সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২২ পূর্বাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক : বিএনপিকে দুর্নীতিবাজ দল হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আয়নায় নিজের মুখ দেখতে বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব গতকাল বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক অধিকার মঞ্চের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী সংসদে ‘আপত্তিকর’ কিছু কথা বলেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল যারা তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে জনগণের ভোটে, যারা জনগণের সঙ্গে সব সময় থেকেছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছে, এই দলটিকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন , ‘দুর্নীতিপরায়ণ দল।’ বলার আগে আয়নায় তো নিজের মুখ দেখতে হবে। বলার আগে মানুষ কী বলে আপনাদের সম্পর্কে সেটা জানতে হবে।’’
ফখরুল বলেন, এই যে মেগা প্রজেক্ট, এসব মেগা প্রজেক্টগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। আর দেশের মানুষ খুব ভালো করে জানে যে, কারা দুর্নীতি করছে, কারা দুর্নীতি করছে না।’
আওয়ামী লীগ সম্পর্কে দুই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের মন্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘অনেকদিন আগে মারা গেছেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক এ বি এম মূসা সাহেব বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেখলেই বলবা ‘চোর’।’ এমনকি কয়েকদিন আগে কলকাতার এয়ারপোর্টে বদরুদ্দিন ওমর সাহেব আ. লীগের কয়েকজনের নাম ধরেই বলেছিলেন তারা ‘চোর’।’’
১/১১ সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জ ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে ৪টা মামলা ছিল আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১টা। এই ৪টা মামলা রেখে দিয়েছেন আর ১৫টা মামলা তুলে নিয়েছেন।’
সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, ‘সাড়ে ৭ হাজার মামলা আপনাদের (আ. লীগ) কর্মীদের বিরুদ্ধে যেগুলো ছিলো সেগুলোও তুলে নিয়েছেন। আর আমাদের বিরুদ্ধে সেই মামলা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন ৭৮ হাজার মামলা। আমাদের আসামী সংখ্যা এক মাস আগে পর্যন্ত হিসাব নিয়েছে ১৮ লক্ষের উপরে। গোটা কারাগারগুলো ভরে গেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভিড়ে। কেনো করছেন এটা? একটি মাত্র কারণ তারা যদি বাইরে থাকে, মাঠে থাকে, জনগনের সঙ্গে থাকে তাহলে আগামী নির্বাচনে আপনারাদের কোনো আশা নেই।’
আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করতেই ‘যেনতেন ভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল’ করতে সকল বিরোধী নেতা-কর্মীদের সরকার গ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগও করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লড়াইটা বড়। একদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা, নেতা-কর্মীদের মুক্ত করা। অন্যদিকে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করার এই সংগ্রাম। আমাদের সংগ্রাম মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবার জন্য, আমি যাতে নিরাপদে নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারি তার সংগ্রাম, আমাদের ছেলে-মেয়েরা সত্যিকারভাবে ভালো পরীক্ষা দিতে পারে, প্রতিদিন যাতে প্রশ্নপত্র আউট না হয় সেই ব্যবস্থা করা। আজকে এই সরকার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। সেজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলকে এই দানবকে পরাজিত করতে হবে। সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সব দলের অংশগ্রহনে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
দশম সংসদকে ‘জনগনের প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ নয়’ দাবি করে এই সংসদে বিরোধী দলের নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্য তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সংসদে যত আইন পাস করা হচ্ছে , তাতে জনগনের কোনো প্রতিনিধিত্ব নাই, তাদের অংশগ্রহন নাই। এই সংসদকে আমরা কখনোই বৈধ ও আইনসম্মত সংসদ মনে করি না।’
সংগঠনের সভানেত্রী নিপুন রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।