শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সিরাজগঞ্জে খিরা চাষে লাভবান কৃষক, খিরা যাচ্ছে সারাদেশে। কালের খবর তীব্র গরমে পথচারীদের সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ফায়ার সার্ভিস। কালের খবর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে পশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। কালের খবর সমাজে “শান্তি স্থাপন ও সহিংসতা নিরসনে — সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কালের খবর :

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কালের খবর :

সংসদ প্রতিবেদক ,কালের খবর :

অন্যায়কারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। কে কোন দলের সেটা বড় কথা নয়, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের আমরা ধরে যাচ্ছি। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। করোনাকে জয় করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বিশ^ব্যাপী পাটের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সেগুলোকে
সময়োপযোগী, আধুনিক করে গড়ে তোলার কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নতুন আঙ্গিকে পাটকলগুলো চালু হলে অভিজ্ঞকর্মীদেরই সেখানে চাকরি হবে, এ জন্য তাদেরকে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ও দলের সকল সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য যেসব কাজ করে যাচ্ছেন তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের তো অনেক রাজনৈতিক দল আছে। সমালোচনা অনেকেই করে যাচ্ছেন। এমনকি বহু এনজিও, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ঠিক বর্তমানে কতজনকে চোখে পড়ে যারা কাজ করছে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে? সেটাই আমার প্রশ্ন। সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে করে সংসদ নেতা বলেন, ঘরে বসে সমালোচনা, বাজেটের খুঁত ধরা, কাজের খুঁত ধরা সেগুলো অনেকেই ধরতে পারেন, এটা ঠিক। কিন্তু মাঠে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা করা, এই কাজগুলো কিন্তু আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক যারা, আমরাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে জন্মলগ্ন থেকে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং এখনও দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ আছে যারা হয়তো হাত পাততে পারছে না, তাদের কোনো আয় নেই। গোপনে তাদেরকে খাবার জিনিস সরবরাহ করা হয়। এমনকি ঢাকা শহরে আমাদের প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের যে কমিটিগুলো, তারা কিন্তু সেভাবে সাহায্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। আর যারা নিচ্ছে তারা কিন্তু চায় না তাদের নামটা প্রচার হোক। আমরাও চাই না। কারণ এটা তাদের একটু আত্মাভিমানে লাগে। কিন্তু তারা যেন কষ্ট না পায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আছে। সরকারের পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকেও মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস সঙ্কটে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সরকারের কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা দুই হাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। পাশাপাশি আরও দুই হাজার ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তা ছাড়া হেলথ টেকনোলজিস্ট, কার্ডিওগ্রাফার এবং ল্যাব অ্যাটেনডেন্টের তিন হাজার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা সেগুলোও দেব।
অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, টেস্ট করার জন্য খুব ভালো টেকনিক্যাল লোক দরকার হয়। এই লোক পাওয়া কঠিন। কারণ বাড়িতে গিয়ে গিয়ে তারা নমুনা সংগ্রহ করছে, যেতে গিয়ে তাদের অনেকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় পাড়ার লোক ঢুকতে দেবে না, বাড়িতে যেতে  দেবে না, তারা নমুনা নিতে দেবে না। এই ধরনের প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এমনকি যারা নমুনা সংগ্রহকারী, তারা এক সময় ওই সমস্ত পোশাকগুলো খুলে ব্যাগে নিয়ে রোগীর বাড়ি ঢোকার মুখে ওগুলো পরে দরজায় নক করেছে এবং তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছে। অনেক সময় সাধারণ মানুষ তাদের আঘাতও করেছে। তিনি বলেন, এই খবর তো অনেকেই রাখেন না। আমাদের বিরোধী দল অনেক কথা বলেছে। তারা কিন্তু এই খবরটা কোনোদিন রাখে না। হয়তো আজকেই প্রথম শুনলেন তারা। যে এই রকম ঘটনাও ঘটেছে বাংলাদেশে যে নমুনা সংগ্রহকারীদের যেতে দেয় না। তাই যারা এই দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তাদের সবাইকে আমাদের দেখতে হবে এবং তাদেরকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
ডাক্তার, নার্স ও টেকনেশিয়ানদের থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, সেখানে খরচ তো হবেই। তবে এটা সত্য যে বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গিয়েছে পঁচাত্তরের পর যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এরা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালোটাকা শিখিয়েছে, ঋণখেলাপি শিখিয়েছে, তারা সমাজকে কলুষিত করে দিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দলমত নির্বিশেষে দুর্নীতিবাজদের ধরছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে রাখতে গিয়ে বিরোধী দল ও বিএনপি এমপিদের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িতদের ধরেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কে কোন দল সেটা বড় কথা নয়, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের আমরা ধরে যাচ্ছি। আমরা ধরার পর উল্টো আমাদেরই দোষারোপ করা হয়। তবে যে যাই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, নেব এবং এটা অব্যাহত থাকবে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসনামলে দুর্নীতিকেই নীতি হিসেবে গ্রহণের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গেছে ১৯৭৫-এর পরে যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। কারণ, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এরা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালো টাকা ও ঋণখেলাপি শিখিয়েছে। তারা এই সমাজটাকে কলুষিত করে গেছে। মানুষ আগে যে একটা আদর্শ ও নীতি নিয়ে চলত, দীর্ঘদিন এ দেশে মিলিটারি ডিরেক্টরশিপ মানুষের চরিত্র হরণ করেছে। কারণ তাদের অবৈধ ক্ষমতাটাকে নিষ্কণ্টক করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসকরা বছরের পর বছর এই দুর্নীতির বীজ বপন করেছে। তা মহীরুহ হয়ে গেছে। যতই কাটেন কোথা থেকে আবার গজিয়ে ওঠে। মানুষের চরিত্রটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে তারা। এই চরিত্রহীনতা একেবারে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিল। সেখানে আপনি যতই চেষ্টা করেন এর মূলোৎপাটন যথেষ্ট কঠিন। তিনি বলেন, তারপরও এর মধ্যে যে খবরগুলো পাচ্ছেন, এটা কারা করছেন? আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর কে  কোন দলের সেটা বড় কথা নয়, এই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, অনিয়মে জড়িত যাকে যেখানে পাচ্ছি আমরা ধরে যাচ্ছি। ধরছি বলেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরা ধরার পর আমাদের দোষারোপ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এর আগে তো দুর্নীতিটাই নীতি ছিল, অনিয়মটাই নিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে। কিন্তু আমরা আসার পর সেগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। যতটুকু পারি সেগুলো আমরা শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই অনিয়মগুলা আমরা নিশ্চয়ই মানব না। যে যাই হোক তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নেব এবং এটা অব্যাহত থাকবে। করোনাভাইরাসের ভয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কথা শুনলেই মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত হয়। এত আতঙ্কিত হব কেন। মরতে তো এক দিন হবেই। তবে নিজে সুরক্ষিত থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধিসহ যা যা মেনে চলার দরকার তা করবেন। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাব। আমাদের দেশে করোনা রোগীর সুস্থতার হার অনেক বেশি। তাই মনে সাহস রাখতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
সমাপনী ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ সারাবিশে^ করোনার পরিস্থিতি এবং সরকারের পদক্ষেপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, করোনার কারণে সব কিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। অতীতেও কখনও এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। করোনার যেন নিজস্ব একটা পদ্ধতি আছে। প্রথমে একজন আক্রান্ত হচ্ছে, এরপর দুজন, এরপর আরও ১০ এভাবে ছড়াতে থাকে। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকবে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, করোনার সংক্রমণ জুলাই মাস পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। এরপর আস্তে আস্তে কমে যাবে। সেটাই হচ্ছে।
বস্ত্র-পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে এবং পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, গত এক বছর ধরে এ পাটকলগুলোর ২৫ হাজার শ্রমিককে সরকারের পক্ষ থেকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) দিতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকে এভাবে বছরের পর বছর বেতন দিয়ে যেতে হবে। এ পাটকলগুলো সবচেয়ে পুরনো ৫০ ও ৬০-এর দশকে এগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলো আর লাভজনক করা সম্ভব না। বিশে^ পাটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা পাটের জিন আবিষ্কার করেছি। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ^ব্যাপী এ বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এ পাটকলগুলোকে সময়পোযোগী ও আধুনিক করতে হবে। আমরা সেটা করব। শ্রমিকদের পাওনা পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা পরিশোধ করব। সব টাকা তাদের হাতে দেওয়া হবে না। দিলে খরচ হয়ে যাবে। অর্ধেক টাকা আমরা তাদের পারিবারিক সঞ্চয়পত্র করে দেব। এতে তারা প্রতিদিনের মজুরির চেয়ে বেশি পাবে। এ পাটকলগুলো আধুনিক করে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এদের যারা আগ্রহী হবে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যাবে।

 

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com