সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার (ঢাকা), কালের খবর :
মেয়ের নবজাতক সন্তানকে দেখতে সিরাজগঞ্জ থেকে আশুলিয়া এসে যাত্রীবাহী বাসের চালক, চালকের সহকারী, সুপারভাইজার ও তাদের কিছু সহযোগীদের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে জরিনা খাতুন নামের এক নারীকে।
জরিনাকে হত্যার আগে সাথে থাকা তার বৃদ্ধ বাবাকে মহাসড়কে নামিয়ে দেয় বাসটির পরিবহন শ্রমিকরা।
আশুলিয়া থানার টহল পুলিশ ওই নারীর মরদেহটি উদ্ধার করে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কের আশুলিয়া বাজারের অদূরে মরাগাঙ্গ এলাকা থেকে। নিহত নারীর স্বজনরা বাসটির ব্যাপারে পুলিশকে কোনো তধ্য দিতে পারেনি। টাঙ্গাইলে যাওয়ার কথা বলে বাসটি যাত্রী উঠালেও এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করে বিপরীত দিকে ঘুরে আব্দুল্লাহপুরের দিকে যাচ্ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে নিহতের বৃদ্ধ বাবা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ। এ ঘটনায় নিহত নারীর জামাতা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন।
পুলিশ ও নিহত নারীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালি থানার খাস কাওলিয়া গ্রামের মৃত জহির মোল্লার স্ত্রী এবং আকবর আলী মন্ডলের মেয়ে জরিনা খাতুন। তিনি গ্রামেই বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার মুন্সপাড়ায় বসবাসরত জরিনা খাতুনের মেয়ে একটি সন্তান জন্ম দিয়েছেন। নবজাতক ওই নাতীকে দেখার জন্য জরিনা খাতুন বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে শুক্রবার দুপুর ১২ টার দিকে মেয়ের বাসায় বেড়াতে আসেন।
নাতীকে দেখে বিকেল পাঁচটার দিকেই তারা নিজেদের বাড়ি সিরাজগঞ্জে যাওয়ার জন্য মেয়ের বাসা থেকে বের হন। জরিনার ভাই স্বপন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাবা আকবর আলী ও বোন জরিনাকে আশুলিয়ার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ইউনিক বাসস্ট্যান্ডে টাঙ্গাইলগামী একটি বাসে তুলে দেন। তবে স্বপন বাসের নাম জানাতে পারেননি। বাসে ওই সময় যাত্রীর আসনে কয়েকজন লোক বসে ছিল। তবে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম ছিল। শাশুড়ি ও নানা শ্বশুরের খবর জানতে রাত আটটার দিকে আকবর আলীর মোবাইল ফোনে ফোন করেন জরিনার মেয়ের জামাতা নূরুল ইসলাম। জানতে চান, তাঁরা কতদূর পৌঁছেছেন।
ফোন পেয়ে আকবর আলী জানান, আশুলিয়া বাজার এলাকায় একটি সেতুর কাছে তাকে (আকবর) বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে বাসটি জরিনাকে নিয়ে চলে গেছে। তিনি মেয়ের জরিনার কোনো খবর জানেন না। তিনি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তখন অজানা আশঙ্কায় নূরুল ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে আশুলিয়া বাজারের দিকে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, আকবর আলী হতভম্ব হয়ে আশুলিয়া বাস স্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি উপস্থিত লোকজনের কাছে গিয়ে নিজ ঠিকানা বা পরিবার সম্পর্কেও কোনো তথ্য দিতে পারছিলেন না।
একপর্যায়ে সেখানে বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কের টহল পুলিশ এসে ঘটনাটি জানতে পারে। পরে রাত ১০টার দিকে টহল পুলিশ আশুলিয়া বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে মরাগাঙ এলাকায় মহাসড়কের পাশে জরিনা খাতুনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ওই বাসটিতে যারা ছিল, তারা যাত্রী ছিল না বরং যাত্রীবেশে দুর্বৃত্তরা ছিল বলে ধারণা পুলিশের।
পুলিশ জানায়, বাসটি টাঙ্গাইলগামী হলেও সেটি কিছুদূর সামনে গিয়ে পুনরায় বিপরীত দিকে ফিরে এসে আব্দুল্লাহপুরের দিকে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনৈতিক কোনো অপরাধের উদ্দেশ্যেই তারা এমনটি করেছে। ছিনতাই করার মতো কোনো অর্থ জরিনা খাতুন বা তার বাবার কাছে ছিল না। তা ছাড়া আকবর আলীর মোবাইল ফোনটিও দৃর্বৃত্তরা নেয়নি। তবে জরিনা খাতুনকে ধর্ষণের উদ্দেশে বাসটি ঘুরিয়ে আনা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ বলেন, জরিনার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধ করে জরিনাকে হত্যার পর তার মরদেহ মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে ওই বাসটি। নিহত নারী কালো রঙের বোরখা পরিহিত ছিলেন। বাসটি শনাক্ত করা যায়নি। এ ঘটনায় বাসের চালক, চালকের সহকারী (হেলপার), সুপারভাইজারসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে নিহত জরিনার জামাতা নূরুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাসটি ও ঘটনায় জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে। নিহতের মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।