সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৮ অপরাহ্ন
রাজধানীর ডেমরায় সিটি টোলের নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সহযোগী অঙ্গ সংগঠন ও এমপির (ঢাকা-৫) পরিচয়ে অভ্যন্তরীণ সড়ক ও প্রধান সড়কে চলছে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি। এ কাজে পুলিশের মদদ আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ডেমরা-রামপুরা ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে সিটি টোলের নামে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি হয়। এতে প্রতিনিয়ত সড়কে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এখানে অবৈধভাবে চলাচলকারী লেগুনা, সিএনজি, যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, আটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন থেকে মাসিক ও দৈনিক হারে চাঁদা আদায় করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ডেমরা-রামপুরা সড়কের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় রাসেল পাম্প সংলগ্নে সিটি টোলের নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। ওই এলাকার হাজি হোসেন প্লাজার সামনেও একইভাবে চলছে সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি।
অভিযোগ রয়েছে, ডেমরা-রামপুরা ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে ছোট পিকআপ থেকে ৩০ টাকা, যাত্রীবাহী বাস থেকে ৬০ টাকা, বড় গাড়ি থেকে ৬০ টাকা, সিএনজি থেকে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রাতে ও দিনে বড় পণ্যবাহী ট্রাক-লরি ও যানবাহন থেকে ২০০ থেকে ৮০০ পর্যন্ত টাকা নেওয়া হয়। এই টাকার একটা অংশ থানা পুলিশ পায়। স্টাফ কোয়ার্টার সিএনজি স্ট্যান্ড থেকেও ২০০ টাকা করে দিতে হয় থানা পুলিশকে। ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা দিতে হয় আলাদা করে। তাছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা যাত্রীবাহী বাস থেকে দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা তুলে পুলিশকে ম্যানেজ করে। ডেমরা টু চনপাড়া চলাচলকারী সিএনজি থেকে ৫০ টাকা ও নন্দিপাড়া টু স্টাফ কোয়ার্টার চলাচলকারী সিএনজি থেকে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। আর ইজিবাইক নামানো বাবদ ৫ থেকে ১০ হাজার রুটভেদে দিতে হয় প্রভাবশালীদের। আর প্রতি মাসে থানার জন্য প্রতিটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মিশুক বাবদ ৫০০ টাকা দিতে হয়। পণ্যবাহী লরিচালক মিনহাজুল আবেদীন বলেন, আমরা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে রাতে স্টাফ কোয়ার্টার দিয়ে ডেমরা-রামপুরা সড়কে ঢুকলেই ২০০ থেকে ৮০০ টাকা জোর করে রেখে দেয় চাঁদাবাজরা। বড় বড় কাঠের লরি বা ট্রাক এলে টাকা দিতেই হয়। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে জানতে ডেমরায় সিটি টোলের সাব-ইজারাদার শরিফ আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, (মোবাইল ফোনে) তিন চাকাসদৃশ যে কোনো যানবাহন থেকে ১০ টাকা আদায় করার অনুমতি রয়েছে। একই সঙ্গে ছোট সব ধরনের যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাস থেকেও টোল আদায়ের অনুমতি রয়েছে। তবে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান, লরি ও ট্রাক থেকে কোনোভাবেই সিটি টোল আদায় করা যাবে না। লাইনম্যানরা যদি এ কাজ করে তাহলে তাদের নিষেধ করা হবে। তাছাড়া বড় যানবাহন থেকে টোল আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। জানতে চাইলে ডিএসসিসির ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমার ওয়ার্ড এলাকায় এভাবে যানজট সৃষ্টি করে সিটি টোলের নামে বড় বড় যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি দুঃখজনক। তারা আমাদের কথা শোনে না। বলতে গেলে বৈধতার কথা বলে।
ডেমরা ট্রাফিক জোনের টিআই মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, সিটি টোল এবং অন্যান্য যানবাহন থেকে ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যাচার। তবে সিটি টোলের অনুমোদনে আমরা দেখেছি শুধু ডেলিভারি ভ্যান ও পিকআপ থেকে টোল আদায় করা যাবে। এছাড়া সিএনজি, টমটম, বাস, ট্রাক, লরিসহ অন্য কোনো যানবাহন থেকে সিটি টোল আদায় করা নিষেধ রয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে, তারা সব ধরনের যানবাহন থেকেই টোল আদায় করছে। গভীর রাতে ট্রাফিক ডিউটি না থাকায় সিটি টোল আদায়কারীরা সুযোগ নিয়ে থাকে যা মোটেও উচিত নয়।
ওয়ারী জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শাহ ইফতেখার আহম্মেদ বলেন, পরিবহণ সেক্টর থেকে পুলিশের টাকা আদায়ের বিষয়টি ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট চাঁদাবাজরা নিজেদের দায়মুক্ত করতে পুলিশের বিষয়টি সামনে আনে। তাছাড়া আমরা প্রায়ই সিটি টোল আদায়কারীদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেই।