শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যু বার্ষিকী পালিত। কালের খবর কটিয়াদীর করগাঁও ইউনিয়নে এম পি নূর মোহাম্মদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর তিতাসের আ.লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধাদের মানববন্ধন। কালের খবর কিশোরগঞ্জের দানাপাটুলী ইউনিয়নে জন অংশগ্রহণ মূলক বাজেট সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর সোনামসজিদ সীমান্তে বিদেশী পিস্তল-গুলিসহ যুবক আটক। কালের খবর বাংলাদেশ সাংবাদিক ক্লাবের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি গঠন সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর সুন্দরগঞ্জে মীরগঞ্জ শাখার জনতা ব্যাংক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে দোকান মালিক,গ্রাহকদের মানববন্ধন। কালের খবর মিশনে যাওয়া হলনা সেনা সদস্য সাইফুর রহমানের। কালের খবর প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি,কিশোরগঞ্জে সেই বিএনপি নেতা চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা। কালের খবর ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা
ডেমরা মহাসড়কে কঠোর লকডাউনেও চলছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক

ডেমরা মহাসড়কে কঠোর লকডাউনেও চলছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক

সরকারি নির্দেশ মানছে না সিন্ডিকেট ও চালকরা * প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ে না * পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ

এম আই ফারুক আহমেদ, ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি :

কঠোর লকডাউনের মধ্যেও রাজধানীর ডেমরা মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলছে। নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও তার তোয়াক্কা না করে অভ্যন্তরীণ সড়ক ছেড়ে মহাসড়কেও অবাধে চলাচল শুরু করছে ইজিবাইক, অটোরিকশা ও ভ্যানগাড়ি। এক্ষেত্রে কিছুই মানছে না এসব অবৈধ যানবাহন সিন্ডিকেট। আর এসব যানবাহন ঘিরে চলছে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি। থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।মহাসড়কে সরকারিভাবে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা-ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচলের বিরুদ্ধে রিট করা হয়। রাজধানীতে কোনোভাবেই এসব যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। অথচ ডেমরার অভ্যন্তরীণ ও মহাসড়কে বাধাহীনভাবে এসব যানবাহন বীরদর্পে চলছে। জেলায় জেলায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা রয়েছে। সেখানে এসব নিষিদ্ধ যানবাহন ডেমরায় বন্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, কঠোর লকডাউনের মধ্যেও ডেমরা-শিমরাইল সড়কের সারুলিয়া বাজার, রানীমহল ও গলাকাটা এলাকায় অবাধে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট স্টাফ কোয়ার্টার, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়কেও অবাধে চলছে ইজিবাইক। ডেমরার অভ্যন্তরীণ সব সড়কে আগের মতো চলছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা ও ভ্যান। একইসঙ্গে নিষিদ্ধ ভটভটি, নসিমন ও করিমন চলছে। বিশেষ করে ট্রাফিক ও থানা পুলিশের নাকের ডগায় ডেমরার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কোনাপাড়া, হাজীনগর, বড়ভাঙ্গা, বামৈল, ডগাইর বাজার, রানীমহলের ঢাল, গলাকাটা ও ফার্মের মোড়সহ প্রায় সব অভ্যন্তরীণ সড়কে আগের মতো এসব নিষিদ্ধ যানবাহন চলছে।

রাজধানীর মাতুয়াইল-যাত্রাবাড়ীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও ব্যাটারিচালিত হাজার হাজার যানবাহন অবাধে চলছে। কোনাপাড়া, মাতুয়াইল, বাদশা মিয়া রোড, আল-আমিন রোড, মুসলিমনগর, ডগাইর ফার্মের মোড়, শান্তিবাগ, সাইনবোর্ড, সানারপাড়সহ সব অলিগলি এখন নিষিদ্ধ যানবাহনের দখলে। এসব যানবাহন ঘিরে প্রায় প্রতিটি এলাকায় যানবাহন স্ট্যান্ডসহ কয়েকটি রুট গড়ে উঠেছে। আর প্রতিটি রুটেই আলাদাভাবে উঠানো হচ্ছে চাঁদা। আর চাঁদা নিয়ে প্রায়ই প্রভাবশালীদের মধ্যে বিবাদ লেগে থাকে।

হাজীনগর এলাকার বাসিন্দা নূর আলম ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশার দাপটে এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কঠোর লকডাউনেও এসবের দাপট কমেনি। নিয়ন্ত্রণহীন এসব যানবাহনের কারণে প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি দুর্ঘটনায় মৃত্যুও হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা বন্ধে এখানে বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। আর এ সুযোগে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট প্রশাসনের চোখের সামনে তৎপর রয়েছে। প্রতিটি সড়কেই বিদ্যুৎনির্ভর ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মিশুক রিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। কোনাপাড়ার বাসিন্দা ফারহানা মুন্নি যুগান্তরকে বলেন, সড়কে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের কারণে আতঙ্কে থাকতে হয়। অভ্যন্তরীণ সড়কে ফুটপাত না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে-কর্তৃপক্ষ নয়, থানা ও ট্রাফিক পুলিশ ম্যানেজ করে সরকারি দলের কতিপয় নেতা ও প্রভাবশালী মহল এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশা সড়কে চালাচ্ছেন। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় পড়ছে এসব যানবাহনের যাত্রীরা। ব্যাটারিচালিত সব যানবাহনকে রুট ভেদে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের নামে ২০ টাকা টোল আদায়ের সঙ্গে চাঁদাবাজদের অতিরিক্ত ২০ টাকা দিতে হয়। হাজীনগর থেকে সারুলিয়া বাজার হয়ে চিটাগং রোড পর্যন্ত চলাচলকারী চালকদের মোট ৫০ টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি অন্য কোনো রুটে ঢুকলেই তাদের অতিরিক্ত ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। প্রতিটি এলাকায় চালকদের অন্তত ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা চাঁদা দিয়ে সড়কে চলতে হয়।

সূত্র জানায়, ডেমরা ও আশপাশে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সংখ্যা ২০ হাজারের অধিক। আর এসব যানবাহন ঘিরে এলাকায় দুই শতাধিক গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। পুলিশ ও প্রভাবশালীদের মাধ্যমে মাসোহারার ভিত্তিতে এসব নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, যা ওপেন সিক্রেট। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে এবং এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতার আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে যানবাহনগুলো অবাধে চলছে। এককালীন টাকার বিনিময়ে এসব যানবাহনের চালকরা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে সড়কে চলাচলের বৈধতা পাচ্ছে। ডেমরা ট্রাফিক জোনের টিআই জিয়া উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, জনবল কম থাকায় ট্রাফিক বিভাগ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে তেমন একটা ভূমিকা রাখতে পারছে না। তবে প্রধান সড়কে এসব চলতে দেওয়া হয় না। ট্রাফিক বিভাগ এসব নিষিদ্ধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।

ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, লকডাউন চলাকালে এলাকায় পুলিশের কঠোর নজরদারি রয়েছে। এছাড়া নিষিদ্ধ যানবাহনের বিরুদ্ধে তারা তৎপরও রয়েছেন। নির্দেশনা পেলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়টি একেবারেই ঠিক নয়। চাঁদাবাজির সঙ্গে পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি অনেক সময় লাইনম্যানেরা বলে বেড়ায়। তবে কোনো পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী মহলের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিন শত শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com