সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি, কালের খবর :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিটিসিএল টেলিকম অফিসের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ওই অফিসের ১৪ শতাংশ জমির মধ্যে ৬ শতাংশ জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানকোঠা। দখলদাররা তালা মেরে রেখেছে অফিসের ব্যাটারি রুম, ট্রাঙ্ক রুম ও লাইনম্যানদের বিশ্রামের রুমে। বর্তমানে অফিসের একটি কক্ষে বসেই কর্মকর্তারা অভিযোগ, অনুসন্ধান ও নতুন সংযোগের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। দখলকারীরা ২০১৫ সালে অক্টোবর মাসে রাতের আঁধারে জমি দখল করে আদালতে একটি মামলা ঠুকে দেয়। আর ওই মামলায় বিবাদী করা হয় সহকারী প্রকৌশল শ্রীমঙ্গল, বিভাগীয় প্রকৌশলী মৌলভীবাজার ও জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজারকে। সহকারী প্রকৌশল, বিভাগীয় প্রকৌশলী মামলার কোনো জবাব না দেয়ায় বিবাদী পক্ষের অনুপস্থিতিতে ২০১৬ সালের ১লা আগস্ট মামলাটি একতরফাভাবে দখলদারের পক্ষে রায় হয়। আদালতের রায়ের পর পরই তড়িঘড়ি করে আগের বানানো ঘর ভেঙে পাকা দোকানকোঠা তৈরি করে তাদের দখলদারিত্ব আরো মজবুত করে নেয়। এদিকে পাকা ঘর নির্মাণের সপ্তাহ খানেক আগেই বিভাগীয় প্রকৌশলী অবসরে যায়। তাই এদিনেও জনমনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। দখলদারের সঙ্গে স্থানীয় বা বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা এ বিষয়টি এখন সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে তৎকালীন বিভাগীয় প্রকৌশলী ইশোতোষ চক্রবর্তী (বর্তমানে অবসরে) বলেন, দখলদারদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের উকিল সাহেব আমাকে ভুল তথ্য দেয়ার কারণে মামলায় বাদী পক্ষে একতরফা ইনজাংশন পেয়েছে। আমাদের প্যানেল উকিল আমাকে বলেছিলেন মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে। সর্বশেষ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারের নির্দেশে বর্তমান বিভাগীয় প্রকৌশলী গত বছরের নভেম্বর মাসে দখলদারদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তান আমল থেকেই উপজেলার রূপসপুর মৌজার জেএলনং ৬৭, ১নং খতিয়ান ও ১নং দাগের ওই ১৪ শতক জমিতে টেলিফোন অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসেছে। ১৯৮১ সালে সিলেট ডিসি অফিস থেকে ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যা গত বছরের ১৪ই এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট (পৃষ্ঠা নং ২৬৩) আকারে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে ২৭৪৫নং খতিয়ানে উক্ত ভূমির মালিকানা কলামে শ্রীমঙ্গল টেলিফোন একচেঞ্জ বিভাগীয় প্রকৌশলী বিটিসিএল মৌলভীবাজার নামে রেকর্ড বিদ্যমান রয়েছে। তবে ওই জমি ২০০১ সালের সরকারের অর্পিত সম্পতি ‘খ’ তফসিল ভুক্ত হয়ে গেলে দখলদাররা ১৯৬৩ সালের একটি দলিল মূলে ২০১৪ সালে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে মৃত কানাই লাল ব্যানার্জীর ছেলে নরেন্দ্র ব্যানার্জীর নামে জমি নামজারি করে দেন। আর এই নামজারির বলে নরেন্দ্র ব্যানার্জীর কাছ থেকে দখলদাররা জমি তাদের নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়। এদের মধ্যে শহরের কালীঘাট সড়কের বাসিন্দা আমির হোসেনের নামে ৬ শতক, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির নামে আড়াই শতক ও আব্বাস আলীর নামে রয়েছে ২ শতক জমি। যদিও পরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের নির্দেশে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা নরেন্দ্র ব্যানার্জীর নামে দেয়া আগের নামজারিটি বাতিল করে টেলিফোন অফিসের নামে করে দেন। এই টেলিকম অফিসে ৩৮ বছর অপারেটর হিসেবে চাকরি করে বর্তমানে অবসরে থাকা মো. শামছুল হক বলেন, এই টেলিফোন একচেঞ্জটি ১৯৬৫ সাল থেকেই এখানে আছে। এই জমিটি ছিল এনিমি প্রপার্টি। সরকার একোয়ার করে এ জমি কিনে নেয়। এখন যে দলিল এগুলো বোগাস। দুই নম্বর। ভুয়া। বর্তমানে এই জমির দখলদার আমির হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রকৃত মালিকের কাছ থেকেই জমি কিনেছি। আদালত আমাদের পক্ষে যায় দিয়েছেন। এখন যদি বিটিসিএল আপিল করে এই রায় স্থগিত করে ফেলে তাহলে আমরা উচ্চ আদলতে যাব।’ সহকারী প্রকৌশলী মো. আরব আলী বলেন, জমি রক্ষায় আমার চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। বিষয়টি আমি প্রথম থেকে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বর্তমানে সন্দীপ উপজেলার নিবাহী কর্মকর্তা মো. নূরুল হুদা বলেন, প্রথম নামজারিটি ভুল ছিল কি না এটা পরের বিষয়। পরে নামজারিটি আইন অনুযায়ীই বাতিল করা হয়েছে। একটি নামজারির আদেশ যদি এসি ল্যান্ড মনে করে যে এটা প্রপার হয় নাই, তা হলে সে নিজেই রিভিউ করতে পারে। বর্তমান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশেকুল হক বলেন, দখলদাররা আদালত থেকে একটি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এসেছে। তাই এখন বিটিসিএল যদি ওই আদেশ স্টে বা স্থগিত করাতে পারে তাহলে আমরা অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে দেবো।
কালের খবর – /২৬/২/১৮