শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর : ঘনিয়ে আসছে ঈদ। আপনজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে দুয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে মানুষ। ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান পথ সদরঘাট নৌপথ। তাছাড়া উপকূল এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম সহজলভ্য পথ হচ্ছে লঞ্চ। তাই অনেক যাত্রী লঞ্চে করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যান। এ সুযোগে মেরামত ও রঙ করে নামানো হচ্ছে অনেক পুরনো লঞ্চ।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদকে কেন্দ্র করে লঞ্চ মালিক ও ম্যানেজারদের একটি অংশ বেশি লাভের আশায় পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ নামানোর পরিকল্পনা করছেন।
বুধবার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের চরকালিগঞ্জ এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ইতোমধ্যে ঈদের যাত্রী পরিবহনের জন্য কিছু লঞ্চ নামানা হয়েছে পানিতে। তাছাড়া কাজ শেষের দিকে অথবা ফিনিশিং এর জন্য রাখা হয়েছে কয়েকটি লঞ্চ। সেগুলোও নামানো হবে কয়েকদিনের মধ্যে। যদিও এবার ভরা বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে নৌপথে ঝুঁকি একটু বেশি। সব মিলিয়ে এ বছরও নৌপথে ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফার লোভে এসব না ভেবেই লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চই যাত্রী পারাপারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সদরঘাটের ডকইয়ার্ডগুলোতে লঞ্চের রঙ-কালি ও রি-পেয়ারিংয়ের কাজ শুরু হয় ঈদের দুই-তিন মাস আগ থেকেই। লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা আনফিট লঞ্চ হয়ে ওঠে চকচকে। দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীরাও না বুঝে রঙমাখা লঞ্চগুলোতে চলাচল করেন।
সাব্বির শিপিং এর একজন কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের চারটি লঞ্চ অকেজো পড়ে ছিল। তবে এবার ঈদে ইতোমধ্যে এমভি জামাল-১ এবং এমভি জামাল-৩ জাহাজের কাজ শেষ হয়েছে এবং সেগুলো পানিতে নামানো হয়েছে। তাছাড়া এখন কাজের শেষ পর্যায়ে রয়েছে এমভি জামাল-৪। তবে এমভি জামাল-৩ ঈদের আগে পানি তে নামানো সম্ভব হবে না।
এসব জাহাজের ফিটনেস ঠিক আছে কি না জানতে চাইলে সাব্বির শিপিং এর ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের লঞ্চগুলোর ফিটনেস ঠিক ছিল শুধু নতুন করে রঙ করা হয়েছে। তবে দেখা যায়, তাদের জাহাজগুলোতেই চলছে ঝালাইয়ের কাজ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু আধটু তো সমস্যা থাকবেই।
ডকইয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ইতোমধ্যে এমভি গোলাপ-৩, এমভি হিমু, এমভি কুইন অফ ফিরুজা, এমভি সাব্বির-৩সহ কয়েকটি লঞ্চ সব কাজ শেষ করে ঈদের যাত্রার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
তাছাড়া এমভি বঙ্গতরী, এমভি হাজী ওয়াহাব-১, এমভি মছিরণ খান, আব্দুল বারী, ঝান্ডা-২সহ কয়েকটি লঞ্চের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে ঈদের যাত্রায় সেগুলোও নামতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এদিকে এসব লঞ্চের ফিটনেস কিংবা অনুমোদনের কোনো বালাই না করেই চলবে বলে জানালেন ডকইয়ার্ডের একজন কর্মকতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এবার সড়ক আন্দোলনের পর কয়েকটি লঞ্চের ফিটনেস না থাকায় রঙ করে ফিটনেস বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এসব ধরার লোক নাই। আর লোক থাকলেও সব ম্যানেজ করে ফেলেন জাহাজের ম্যানেজাররা।
তিনি বলেন, যেসব জাহাজের রঙ নতুন আছে তাদের বেশির ভাগেরই ফিটনেস ঠিক নেই। আনফিট ঢাকতেই নতুন রঙ করা হয়েছে।
নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের ৩৫ হাজার ৫’শ নৌযানের মধ্যে বর্তমানে নিবন্ধিত নৌযান প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। এর মধ্যে যাত্রীবাহী নৌযান প্রায় আড়াই হাজার। শুধু বুড়িগঙ্গা নদীতেই রয়েছে সাড়ে চার হাজার বিভিন্ন ধরনের লঞ্চ। এরমধ্যে ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র সাত হাজার ১৮২টির। এসব লঞ্চের অর্ধেকেরই রেজিস্ট্রেশন নেই।
তাছাড়া সবচেয়ে বড় হতাশার বিষয় হচ্ছে বিশাল এ নৌযানগুলোতে লাইসেন্সধারী ও প্রশিক্ষিত চালকের সংখ্যা মাত্র ২০৭ জন। বাকি যেগুলো আছে সবাই অপ্রশিক্ষিত এবং অধিকাংশই ছিল লঞ্চের কেবিন বয় বা লঞ্চের কর্মচারী।
সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ এর ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবীর বলেন, এবার আমরা ফিটনেস এর বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। মন্ত্রণালয় থেকে জোর তাগিদ আছে। রঙ করে যাতে কেউ নিস্তার না পায়। এজন্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে আমরা বুয়েট বিশেষজ্ঞ আনার কথা ভাবছি। যাতে কেউ এসব থেকে পার পেয়ে না যায়।
তিনি জানান, এবারের ঈদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ২১৪টি লঞ্চ চলাচল করবে। তবে যাত্রীর চাপের উপর ভিত্তি করে এর সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে। গত ঈদের তুলনায় ৫টি লঞ্চ বেড়েছে। তাই অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কাউকে লঞ্চে ভ্রমণ করতে হবে না। তাছাড়া লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ নদীতে নামতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।