শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি, কালের খবর :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী জাকির হোসেন সাদেক-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে উপজেলা-২ শাখা এক স্মারক থেকে জানা যায়, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী জাকির হোসেন সাদেক এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ,অর্ধ শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পাদন না করে সরকারী অর্থ লুন্ঠনকারী এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে তার পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন করা হয়।
স্মারক নং- ৪৬.০০.০০০০.০৪৫.২৭.১৯৭.২৩-৮২৫-এর সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলার বগডহর গ্রামের মাওলানা মো: মেহেদী হাসান এর আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তের জন্য এ আদেশ জারি করা হয়।
তার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের ২১ ধারা লংঘন পূর্বক নিজ প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসমাম
ট্রেডার্সের নামে টেন্ডারে অংশগ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজ বরাদ্দকরণ,গ্রিন ভিলেজ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ,অর্ধ শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পাদন না করে সরকারী অর্থ লুণ্ঠনকারী নবীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী জাকির হোসেন সাদেককে পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন করা হয়।
মো: মেহেদী হাসান-এর আবেদন থেকে আরো জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী জাকির হোসেন সাদেক ২০১১ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের ২১ ধারা লংঘন পূর্বক নিজ প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসমাম ট্রেডার্সের নামে নিজ উপজেলায় অনবরত টেন্ডারে অংশগ্রহণ করছেন এবং ক্ষমতার ব্যবহার করে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ বরাদ্দ নিয়ে যাচ্ছেন। যা উপজেলা পরিষদ আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এমনকি উপজেলা পরিষদের সেলাই মেশিন সরবরাহের লাভজনক কাজটি নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে ভাগিয়ে নিয়েছিলেন।নবীনগর উপজেলার গুচ্ছগ্রামে গ্রীন ভিলেজ প্রকল্পে অতি নিম্নমানের কাজ করে অর্ধ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছেন অর্থলোভী সাদেক। তার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্মিত ৬০ টি ঘরই এখন সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ও মানুষের বসবাসের অনুপযোগী।যে কোনোও মুহূর্তে ঘরগুলি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতে পারে। বিভিন্ন সময় এই বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও
রহস্যজনক কারনে স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে।অতি সম্প্রতি গুচ্ছ গ্রাম সংলগ্ন বুড়ি নদী ও ফসলি জমি থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁধা উপেক্ষা করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার বালি অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মুরাদনগরের গাঙ্গেরকুট গ্রামে বিক্রয় করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান
আদালত ড্রেজার জব্দ করে চালকদের গ্রেফতারপূর্বক আদালতে প্রেরণ করলেও মূল হোতা সন্ত্রাসী ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাংগরা বাজারের রাস্তার দুই পাশে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের জন্য স.ও.জ হতে চিঠি ইস্যু করা হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি স.ও.জ এর কিছু অবৈধ কর্মকর্তার সহযোগিতায় এই চিঠি গায়েব করে । অবৈধ দোকান মালিকদের উচ্ছেদ করবে না এই শর্তে তাদের নিকট থেকে প্রায় দুই কোটি টাকার চাঁদা সংগ্রহ করে।
সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত টি.আর কাবিখার সহ জেলা পরিষদের বহু প্রকল্পের টাকা নাম মাত্র কাজ করে ক্ষেত্র বিশেষে কাজ না করেই ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক আত্মসাৎ করেছেন।
বিশেষ করে লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের টি আর, কাবিখা ও পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের ৮০ ভাগ অর্থই আত্মসাৎ করেছেন এই অভিযুক্ত ব্যক্তি।
মাদক সেবন ও বিক্রয় এবং বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা গ্রহণ তার অবৈধ উপার্জনের অন্যতম উৎস।
এই ঘৃণিত ও সমাজদ্রোহী ব্যক্তি কর্তৃক নানা অপকর্মের তথ্য শুনলে যে কেউই আঁতকে উঠবে! বাশারূক গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব দ্বীন ইসলামের উপর ন্যাক্কারজনক ভাবে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে গুরুতর আহত করেছে। পরবর্তীতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। একই গ্রামের সেনা সদস্যের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে এই মানুষরূপী সমাজদ্রোহী।
নবীনগর উপজেলার বানিয়াচং বাজারে স্বর্ণের দোকানের ডাকাতি মামলার প্রধান আসামি এই কুখ্যাত সাদেক। গরু চুরি মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস হয়েছিল তার। আপন ভাই ও চাচাও তার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পায়নি। তাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে তার ভাই ও চাচাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছে। এলাকায় দফায় দফায় মিটিং করেও তার অবৈধ ক্ষমতাও সন্ত্রাসের কালো হস্তের কারণে নিজ সম্পত্তিতে দখলে যেতে পারছে না। নিজ উপজেলায় তার প্রতিষ্ঠান ইসমাম ট্রেডার্সের নামে প্রাইমারি স্কুলের পুরাতন ভবন ক্রয়, গবাদি পশুর প্রকল্প অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভাগিয়ে নিয়েছে।পল্লী বিদ্যুতের কাজসহ বিভিন্ন সরকারি ডিপার্টমেন্টে অবৈধ প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয়েছে তার প্রতিষ্ঠান ইসমাম ট্রেডার্স। অর্থাৎ ২০১১ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের ২১
ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে বারবার অথচ প্রশাসন ও জেলা পরিষদ কোন ব্যবস্থা নেয়নি তার বিরুদ্ধে।উপজেলা সদরে তার বসবাসের বাসাটিও অবৈধভাবে দখলকৃত।উপজেলা পরিষদের তার অফিস কক্ষটি দিনের বেলায় তদবির বাণিজ্য ও রাতের বেলায় মাদকের আস্তানা হিসেবে খ্যাত।