সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নবীনগরে চাঞ্চল্যকর ভাই হত্যা মামলার আসামী ১২ বছর পর এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার। কালের খবর অর্থ পাচার রোধ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রকাঠামো বির্নিমানে দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যাপারে সিদ্বান্ত জরুরী। কালের খবর রামগড় স্থলবন্দর পরিদর্শনে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। কালের খবর ময়নামতি উপজেলা’ বাস্তবায়নে লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত। কালের খবর বিজয় মেলা দে‌খে বা‌ড়ি ফেরা হ‌লো না কলেজ ছা‌ত্র সাহ্লাপ্রু মারমা। কালের খবর মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ভুমিকা রাখবে বাঁশরী ওয়াদুদ ফুটবল টুর্নামেন্ট : ওয়াদুদ ভূইয়া। কালের খবর গুইমারায় অস্ত্রসহ দুই সন্ত্রাসীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। কালের খবর মাকে ৭ বছর পর পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন তারেক রহমান। কালের খবর জমি দখলে বেপরোয়া রুহুল আমিন হাওলাদার। কালের খবর মাটিরাঙায় সেনা অভিযানে ১৪ লাখ টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ। কালের খবর
অর্থ পাচার রোধ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রকাঠামো বির্নিমানে দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যাপারে সিদ্বান্ত জরুরী। কালের খবর

অর্থ পাচার রোধ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রকাঠামো বির্নিমানে দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যাপারে সিদ্বান্ত জরুরী। কালের খবর

 

।। মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন, কালের খবর ।। 

গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। দেশকে ‘উন্নয়নে বিশ্বের রোল মডেল’ হিসেবে দেখানোর যে বয়ান ছিল, তা যে অনেকটাই ফাঁপা ছিল, যতদিন যাচ্ছে সেটা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে একদিকে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, অন্যদিকে চাকরির যথেষ্ঠ সুযোগ নেই। দেড় দশক ধরে চলা অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতিকেই এখন ভঙ্গুর অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। এই অর্থ পাচার অনেকটা অর্থনীতির রক্তক্ষরণের মতো। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা বেশ দুরূহ একটি কাজ। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে আর্থিক খাত থেকে পাচার হওয়া অর্থ চিহ্নিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে, উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লুটপাটের শিকার ব্যাংকগুলোয় গভীর অনুসন্ধান চালানোর। তবে ২০২৫ সালেই এ ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে এমন নিশ্চয়তা নেই।
এই অর্থ পাচারসহ দেশের অর্থনীতির এই দূরাবস্থার ব্যাকগ্রাউন্ড খুজতে গেলে এর পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সামনে আসতেছে তা হলো দেশের প্রভাবশালি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্বৈত নাগরীকত্ব।যে কোন দেশের দুর্বৃত্তরা দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে যে অর্থ বা সম্পদ অর্জন করে তারা তাদের সেই অর্থ বা সম্পদ নিজের বা পরিবারের জিম্মার রাখতে চায় এবং নিরাপদ বোধ করে, সেই ক্ষেত্রে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের দ্বৈত নাগরিকত্ব অর্থ পাচারে অনেক বেশি সহায়ক।
বর্তমানে বাংলাদেশীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার সুযোগ আছে বিশ্বের ১০১টি দেশে। দক্ষিণ এশিয়ায় ৮টি দেশের মধ্যে কেবল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে দ্বৈত নাগরিকের স্বীকৃতি দেখা যায়। গ্লোবাল সিটিজেন সলিউশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও আফগানিস্তানে দ্বৈত নাগরিকত্বের ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, পোল্যান্ডসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ একই নীতি অনুসরণ করে। এসব দেশের নাগরিকদের অন্য কোনো দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে বিশেষ কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এ সুযোগ রয়েছে। সাধারণত বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি নিরাপত্তা ইস্যুতেও অনেকে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে থাকেন। তবে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে সম্পত্তি স্থানান্তর, অর্থ পাচার ও গন্তব্য দেশগুলোয় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশী বিত্তশালী ও প্রভাবশালীদের বড় একটি অংশ। দ্বৈত নাগরিকত্ব বলতে দুটো দেশের নাগরিকত্ব একই সঙ্গে থাকাকে বোঝায়। অর্থাৎ দ্বৈত নাগরিকত্বের মাধ্যমে এক সঙ্গে দুটো পাসপোর্ট রাখার সুযোগ রয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বৈত নাগরিকত্বে ভালো-মন্দ দুই ধরনের সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ব্যাপারগুলোয়ই প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে বেশি। আর এসব হচ্ছে মূলত দেশে সুশাসন ও জবাবদিহিতা না থাকায়। বর্তমানে এ দ্বৈত নাগরিকত্বই সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী দেশ গঠনের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেয়া দেশের তালিকা বাংলাদেশ দীর্ঘ করলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের নাগরিকত্ব আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।বরং ভারতের কোনো নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার ভারতের নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল-আফগানিস্তানের মতো দেশেও দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রয়েছে। প্রচুর বাংলাদেশী গত দেড় দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে অর্থ পাচার, বিদেশে স্থায়ী নিবাস, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ বহু দেশে অর্থ ও সম্পদ সরিয়ে নিয়েছেন তারা।
অনেক দিন ধরে বিদেশী বাংলাদেশীদের অস্বাভাবিকভাবে সম্পদ বৃদ্ধি এমনকি বিলিয়ন ডলারের সম্পদ গড়ে তোলার ঘটনাও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসছে।বিশেষ করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বেশকিছু প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিলব্ধ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে।জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ নামে একটি বিশেষ আইন পাস করা হয় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। বিশেষ এই আইনের সুবিধা ভোগ করতেন শেখ হাসিনা, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও তার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়া বাকিরা সবাই অন্য দেশের নাগরিক ছিলেন।দুদকের তথ্য অনুযায়ী, বিগত সরকারের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও এমপিসহ ২৪ আওয়ামী লীগ নেতার দ্বৈত নাগরিকত্ব বা বিদেশে স্থায়ী নিবাসী হিসেবে অনুমতি গ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বড় করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বেলজিয়ামের ‘রেসিডেন্ট কার্ড’ রয়েছে।এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সাবেক পাঁচ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মো. মাহবুব আলীর যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে।আহমদ কায়কাউস বিগত সরকারের প্রশাসনের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা। প্রথমে জ্বালানি সচিব ও পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন।দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে তাদের প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। অবসরের পর খবর চাউর হয়েছিল তার কানাডায় বাড়ি আছে। তিনি সে দেশের নাগরিকও ছিলেন।পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ তুরস্কের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে স্পেনেও ‘স্থায়ী নিবাসী’ হওয়ার সুবিধা নিয়েছেন তিনি। সাবেক সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা কবির বিন আনোয়ার যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগে আবেদন করতে হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নাগরিকত্ব আইন, বিধি ও পরিপত্র অনুসরণে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদপত্র ইস্যু বা আবেদন বাতিল করা হয়। তবে বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান অনুযায়ী, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই। আবার সংবিধানের ৬৬তম অনুচ্ছেদে দ্বৈত নাগরিকদের মন্ত্রী বা এমপি হওয়ার কোনো সুযোগ রহিত করা হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেকে দ্বৈত নাগরিক থাকাকালে মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে এর সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।২০২১ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিসেব অনুযায়ী, দ্বৈত নাগরিকের সংখ্যা কমবেশী ১৪ হাজার। তবে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ এখন ও চলছে। দেশের বড় বড় উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, অলিগার্কদের বেশিরভাগই হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে অন্য দেশের নাগরিক হয়েছেন অথবা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এমনকি বিগত সরকারের আমলে সামরিকবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাও দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন।পরবর্তীতে তাদের অনেককে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয়েছে, অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি ও ভালো রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে না ওঠার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করছে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা। শক্তিশালী দেশ গঠনের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে এটি। আবার অনেকে মনে করেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধার ফলে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া হয়। আবার কেউ কেউ বলছেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা দেওয়া হলে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হওয়ার সুবিধা বাড়বে। তবে এখানে মূলত নাগরিকত্বের ধারণাকে আমলে আনতে হবে। নাগরিকত্ব ধারণাটির সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি জড়িয়ে আছে। একজন নাগরিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে বাধ্য। আবার রাষ্ট্রকেও তার নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তবে রাষ্ট্র যদি দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়, তাহলে তার পেছনে একটি পরিকল্পনা থাকে। যদিও বাংলাদেশিদের এতগুলো দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ কেন দেওয়া হলো তা নিশ্চিত নয়।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা বলছেন, দেশের বাইরে এক কোটির বেশি বাংলাদেশী বসবাস করছেন। তাদের বড় একটি অংশ ইউরোপ বা আমেরিকা মহাদেশের উন্নত দেশগুলোয় বসবাস করছেন। বিদেশে বসবাসের কারণে তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই আশঙ্কা থাকে কোনো এক সময় তারা হয়তো দেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাবেন। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা থাকলে হয়তো তারা বা তাদের ছেলে-মেয়েরা দেশে ফিরে বসবাস বা ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। এমনকি যারা বিদেশে ব্যবসা করছেন, তারা দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ টেনে আনতে পারবেন। কিন্তু এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশীদের বড় একটি অংশ এখন বিদেশে সম্পদ স্থানান্তর করেছেন। গত দেড় দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) এর তথ্যমতে, দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা। দ্বৈত নাগরিকত্বের নেতিবাচক দিক। দুর্নীতি বা অসদুপায়ে অর্জিত সম্পদ বিক্রি করে অন্য দেশে যারা ব্যবসা গড়ছেন, তারা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে সুবিধামতো বাংলাদেশের নাগরিকত্বও ত্যাগ করছেন।
ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির তার এক গবেষনা প্রবন্ধে বলেন, ‘কোনো রাষ্ট্র সুসংহতভাবে গড়তে হলে সেদেশের নাগরিকত্বের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা দরকার। যখন একজন ব্যক্তি তার বশ্যতা অন্য কোথাও দিয়ে থাকে, তখন তাকে কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেয়া উচিত নয়। তাদের কোথায় সুবিধা পাওয়া উচিত, আর কোথায় উচিত না; সেটিও সুনির্দিষ্ট করা উচিত রাষ্ট্রের। কিন্তু নীতি প্রণয়ন এবং মূল কতগুলো কর্মকাণ্ডে তাদের জায়গা দেয়া উচিত না। সব থেকে বড় কথা তাদের আলাদাভাবে নিবন্ধীকরণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এগুলো না হলে রাষ্ট্র গঠন কোনোদিনই ঠিক হবে না। ‘‌দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের এবং নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে অনেক অস্পষ্টতা আছে। অন্য দেশের নাগরিকত্ব নেয়া কোনো ব্যক্তি এ দেশে ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ার পর নিজেদের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে দেন। এখানে আইনের প্রশ্রয় এবং এদেশের অনিয়মের কারণে অপরাধীদের দণ্ড প্রাপ্তির বিষয়টা সহজ থাকে না। দ্বৈত নাগরিকত্বের ভালো দিক আছে। তবে এটিকে খারাপভাবে ব্যবহারের প্রবণতা একটা গ্রুপের বেশি রয়েছে। দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যাপারে নিন্মাক্ত বিষয় গুলো ভেবে দেখা জরুরি।

ক) আইন করে দ্বৈত নাগরিকত্ব দিয়ে যেসব সুবিধা একশ্রেণির মানুষকে আমরা দিচ্ছি, তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে রাজনীতিতে বন্ধ করা জরুরি। এক্ষেত্রে প্রথমে নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে নির্বাচন কমিশনের কোনও সদস্য যেন অন্য কোনও দেশের সংবিধান ও সরকারের প্রতি আনুগত্যশীল না হন। তাদের সবাইকে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করা প্রয়োজন যে তারা অন্য কোনও দেশের নাগরিক নন।
খ) নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে ভিনদেশের নাগরিক যেন আগত সংসদ নির্বাচনে ভোটার (এবং পদপ্রার্থী) হিসেবে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার বলয়ে এবং সংবিধান ও নীতিনির্ধারণে ভিনদেশের নাগরিকদের নিয়ে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
গ) সরকারে কর্মরত (সামরিক ও বেসামরিক) সকল (দ্বৈত নাগরিক সহ) ভিনদেশের নাগরিকদের ওপর তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের সঙ্গে প্রথম ধাপে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য কনসালটেন্ট হিসাবে চুক্তি করা যেতে পারে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে উপর থেকে-নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। তবে, তাদের মাঝে কেউ বাইরের নাগরিকত্ব আইনিভাবে পরিত্যাগ করলে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
ঘ) প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভিনদেশের নাগরিকত্ব নেয়া সকল ব্যক্তিকে নিবন্ধিত করা প্রয়োজন। ইদানীংকার ই-পাসপোর্টের ফর্মে শুধু একটি দ্বৈত নাগরিক লেখা ঘরে টিকচিহ্ন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, যা অপর্যাপ্ত।
ঙ) অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উন্মুক্ত পরিবেশে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের উপযোগী নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
চ) দ্বৈত নাগরিকরা এদেশে বিনিয়োগ করলেও তাদের বিনিয়োগ নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়া আছে, তার মধ্যে অনেকগুলোরই আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, আফ্রিকার নাইজেরিয়া, বুরুন্ডি, এশিয়ার সিরিয়া ইত্যাদি এসব দেশের অন্তর্ভুক্ত।তাই দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যাপারে এখনই যুগোপযোগী সঠিক সিদ্বান্ত নিতে না পারলে অর্থ পাচার রোধ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব হবে।তাই এ ব্যাপারে সিদ্বান্ত জরুরি।

লেখক : অর্থনৈতিক বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও সদস্য, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
Email : msislam.sumon@gmail.com

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com