বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
রাজধানীর ডেমরা ওদ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাঘ মাসের কনকনে শীত জেঁকে বসেছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। শীত যত তীব্র হচ্ছে, ততই শঙ্কিত হচ্ছেন হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। ঘন কুয়াশার কারণে দিনেও যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। উত্তর-পশ্চিমা হিমেল বাতাসের জন্য নিম্নশ্রেণীর কর্মজীবী মানুষের জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে বিপর্যস্ত মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাতে নানাভাবে জর্জরিত। এসব পরিবারের লোকজন অর্থাভাবে শীতে গরম কাপড় কিনতে পারেন না
সরেজমিন দেখা যায়, ডেমরার সর্বত্রই বর্তমানে হতদরিদ্র ও গরিব লোকজন শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে দিনমজুর শ্রেণির লোকজন কাজ করতে পারছে না। এখানকার সারুলিয়া ও ডেমরার বালুরঘাটসহ খোলা কর্মস্থলগুলোয় শীতের কারণে দিনমজুররা কাজ করতে পারছেন না। শীতের কারণে পণ্যবাহী ট্রাক-লরি ও অন্যান্য যানবাহনেও মানুষ কাজে নামতে পারছে না শীতবস্ত্রের অভাবে। এছাড়া সর্দি-কাশি, শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া প্রভৃতি শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসির ৭০ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় কুয়াশায় বিভিন্ন ফসলের খেত ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী, পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল হিসাবে চিহ্নিত হলেও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরেই অবস্থিত ডেমরায় প্রতিবছর হেমন্তকালের শুরু কার্তিক মাসেই শীতের খানিকটা আবির্ভাব হয়। এখানে অন্তত ৪ মাস (ফালগুন-চৈত্র) পর্যন্ত শীত স্থায়ী হয়।
ডিএসসিসির ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকাসহ ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা হচ্ছে ডেমরা থানাধীন। আর ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের পাশেই রয়েছে ৭১ থেকে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রত্যন্ত বেশ কিছু এলাকা। এখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীসহ বহিরাগত ও ভাড়াটিয়া মিলে অন্তত ১৬ লাখ মানুষের বসবাস। আর স্বাধীনতার পর থেকে ঘোষিত শিল্পাঞ্চলখ্যাত ডেমরায় সরকারি দু’টি পাটকলসহ অসংখ্য ছোট-বড়-মাঝারি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায়, এখানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। কদিন আগে পাটকলগুলো সরকারিভাবে বন্ধ হওয়ায় ওইসব শ্রমিক রিকশা চালানোসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে আছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডেমরার কোনাপাড়া, সারুলিয়া বাজার, বড়ভাঙ্গা, ডেমরা বাজার ও সারুলিয়া বালুরঘাট এলাকায় মানুষ পুরোনো শীতবস্ত্র কেনার জন্য ভিড় করছেন। এবার দাম বেশ চড়া। তাই দাম শুনেই ফিরে আসছেন অনেকে। পুরোনো শীতবস্ত্রও অভাবী মানুষের নাগালের বাইরে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসারের খরচ চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে এখানে। ফলে ডেমরার নলছাটা, ধিৎপুর বাজার, খলাপাড়া ও ঠুলঠুলিয়া এলাকার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে অভাবী মানুষেরা খড়কুটো, কাঠ জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে হচ্ছে।
ডেমরা বাজারের রিকশাচালক আবুল কাসেম, সানারপড়ের আলামিন, দিনকালকে বলেন, ‘গরম কাপড়ের অভাবে খুব কষ্ট পাইতাছি। কুয়াশা আর শরীলে কামড় দেওয়া শীতের কারণে সকাল ১০-১১টার আগে রিকশা লইয়া বাইরইতারিনা (বের হতে পারি না)। এর লাইগ্যা কামাই কইম্যা গেছে।’ সারুলিয়া বালুর ঘাট এলাকার দিনমজুর আমজাদ হোসেন ও জমির আলী বলেন, ‘শীতের দিনে কাম কম, মজুরিও কম। লেপ বানামু কী দিয়া? কোনোরহম পুরান খেতা দিয়া চলতাছি। জ্বর-ঠাণ্ডা তো লাইগ্যাই রইছে। এহন শুধু করোনার আরেকটারে (ওমিক্রন) ডরাইতাছি। টেহার লাইগ্যা ওষুধ কিনতারি না।’ স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার অস্থায়ী শীতবস্ত্র দোকানের মালিক এনামুল কবির লিটন ও আব্দুল হক বলেন, ‘করোনার পর গার্মেন্ট আইটেমের শীতের কাপড়ের দাম একটু বেশি বলে রিকশাওয়ালা ও দিনমজুররা কাপড় কিনতে পারছে কম। তাছাড়া বাজারে তো সব খাদ্যদ্রব্যের দামও বেশি। তাই সংসার খরচ সামাল দিয়ে হতদরিদ্রদের শীতের কাপড় কেনা কষ্ট সাধ্যই বটে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান আতিক দিনকালকে বলেন, ‘প্রতিবছরই আমরা দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করি। এবার ডিএসসিসির সহযোগিতাসহ সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। একই কথা বলেছেন, ডিএসসিসির ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইবরাহীম, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান পলিন ও ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিন সাউদ।