয়ে জনগণের স্বার্থে তাদের পাশে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়া। ক্ষমতায় গেলে জনগণের জন্য কি করবে, তাও এখনই স্পষ্ট করা উচিত।’
দৈনিক কালের খবর /কে/এল