সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২০ অপরাহ্ন
কালের খবর বিনোদন ডেস্ক :: বিচিত্র মানুষের জীবন। নানা চড়া্ই উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে রচিত হয় জীবনের প্রতিটি অধ্যায়। জীবনের ক্যানভাসে যেমন খচিত থাকে সফলতা তেমনি থাকে ব্যর্থতাও। থাকে কিছু আলোকময় ও অন্ধকার পৃষ্টা।
খুব স্বাভাবিকভাবেই অধিকাংশ মানুষ জীবনের অন্ধকার অধ্যায়গুলো লুকিয়ে রাখে আড়ালে আবডালে। সহজে মুখ খোলেন না এসব বিষয় নিয়ে। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছেন যারা এসব কথা অকপটে স্বীকার করেন। নিজের জীবনের অন্ধকার বা নেতিবাচক বিষয়ে কথা বলেছেন বলিউড অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, আমেরিকান মডেল অভিনেত্রী লক্ষ্মী, অভিনেতা নির্মাতা চার্লি চ্যাপলিন। তাদের জীবনের গোপন কিছু সরল উক্তি নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।
নাসিরুদ্দিন শাহ : সংস্কারাচ্ছন্ন ভারতীয় মানসিকতায় সোজাসাপটা কথা বলাটা কঠিন। মানুষের জীবনের যা নেতিবাচক তার প্রায় সবই থাকে গোপন। খুব কম মানুষই তার জীবনের নেতিবাচক দিক নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নাসিরুদ্দিন শাহ তার জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছেন। নিষিদ্ধপল্লী থেকে নেশা করা- কোন কিছুই গোপন করেননি তার আত্মজীবনীতে।
অ্যান্ড দেন ওয়ান ডে : মেমোরি শিরোনামের তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে গাঁজা, চরস খাওয়ার কথা। যৌনপাঠ নিতে চলে গিয়েছিলেন নিষিদ্ধ এলাকায়। এসব কথা খোলামেলা লিখেছেন নাসির।
জোর গলায় বলেছেন, ‘ওই বয়সে সেটাই স্বাভাবিক ছিল।’ বাদ দেননি মেয়ে হিবার অধ্যায়ও। মাত্র ২০ বছর বয়সে মানারা সিক্রিকে বিয়ে করেছিলেন নাসির। হঠকারিতা তো বটেই। কিন্তু ক্যারিয়ার-থিয়েটারের নেশায় মত্ত নাসির মানারার সঙ্গে বেশিদিন ঘর করেননি। বাইরের টান তার প্রবল ছিল। বলা যায়, ছোট্ট হিবাকে এক প্রকার পরিত্যাগ করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় খোঁজ নেননি মানারা আর মেয়ের।
অন্যদিকে নাসিরের জীবনে ততদিনে রত্না পাঠক এসে গিয়েছেন। এখন অবশ্য হিবার সঙ্গে নাসিরের যোগাযোগ পূর্ণমাত্রায়। আত্মজীবনীর প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে নাসির বলেছিলেন, ‘হিবার দায়িত্ব না নিয়ে তখন হয়তো ভুল করেছিলাম। কিন্তু আমারই বা কী বয়স ছিল!’
পদ্মলক্ষ্মী : মডেল অভিনেত্রী হিসেবে তাকে মানুষ যতটা না চিনে তার চেয়ে বেশি চিনে সালমান রুশদির স্ত্রী হিসেবে। পদ্মলক্ষ্মীর বায়োগ্রাফি ‘লাভ, লস অ্যান্ড হোয়াট উই এট’ তার প্রমাণ। মডেলিং দুনিয়ায় যতই চাকচিক্য প্রত্যক্ষ করুন, তার ছোটবেলাটা কেটেছে অন্ধকারেই। জন্মসূত্রে পদ্মলক্ষ্মী ভারতীয়। তামিল ব্রাক্ষ্মণ। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। ২০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি চিনতেনই না নিজের বাবাকে। নিউইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টে সত্বাবার বন্ধু দিনের পর দিন তাকে যৌন নিগ্রহ করেছে। এত কিছুর পরেও নিজের মতো করে ক্যারিয়ার গড়েন তিনি।
২৩ বছর বয়সে তিনি সালমান রুশদিকে বিয়ে করেছিলেন। রুশদির ঘরনি হওয়াটাই এক সময়ে পদ্মলক্ষ্মীর আসল পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো এ পরিচয় তিনি মেনেও নিতেন যদি রুশদির ভালোবাসা পেতেন।
তাদের বিচ্ছেদের পর রুশদি বলেছিলেন, ‘পদ্মলক্ষ্মী তার কাছে ‘ব্যাড ইনভেস্টমেন্ট’।’ যদিও এটা ছিল রুশদির চতুর্থ বিয়ে। পদ্মলক্ষ্মী লিখেছেন, প্রবাদপ্রতিম লেখক তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সহবাস করতেন। পদ্মলক্ষ্মী ছোট থেকেই এন্ডোমেট্রিওসিস’র সমস্যায় ভুগতেন। মেনস্ট্রুয়েশনের সময় পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হত। তখনও রুশদি তার সঙ্গে সহবাস করতে চাইতেন। যার ফলে পদ্মলক্ষ্মীকে একবার হাসপাতালেও যেতে হয়েছিল।
পদ্মলক্ষ্মীর বয়ানে, তার অসুস্থতা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা ছিল না রুশদির। তিনি নিজের চাহিদা মেটাতে পারলেই খুশি হতেন। তিন বছরের মধ্যে তাদের দাম্পত্য জীবনে ছেদ পড়ে। রুশদির পরের অধ্যায়ে পদ্মলক্ষ্মীর জীবনে একাধিক পুরুষ এসেছে। এ তালিকায় রিচার্ড গেয়ারেরও নাম শোনা যায়। আপাতত তিনি ব্যবসায়ী অ্যাডাম ডেলের সঙ্গে ঘর করছেন। তাদের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। এ বছর পদ্মলক্ষ্মীর আত্মজীবনী প্রকাশের পর নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠে। কিন্তু খুব ভালোভাই তা সামলেও নেন তিনি।
চার্লি চ্যাপলিন : চ্যাপলিনের মা হ্যানা গাইতেন ভদেভিলে। বাবা ছিলেন মদে তীব্র আসক্তি। চ্যাপলিনের জন্মের এক বছরের মধ্যে তাদের বিচ্ছেদ হয়। আত্মজীবনীতে চ্যাপলিন বলেছেন, ‘মদ খেলে বাবার মেজাজ সপ্তমে চড়ে থাকত। যার কারণেই মা ওর সঙ্গে থাকতে পারেননি।’
হ্যানার আগের পক্ষের ছেলে সিডনি। চ্যাপলিনের বড় ভাই। দুই সন্তানকে নিয়ে কোনো খোরপোশ ছাড়া কীভাবে দিন-আনি-দিন-খাই কাটিয়েছেন- সেই গল্পই রয়েছে ‘চার্লস চ্যাপলিন: মাই অটোবায়োগ্রাফি’র পাতায়। অভাবের কারণে মা’কে যৌনবৃত্তি করতে হয়েছে, সে কথাও বলেছেন চ্যাপলিন তার আত্মজীবনীতে।
অনেকে বলেন, সেই অভাবের মধ্যে পরিবার আগলানোর জন্য মা’কে এতকিছু সইতে দেখার একটা প্রভাব পড়েছিল চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রে। যে কারণে তার চলচ্চিত্রে প্রান্তিক লোকের আনাগোনা বেশি (তরুণী দেহজীবী কিংবা ভবঘুরে)। একে অনেকে সহজ অনুমান বলতেই পারেন। কিন্তু তার কমেডিতে ‘সাবঅল্টার্ন’এর ভূমিকা অস্বীকার করবেন না কেউই। এটা হয়তো সমাজের একেবারে নিচুতলায় যত্সামান্য রোজগারে যাপন করার অভিজ্ঞতা থেকেই এসেছে।
চ্যাপলিনের মা শেষে উন্মাদ হয়ে যান। তারপর বাবার কাছে চলে যেতে হয় দুই ভাইকে। সেখানেই বড় হয়ে ওঠার এক অন্য গল্প রচনা হতে থাকে। টাকার ‘মূল্য’ কী এবং কেন- সেটা জীবন দিয়ে বুঝেছিলেন চ্যাপলিন। তার নাকি বলার অভ্যেস ছিল- ‘ইউ নো, আই অ্যাম এ ভেরি ওয়েল্দি ম্যান!’ অর্থ-বিত্ত-প্রভাব হয়তো এক সময় হয়েছিল চ্যাপলিনের কিন্তু যে সম্পদের কথা তিনি বলেছেন, তা জীবনের কানাকড়ি ছাড়া আর কী-ই বা হতে পারে।