বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন
১। আয়না তার চোখে ধরা পড়া আমাদের বিবিধ ত্রুটি ও অসঙ্গতির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর ফলে আমরা হয়তো আমাদের অগোছালো চুলটা ঠিক করে আঁচড়ে নেই, ময়লা ও অসুন্দর জামাখানি বদলে নেই, কাঁধের উপর লেগে থাকা ময়লাটি টোকা মেরে ফেলে দেই কিংবা খসখসে ঠোঁটে সামান্য ভ্যাসলিন মাখিয়ে নেই প্রভৃতি।
২। আয়না কেবল তখনই আমাদের কারো ত্রুটি-অসঙ্গতি তুলে ধরে, যখন আমরা তার সামনে থাকি। তার অগোচরে বা পিছনে থাকা অবস্থায় সে কখনোই কিন্তু এ বিষয়ে কোন কথা বলে না।
৩। সামনে একজন দাঁড়ানো অবস্থায় সে কখনোই অন্যের চিত্র দেখায় না। অর্থাৎ, একজনের ত্রুটি-অসঙ্গতির চিত্র সে কিন্তু কদাচিৎও অন্যের কাছে বর্ণনা করে না।
৪। কারো ত্রুটি-অসঙ্গতি নিয়ে আয়না কিন্তু কারো সাথে ঝগড়া বা তর্কে লিপ্ত হয় না কিংবা উচ্চবাচ্য করে না। বরং, অত্যন্ত নিরবে ও মার্জিতভাবে সে তার প্রতি বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে যায় মাত্র।
৫। কারো ত্রুটি-অসঙ্গতি সংশোধনে আয়না কিন্তু কখনোই বল প্রয়োগ করে না। বরং, তা উপস্থাপন করেই সে ক্ষান্ত হয়।
এই চমৎকার আন্তঃসম্পর্কে আয়নার সামনের ব্যক্তিটিরও অতীব গুরুত্ববহ কতিপয় দায়িত্ব রয়েছে। যেমন:
১। ত্রুটি-অসঙ্গতি অনুসন্ধানের জন্য নিজেকে আয়নার সামনে উপস্থাপন করতে হয়।
২। ধরিয়ে দেওয়া ত্রুটি-অসঙ্গতি আন্তরিকভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকা জরুরি।
৩। দ্রুততা ও যথার্থতার সাথে ত্রুটি-অসঙ্গতিসমূহ সংশোধন করার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
৪। আয়নার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন।
৫। আয়নার যথাযথ সংরক্ষণ। কারণ, এটি হারিয়ে বা ভেঙ্গে গেলে কিংবা এর উপর দাগ পড়লে এটি সামনের ব্যক্তির জন্যও ক্ষতির কারণ।
১। আয়না হচ্ছে ত্রুটি-অসঙ্গতি ধরিয়ে দেওয়া আমাদের প্রিয় বন্ধু-স্বজন এবং সামনের ব্যক্তিটি হচ্ছেন যার ত্রুটি-অসঙ্গতি ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছেন তিনি।
২। আমাদের বিবেচনায় ধরা পড়া প্রিয় মানুষটির ত্রুটি ও অসঙ্গতির প্রতি আমরা যেন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
৩। কারো ত্রুটি-অসঙ্গতি যেন আমরা ঐকান্তিক পরিবেশে শুধু তাকেই বলি। তার অগোচরে বা পিছনে কখনোই এ বিষয়ে কোন কথা বলা উচিত নয়।
৪। একজনের কথা অন্যের কাছে যেন কখনো চালাচালি না করি।
৫। কারো ত্রুটি-অসঙ্গতি নিয়ে আমরা যেনবঝগড়া বা তর্কে লিপ্ত না হই। বরং, অত্যন্ত নিরবে ও মার্জিতভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
৬। কারো ত্রুটি-অসঙ্গতি সংশোধনে আমরা যেন কখনোই বল প্রয়োগ না করি। কারণ, জানানোটাই আমাদের কাজ, সংশোধনটা তাঁর ও স্রষ্টার ইচ্ছা।
৭। আপনার ত্রুটি-অসঙ্গতিগুলো আপনাকে জানানোর জন্য পরিবার-পরিজন ও কাছের মানুষদেরকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
৮। ধরিয়ে দেওয়া ত্রুটি-অসঙ্গতি আন্তরিকভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা গঠন জরুরি।
৯। দ্রুততা ও যথার্থতার সাথে ত্রুটি-অসঙ্গতিসমূহ সংশোধন করার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০। ত্রুটি-অসঙ্গতি ধরিয়ে দেওয়া মানুষটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন ও উৎসাহ প্রদান করা জরুরি।
১১। ত্রুটি-অসঙ্গতি ধরিয়ে দেওয়া মানুষদেরকে নিজের পরিমণ্ডলে ধরে রাখা, তাদের পরিচর্যা এবং একইভাবে তাদের সংশোধনে ভূমিকা রাখাও জরুরি। কারণ, তারা পাশে থাকলে এবং সত্য ও সততার পথে তাদের ধারাবাহিক মানোন্নয়ন ঘটলে আপনারও ধারাবাহিক আত্মোন্নয়ন সাধিত হবে।
আসুন, একে অপরের ‘আয়না’ হই।