বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিনিধি :কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বোমা বিস্ফোরণে আহত কলেজ ছাত্র রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠির সম্পৃক্ততা থাকার আশঙ্কা নিয়েই তদন্ত শুরু করেছে জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বিস্ফোরণে রিয়াজুলের দুই হাত ও মুখের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। বর্তমানে তাকে পুলিশ প্রহরায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার দিনভর কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি একেএম মনজুরুল আলমের নেতৃত্বে একদল গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি শুক্রবার বেলা ২টা ৫ মিনিটে জানিয়েছে ডিবি ওসি একেএম মনজুরুল আলম।
বুধবার মধ্য রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার নাজিরা বাজার সংলগ্ন ঘোষনগর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে ওই কলেজ ছাত্র আহত হলেও বৃহস্পতিবার দিনভর অনুসন্ধান চালিয়েও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এর নিশ্চিত কোনো কুলকিনারা খুঁজে পায়নি। আহত ওই কলেজ ছাত্র কুমিল্লা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণীর প্রথম বর্ষের ছাত্র।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি, কুমিল্লা পুলিশ সুপারসহ, র্যাব, ডিবি, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ওই বাসার অপর বাসিন্দা সোহাগকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আহত ওই কলেজ ছাত্র কোন জঙ্গি গোষ্ঠির সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে পুলিশ ও গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে বোমা নিস্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌছে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের নাজিরা বাজার সংলগ্ন ঘোষনগর এলাকার হলি কেয়ার স্কুলের সঙ্গে একটি ৪তলা বাসার নিচ তলার একটি রুমে থাকতো রিয়াজুল ইসলাম (১৭) ও তার খালাত ভাই সোহাগ (১৪)। বাড়ির মালিক তাদের নানা হাজী আবদুল জলিল পরিবার নিয়ে থাকতো পাশের একটি রুমে।
গত বুধবার রাত আনুমানিক ২ টার দিকে রিয়াজুলের রুমে বিকট শব্দে একটি বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে রুমের থাই গ্লাসের জানালা ও স্টিলের দরজা ভেঙে যায়।
ওই বাসার ২য় তলার মাসুদ নামে এক ভাড়াটিয়া জানান, মধ্য রাতে বিকট শব্দে পুরো বিল্ডিং কেঁপে হয়ে উঠে। দরজা খুলে বাহিরে গিয়ে নিচতলায় ধোয়ায় আচ্ছন্ন দেখতে পাই। বিস্ফোরণে রিয়াজুলের রুমে থাকা কাপড়ে আগুন লেগে যায়। এসময় বাড়ির অন্যান্য ভাড়াটিয়া ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসে আগুন নিভিয়ে রুমে থাকা রিয়াজুল ও সোহাগকে উদ্ধার করে। বিস্ফোরণে সোহাগ বেশি আহত না হলেও রিয়াজুলের দু’হাত ও মুখের বেশ কিছু অংশ ঝলসে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে সকালে বুড়িচং থানা ওসি মনোজ কুমার দে সহ স্থানীয় দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। দিনভর পুলিশ ঘটনাস্থলটি ঘিরে রেখে বিস্ফোরনের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালায়।
সন্ধ্যায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ, কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো শাহ আবিদ হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিবির ওসি একেএম মঞ্জুর আলমসহ র্যাব, ডিবি, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক তদন্তে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, নিশ্চিত কোনো কিছু মন্তব্য করার মতো এখনো সময় আসেনি।
তিনি বলেন, আহত কলেজ ছাত্র রিয়াজুলকে এখনো গ্রেফতার কিংবা আটক করা হয়নি, তাকে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা এবং একই রুমের বাসিন্দা সোহাগকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আহত রিয়াজুল কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর হয়তো বিস্ফোরণের বিষয়ে আরো নিশ্চিত কিছু তথ্য জানা যাবে বলেও পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা ডিবি ওসি একেএম মনজুরুল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, বেশ কিছু আলামত আমরা সংগ্রহ করেছি। কিছু ক্লুও বের করার চেষ্টা করছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে কিছু বলা যাবে না। আশা করি শিগগিরই আমরা কিছু জানাতে চেষ্টা করব।
কালের খবর -৯/৩/১৮