বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সাইনবোর্ডে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে সাধারন মানুষ ! লম্বা হচ্ছে লাশের মিছিল। নিত্যদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। নিহত হচ্ছে নানা বয়সের নানা পেশার মানুষ। এই ব্যস্ততম সাইনবোর্ডে একটি ফুটওভার ব্রীজ মানুষের বাচা মরার দাবী। ফুটওভার ব্রীজের অভাবে আর কত সাধারন মানুষের প্রাণ যাবে সাইনবোর্ডে ? । জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে এমনটিই জানতে চেয়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারী জনতা।
জানা গেছে, সাইনবোর্ডের সড়কটি নারায়ণগঞ্জের সাথে ঢাকা চট্টগ্রামের সংযোগ সড়ক। প্রতিদিন এ সড়কে লাখো মানুষ জীবনের তাগিদে চলাচল করে। স্কুল, কলেজ, ব্যবসা, চাকরিসহ হরেক কাজের যাতায়াতের জন্য মানুষ এ সংযোগ সড়কটি ব্যবহার করেন। এ সড়কের উভয় পাশে চার লেন করে আট লেনে গাড়ি চলাচল করে। এছাড়াও সড়কের উভয় পাশে যাত্রী উঠানামার জন্য আরো দুটি করে চারটি লেন রয়েছে। ফলে বিশাল এ মহাসড়কের ১২ টি লেনে যাত্রী পারাপারের জন্য নেই কোন ফুটওভার ব্রীজ। নেই জেব্রা ক্রসিং বা অন্য কোন ধরনের ব্যবস্থা। যার জন্য প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা নিহত হচ্ছে সাধারন মানুষ। প্রতিদিনই কেউ না কেউ যোগ হচ্ছে লাশের মিছিলে।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এ মিছিল অপ্রতিরোধ্য। প্রতিদিনই সংযোগ সড়কের কোথাও না কোথাও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও সড়কে ফুটওভার ব্রীজ না থাকাই সাইনবোর্ডে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত। দুর্ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রেও সেটাই লক্ষ্য করা গেছে।
তাছাড়া চালকদের বড় অংশই অদক্ষ, অপ্রশিক্ষিত, লাইসেন্সবিহীন, প্রতিযোগিতাপ্রবণ এবং ট্রাফিক আইন বেতোয়াক্কাকারী, সেটা বার বার পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা ও গবেষণায় উঠে এসেছে। এরপরও ফুটওভার ব্রীজ নির্মানে নেয়া হয়নি কোন ধরনের পদক্ষেপ। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও তাতে হতাহতের ঘটনা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এ সড়কে হতাহতের সব ঘটনা সবসময় সংবাদপত্রে উঠে আসে না।
তাই হতাহতের সঠিক সংখ্যাও অনেকেরই অজানা। পরিবার ও সমাজে এর প্রতিক্রিয়া অনেক সময়ই গুরুত্বের বাইরে থেকে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত পরিবারের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী কে বা কারা ? ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।
তাদের অবহেলা, অমনোযোগ ও দায়িত্বহীনতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা গুরুতর জাতীয় সমস্যা ও নাগরিক উদ্বেগের কারণে পরিণত হয়েছে। গাড়ি চালকদের বেশিরভাগ অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত, অনেকের লাইসেন্স নেই, অনেকের লাইসেন্স ভুয়া। এদের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেয়া বিপজ্জনক। অথচ মালিকদের একাংশ সেটাই করছে। লাইসেন্স দেয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ ছাড়া লাইসেন্স দেয়া হয়।
গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই চলছে অগনিত গাড়ি। তাহলে কি এই অনিয়ম, দুর্বৃত্তাচার, যথেচ্ছার, মৃত্যুর প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে ? সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো অনেক আগেই শনাক্তকৃত। কী করলে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব, তাও জানা গেছে। তারপরও কিছু হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সচেতন, তৎপর ও দায়িত্বশীল হলে সড়ক দুর্ঘটনার অভিশাপ থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে একেবারে মুক্ত করা সম্ভব না হলেও দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা অবশ্যই সম্ভব।
ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বলতে যা বুঝায়, তা প্রায় ভেঙে পড়েছে। ট্রাফিক পুলিশের একটি বড় অংশ দায়িত্বপালনের চেয়ে চাঁদাবাজিতে অধিকতর তৎপর। তারা শক্ত হলে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক বিধি লংঘন করা চালকদের পক্ষে কখনোই সম্ভব হতো না।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় সড়ক দূর্ঘটনায় মনোয়ারা বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ কভ্যার্ডভ্যানের (ঢাকা-মেট্রো-ট-২২-৪০৭৬) চালক সুমনকে (২২) আটক করেছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত মনোয়ারা বেগম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার উত্তর ফিরিজখাঁর এলাকার আবুল খায়েরের স্ত্রী।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম (২) ঘটনাস্থালে গিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি হাসপাতালে পাঠায়।
সাইনবোর্ড সড়কে দুর্ঘটনার বিষয়ে কয়েকজন পথচারি ও স্থানীয় গন্যমান্যসহ সাইনবোর্ড প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সংবাদিকদের সাথে কথা হয়। তারা হলেন ব্যবসায়ী মো : হাফিজ উদ্দিন মেম্বার, সাইনবোর্ড জনকল্যাণ উন্নয়ন কমিটির সাধারন সম্পাদক হাজী ইমান আলী, ফকিহুল উম্মাহ তাহফিজুল কোরআন মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হা. মাও. সাইফুল ইসলাম সাইফ, নিরাপদ সড়ক সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শাখার সভাপতি-এ আর জাহাংগীর আলম, সিনিয়র সাংবাদিক মো: এনামুল কবির, সাংবাদিক শাহ মামুনুর রহমান বাবুল, যুবনেতা মো: সরল, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো: বাচ্চু মিয়া, মো: সাইফুল, মো: কামাল হোসেন, মো: উমর ফারুক ও চা দোকানদার মো: লিটন বলেন, এ সড়কে প্রতিদিনই চলাচল করতে হয়। সড়ক পারাপার হওয়া যেন মৃত্যুর সাথে সাক্ষাত হওয়া। বেপরোয়া গতি নিয়ে গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যেই দৌড়ে রাস্তা পার হতে হয়। এ সড়কে একটি ফুটওভার ব্রীজ খুব জরুরী। আমরা আশা করি দ্রুত ফুটওভার ব্রীজ করে আমাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবে সরকার।
পথচারি ফাতেমা, আকলিমা ও আমেনা ও চা দোকানী রোকেয়া বেগম বলেন, রাস্তা পার হওয়া খুবই কঠিন কাজ। গাড়িগুলো এখানে অনেক জোরে চলাচল করে। রাস্তা পার হতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমাদের সমস্যা দেখার কেউ নেই।
এব্যপারে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে আপাতত সাইনবোর্ডে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের কোন পরিকল্পনা নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজাউল বারী বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে উঠে আসেনি। তবে আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি তোলা হবে। রেজুলেশনে পাশ হলে কাজের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে আমাদের পত্রিকা পেজে লাইক দিন