সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন
আব্দুল হামিদ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি, কালের খবর ॥ মৌলভীবাজারের কুসুমবাগ এলাকার খানদানী রেস্টুরেন্টের কিশোর শ্রমিক তানিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন।
মঙ্গলবার ২৭ জুন বিকেলে শহরের চৌমহনাস্থ কার্যালয় হতে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে কোর্ট রোড, চৌমুহনা, কুসুমবাগ এলাকা প্রদক্ষিণ করে এসআর প্লাজার সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন কিশোর তানিম ৩ মাসে আগে শহরের খানদানী রেষ্টুরেন্টে কাজ নেয় পরিবারের অভাব অনটনের একটু সাহায্য করার আশায়। আর সেই তানিমকে মির্মমভাবে পিটিয়ে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করা হয়।
শনিবার ২৪ জুন তানিমকে লাঠি দিয়ে মির্মমভাবে অত্যাচার করার পর মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নামকাওয়াস্তে চিকিৎসা দিয়ে তাকে হোটেলে এনে তালাবদ্ধ করে আটকিয়ে রাখা হয়।
এমন কি তার পরিবারের সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না। এরপর তার অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হলে রবিবার দুপুরের দিকে তার মৃত্যু হয়। ঈদের ঠিক আগ মুহুর্তে তানিমকে হারিয়ে বাবা মাসহ পরিবারের সদস্যরা পাগল প্রায়।
এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার এবং আরও কয়েকজনের নাম গণমাধ্যমে আসলেও মালিকপক্ষ এখনো আড়ালে। এমনকি ঘটনার পর থেকে মালিকপক্ষ রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে আড়ালে চলে গেছেন।
নেতৃবৃন্দরা বলেন, এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় মালিকপক্ষ কোনভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। কারণে প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব মালিকপক্ষের।
তাছাড়া বাংলাদেশ শ্রমআইনের ৪১ ধারায় দৈনিক ৫ ঘন্টার অধিক এবং সন্ধ্যা ৭ টা থেকে সকাল ৭ টায় পর্যন্ত কিশোর শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো নিধিদ্ধ হলেও খানদানী রেস্টুরেন্ট মালিকপক্ষ তা লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। এমন কি উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শ্রমিকই শিশু-কিশোর।
নেতৃবৃন্দ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের দায়হীনতাও কারণেও তানিমের মৃত্যু ত্বরাণ্বিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
মুমূর্ষ তানিমকে সদর হাসপাতালে ভর্ত্তি করে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করা হলে হয়তো এমন ফুটফুটে কিশোরকে অকালে প্রাণ হারাতে হতো না।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্ষধার জ্বালায় কাজ করতে গিয়ে আর কত শ্রমিককে এভাবে অকালে প্রাণ দিতে হবে? কয়েক বছর আগে ঢাকার ঘরোয়া রেস্টুরেন্টের কিশোর শ্রমিক রিয়াদকে গুলি করে হত্যা করা হয়, গতমাসে শ্রীমঙ্গলের পাঁচ ভাই হোটেলের কিশোর শ্রমিক রায়হানকে (১৭) নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।
এমন কি তামিম হত্যার দিনেই গত রোববার শ্রমিকদের বেতন ভাতার দাবি নিয়ে কথা বলার কারণে টঙ্গীর গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম শহীদকে মালিকপক্ষে সন্ত্রাসীরা মির্মমভাবে খুন করে।
সমাবেশে থেকে বক্তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মালিকপক্ষ, মৌলভবাজার সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডে যাদের নাম এসেছে তাদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দোষীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি ও তানিমের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ প্রদান করার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সকল শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।