রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
॥ নবীনগর প্রতিনিধি, কালের খবর ॥
মেধাবী, দক্ষ, ত্যাগী, যোগ্য, সৎ আর পরিশ্রমী একজন আদর্শবান নেতার সঠিক নেতৃত্বই একটি দেশ তথা একটি জাতিকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। কিন্তু সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছানোর জন্য নেতার একটি সুন্দর ও একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত। অনেক রাজনৈতিক নেতাই নিজ এলাকায় এসে কিছু টাকা কিংবা বড় বড় রাজনৈতিক পদবী বা প্রশাসনিক ক্ষমতার বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দরিদ্র সাধারণ জনগণকে ব্যবহার করে। বেশির ভাগ সময়ই দরিদ্র সরল মানুষদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ভোটে এমপি হয়ে সরকারি নানা রকম সুযোগ-সুবিধা প্রয়োগ করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বিশাল সম্পদের মালিক বনে যান। হয়ে যান ভিআইপি কিংবা সিআইপি। আবার কিছু কিছু মানবিক গুণাবলীর মানুষ রয়েছেন, যারা নিঃস্ব অবস্থা থেকে সততা পরিশ্রম এবং ত্যাগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। শিল্প-প্রতিষ্ঠানের উপার্জিত অর্থ-বিত্ত নিজের প্রয়োজনে ভোগ না করে দরিদ্র নিরীহ জনগণের মাঝে নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিয়ে মানসিক তৃপ্তি পান। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই প্রকৃতির মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে তাঁরা যদি কোনো কারণে জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধি হতে পারেন, তখন তাঁদের ধ্যান, জ্ঞান এবং পরিকল্পনা থাকে এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং মেরামত, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দরিদ্র অসহায় জনগণের সঠিক উন্নয়ন করা। তাঁদের নিজস্ব ব্যবসায়ী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থাকায় সরকারি সম্পদ বা অর্থ লুটপাট করার কোনো পরিকল্পনা তাদের থাকে না। বরং সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি নিজের উপার্জিত অর্থও জনগণের সেবায় নিয়োজিত করেন। আমার নির্বাচনী এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল তেমনি একজন মানুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫(নবীনগর) এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদলের অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের কিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য এই লিখা। আমরা সবাই জানি একজন মানুষ মহান হয়ে উঠে তার কৃতকর্মের মাধ্যমে। কিন্তু তার জন্য দরকার হয় বিধাতার রহমতের এবং মানুষের ভালবাসার। মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার পর সারাজীবন কি কর্ম করলো এটাই তার ভালমন্দের বিচারের মাপকাঠি। তার জš§ ভাল জায়গায় হোক কিংবা খারাপ জায়গায় হোক এটা দেখার বিষয় না। কথাই আছে “জন্ম হোক যতাতথা কর্ম হোক ভাল”। যে কোন মানব সন্তান কর্ম দ্বারা ব্যাপকভাবে সুনামের অধিকারী হতে পারে আবার কর্ম দ্বারা ব্যাপকভাবে বদনামের অধিকারীও হতে পারে। এটাও সত্য প্রত্যেকটা লোকেরই ভালমন্দ উভয় কর্মই রয়েছে। সেক্ষেত্রে দেখতে হবে তার মন্দটা ইচ্ছেকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত কিংবা একজনের মন্দ করতে গিয়ে দশজনের উপকার হচ্ছে কিনা।
কিছু কিছু গুণ বা ভাল কাজ মানুষকে আজীবন স্মরণীয় করে তুলে। আর তা বহমান থাকে মৃত্যুর পরেও অনাধিকাল পর্যন্ত। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাকে স্মরণে রাখে ভাল কাজের জন্য। আর তার অবর্তমানে আক্ষেপ করে তাকে হারানোর জন্য। পাশাপাশি খুঁজে বেড়ায় মানবসেবক ঐ লোকটির মতো আর একজন গুণী মানুষকে। দুনিয়ার সবচাইতে সত্য কথা হচ্ছে মানব সেবা ছাড়া এই দুনিয়ার কোন মানুষ কোনকালেও মানুষের মনের ভালবাসা পায় নাই। এমনকি মানবসেবা না করলে আল্লাহর ভালবাসা পাবার কথাও চিন্তা করতে পারে না। এই সকল মানব সেবক আল্লাহর অশেষ রহমতে হঠাৎ করে দীর্ঘকাল পরপর একেক অঞ্চলে ভাগ্যগুণে আর্বিভুত হয়। এই সকল সমাজসেবক, জনদরদী মানুষগুলো এলাকার অসহায় হতদরিদ্র মানুষের আর্শিবাদ স্বরূপ আরোহন করে থাকে। তেমনি একজন মানুষ হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) নির্বাচনী এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল।
নবীনগর উপজেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের রূপকল্প পরিকল্পনা নিয়ে ২০০৬ সালে অসহায় গরীব দুঃখী মানুষকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার মাধ্যমে নবীনগর উপজেলায় পদার্পন করেন। স্বল্প সময়ে নিজ কর্মের গুণে মানুষের খুবই আপন ও জনপ্রিয় মানুষ হয়ে উঠেন। পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে নবীনগর নির্বাচনী এলাকার এমপি নির্বাচিত হয়ে পাল্টে ফেলেন হাজার বছরের অবহেলিত নবীনগর উপজেলার জরাজীর্ণতা। নবীনগর উপজেলার একজন নাগরিক হিসেবে এবং ফয়জুর রহমান বাদলের ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমের একজন সুবিধাভোগী হিসেবে উনার উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো সাধারণ জনগণকে তুলে ধরা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেই আমার এই ক্ষুদ্র লিখা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফয়জুর রহমান বাদল সংসদ সদস্য হওয়ার পূর্বে নবীনগর উপজেলায় আরও ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফয়জুর রহমান বাদল হলেন সপ্তম সংসদ সদস্য। এর মধ্যে একজন দুইবার আর একজন চারবার এবং বাকী সবাই একবার করে সংসদ সদস্য হয়েছেন। কেউ আবার সরকারের মন্ত্রীও হয়েছেন।
ফয়জুর রহমান বাদলের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরার পূর্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অন্যদের উন্নয়ন কার্যক্রম সামান্য তুলে না ধরলে হয়তো পাঠকগণ তারতম্য নির্ণয় করতে পারবেন না।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দ্বারা ধ্বংস হওয়া বাংলাদেশকে এবং এদেশের মানুষের খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থানের বন্দোবস্ত করার জন্য জাতির জনক দেশে-বিদেশে ব্যাপক গণসংযোগ করেন। ধীরে ধীরে কর্মসংস্থান, যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি কাজগুলোর মেরামতের ব্যবস্থা করেন। সবকিছু যখন সমাধান করে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখন দেশী বিদেশী কিছু কুলাঙ্গার ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করেন। শেখ মুজিবকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে নিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করেন। শুরু হয় হত্যা দুর্নীতি আর লুটপাট। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পরে দুর্নীতি আর লুটপাট। শহর থেকে গ্রামে, বিভাগ থেকে জেলা এবং জেলা থেকে উপজেলায় সর্বত্রই শুরু হয় দুর্নীতি এবং লুটপাট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশের জন্য যা বিদেশী অনুদান সংগ্রহ করে দেশ গড়ার জন্য যুদ্ধে নেমেছিলেন জাতির জনককে হত্যা করে লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পরে তৎকালীন অবৈধ সরকার। সারা বাংলাদেশের প্রত্যেক উপজেলার মতো নবীনগর উপজেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মেজর জিয়াউর রহমানের আর্শিবাদে নবীনগর উপজেলা হতে হাবিবুল্লাহ খান এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে জিয়ার সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কিন্তু নবীনগর উপজেলাবাসীর ভোটের সামান্য মূল্যায়নও করেন নাই। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজে এবং আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে দুর্নীতি ও লুটপাট করিয়েছেন। তাই ক্ষমতা হারানোর পর দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে হাজতবাস করতে হয়েছে। এরপর আর একজন অবৈধ সেনা শাসক এরশাদের স্নেহভাজন বিদেশ ফেরত মরহুম কাজী মোঃ আনোয়ার হোসেন এমপিকে সবাই চিনেন। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১ এবং সর্বশেষ ২০০১ সালের চারবারের নির্বাচিত এমপি। কথিত আছে যে, এলাকায় উনার কোন উন্নয়ন কাজ করতে হয় না। আসলেও উনার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডও ছিল না। উনার এলাকায় ব্যক্তিগত পৌষ্য কিছু কর্মী ছিল। নির্বাচন আসলে তিনি তাদের অর্থসহ মাঠে নামিয়ে দিতেন। যারা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকা হতে ভোট ক্রয় করতেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে উনার বিশাল কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল বলে কারও জানা নেই। কিন্তু এমপি হওয়ার পর বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হন। চারবার এমপি নির্বাাচিত হওয়ার পরও নবীনগর উপজেলায় দৃশ্যমান একটি উন্নয়ন কাজ করেছেন, এমন কিছু কেউ দেখতে পাবেন না। মূলত: ঐ সময়টা হতে নবীনগর উপজেলায় আঞ্চলিক দলাদলির সৃষ্টি হয়েছে বলা যায়। দ্বন্দের অবসান না করে উল্টো বিবদমান দুইটা দলের একটি দলের পৃষ্ঠপোষকতা করা ছিল ক্ষমতায় থাকা এমপির কাজ। কৃষক, শ্রমিক, মাঝি এবং জেলে মানুষকে বোকা বানিয়ে কাদামাটি মাখা শরীরের মানুষগুলোকে দেখে জড়িয়ে ধরে জনদরদী সেজে ভোট নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের এবং পোষা মানুষগুলোর আখের গুছিয়ে নবীনগর উপজেলাকে অবহেলিত করে রেখেছিলেন। মজার ব্যাপার হল- উনার পোষা কর্মী-সমর্থকদের কোনো দল ছিল না। যে সময় উনি যে দলে অবস্থান নিতেন, তারা ওই দলেরই নেতা-কর্মী হিসেবে থাকতেন। ঐ এমপি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ, এরশাদের আমলে জাতীয় পার্টি ও পরবর্তী সময়ে বিএনপি করেছেন। মাঝে হঠাৎ করে আরেক এমপি এসেছিলেন ১৫ দিনের জন্য। সরকারী সর্বোচ্চ আমলা থাকাকালীন সময়ে নবীনগর উপজেলায় যার পদধুলি-ই পরে নাই কিন্তু চাকুরী হারানোর পর এমপি হওয়ার বাসনায় বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। যার কাজ ছিল শুধু ভুয়া নামফলক লাগানো। বরাদ্দ নেই, টেন্ডার নেই, কিন্তু মন্ত্রী এনে উদ্বোধন করে নামফলক লাগিয়ে গেছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অবশ্য ৪৫ দিনের জন্য এমপিও হয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম নবীনগর উপজেলায় উন্নয়নের রূপকার হিসেবে আর্বিভূত হন মরহুম এডভোকেট আব্দুল লতিফ। উনিই নবীনগরবাসীকে বুঝাতে সক্ষম হন জনপ্রতিনিধির কাজ উন্নয়ন করা। জনপ্রতিনিধির কাজ সরকারী অর্থের বরাদ্দ এনে এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ-মন্দির, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি নির্মাণ করা। উনার উন্নয়ন কার্যক্রম দ্বারা বুঝালেন একজন এমপির কাজ নিজের আখের গোছানো নয়, একজন এমপির কাজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিজে শিল্পপতি হওয়া নয়, একজন এমপির কাজ আঞ্চলিক দলাদলি সৃষ্টি করে একটা গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া নয়, একটা এমপির কাজ ক্ষমতার প্রয়োগে উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বানানো নয়। উনিই জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন একজন এমপির কাজ কারও বাচ্চা হয়েছে কিংবা কারও ছেলের খৎনা হয়েছে তার দাওয়াত খাওয়া নয়। লতিফ সাহেবের উন্নয়ন কর্মকান্ডই উনার মৃত্যুর পরও নবীনগর উপজেলাবাসীর নিকট উন্নয়নের প্রাণ পুরুষ হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সর্বমহলে এখনও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে রয়ে গেছেন। উনার অসুস্থতার কারণে প্রায় ১৮ মাস চিকিৎসাধীন থাকতে হয় দেশের বাহিরে। তা না হলে নবীনগরবাসী আরো উন্নয়ন পেতো। এরপরও উনি ৭শ’ কোটি টাকার কাজ করেন।
২০০৮ এর নির্বাচনে আরেক স্বচ্ছ রাজনৈতিক নেতা এডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন নৌকা প্রতীক নিয়ে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনিও প্রাণান্তকর চেষ্টায় এডভোকেট লতিফ সাহেবের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার চেষ্টা করেন।
১/১১ এর পূর্বে ২০০৬ সালে নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন তখনই নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন ফয়জুর রহমান বাদল। এরপূর্বেও ফয়জুর রহমান বাদল ঢাকার ক্যান্টেনম্যান্ট ইউনিয়নে ১৯৮৪, ৮৫ ও ১৯৮৬ সালে পর্যন্ত ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। পরবর্তী সময়ে ঐ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তী সময়ে সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ফয়জুর রহমান বাদল আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে আদমজী ক্যান্টেনম্যান্ট কলেজ কেন্দ্রের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, আদমজী ক্যান্টেনম্যান্ট কলেজ কেন্দ্রে বিএনপির সভানেত্রী খালেদা জিয়া ভোটার ছিলেন।
এই রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ফয়জুর রহমান বাদল নিজ মাতৃভূমি নবীনগর উপজেলায় সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেন। ফয়জুর রহমান বাদল ১৯৬৬ সালে ৫ নভেম্বর বাবার কর্মস্থল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক জš§স্থান এবং বসতবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। উনার পিতার নাম মরহুম সার্জেন্ট মজিবুর রহমান। মাতার নাম মরহুমা আয়েশা খাতুন। উনার বাবা ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম ১৫নং আসামী ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে কারাবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে সমরে যুদ্ধ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর থাকায় এবং বঙ্গবন্ধুর সকল নির্দেশনা মেনে সাহসী যুদ্ধের কারণে আগরতলা মামলার আসামী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাথে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন।
যেহেতু বাবা ছিলেন এক সাহসী যোদ্ধা এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও দেশপ্রেমিক মানুষ, আর তাই ছোট থাকতেই দেশের জন্য বাবার আত্মত্যাগ দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন ফয়জুর রহমান বাদল। আত্মত্যাগী বাবা চাকুরীর পরের সময়টুকু সমাজ এবং দেশ সেবায় কাটাতেন কিন্তু বাদল যখন বিদ্যালয় পেরিয়ে কলেজে পদার্পণ করেন হঠাৎ বাবার মৃত্যু অনেক স্বপ্ন থামিয়ে দেয়। থমকে দাঁড়ায় শিক্ষা গ্রহণ করা। বাধ্য হয়ে ব্যবসায় মনোযোগী হন। যোগ্য বাবার যোগ্য উত্তরসুরী হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অল্প বয়সেই ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন। একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পর আবারও আত্মনিয়োগ করেন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ে। নিজ প্রতিভায় সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলেও অতি দ্রুত সফল হয়ে উঠেন।
২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া (৫) নবীনগর নির্বাচনী এলাকা হতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতিকে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর হতেই এলাকার উন্নয়নে সরকারী, বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিগত অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে নবীনগর উপজেলাকে একটা আধুনিক ডিজিটাল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালান।
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় এবং চেষ্টা করলে সফল হয়। এ কথাগুলোর সত্যতার প্রমাণ করলেন ফয়জুর রহমান বাদল এমপি। দীর্ঘ সারে চার বছর সময়ে একক প্রচেষ্টায় উনার ব্যক্তিগত আর্থিক সাহায্য ছাড়া নবীনগর উপজেলার উন্নয়নের জন্য সরকারী বরাদ্দের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম হয়েছে বা এখনও চলমান আছে প্রায় ১,১০০ কোটি (এক হাজার একশ’ কোটি) টাকার। ইহা ছাড়াও বাদল নবীনগরবাসীর বিভিন্ন প্রয়োজনে বিশেষ করে চিকিৎসা, বাসস্থান নির্মাণ, গরীবের বিয়ে, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ইত্যাদিতে সাহায্য করা বাবদ প্রতিমাসে নিজস্ব অর্থায়নে ব্যক্তিগতভাবে ১০/১২ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করেন। নবীনগর উপজেলার এমন কোন গ্রাম নেই যে গ্রামে বাদলের ব্যক্তিগত অনুদান পৌঁছে নাই। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, হার্টের রিং পড়ানো, বিবাহযোগ্য অসহায় বাবা-মায়ের কন্যার বিয়ের খরচ হতে আরম্ভ করে গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরীর টাকা প্রদান করা নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও অনেক জনপ্রতিনিধিকেও আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে রিং পড়ানোর টাকা প্রদান, মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার ব্যয় বহন করার অনেক উদাহরণ রয়েছে।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি এই পর্যন্ত বাদলের ১০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করেছেন বা কাজ বর্তমান চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ যেমন- সড়ক ও জনপথ বিভাগের টে-ারের মাধ্যমে ৪৬২ (চারশত বাষট্টি) কোটি টাকার বরাদ্দকৃত নবীনগর-শিবপুর রাধিকার কাজ খুবই দ্রুত গতিতে চলছে। যা ছিল নবীনগরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। বিশেষ করে উন্নয়ন বঞ্চিত ও অবহেলিত পূর্ব ছয় ইউনিয়নের জন্য আশার আলোরূপে আবির্ভূত হওয়া আলাউদ্দিনের চেরাগ।
গোকর্ণঘাটের ব্রীজসহ মহেশরোড যা জেলা সদরের সাথে বছরের ১২ মাসই দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা যোগাযোগের এক সেতুবন্ধন তৈরী করে দিয়েছেন ফয়জুর রহমান বাদল। ইহাও পূর্ব ছয় ইউনিয়নবাসীর আলাউদ্দিনের চেরাগ পাওয়ার মতই এক অমূল্য ধন। যার মাধ্যমে মাত্র আধা ঘন্টায় জেলা শহরে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। আগে যেখানে যাতায়াত করতে লাগতো প্রায় ২-৩ ঘন্টা। তা-ও নির্ধারিত একটা সময়ের মধ্যে যেতে হতো। যার জন্য বাদল সরকারী উন্নয়ন বরাদ্দ আনেন ৬৫ কোটি টাকা।
গোকর্ণঘাট হতে কৃষ্ণনগর বাজার পর্যন্ত কৃষ্ণনগর ব্রীজ ও রাস্তা পাকা করণের মাধ্যমে কৃষ্ণনগর, বড়াইল এবং বীরগাঁও ইউনিয়নবাসীর সাথে ১২ মাস দিনরাত ২৪ ঘন্টা জেলা সদরের যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরী করে এক মাইলফলক স্থাপন করেছেন ফয়জুর রহমান বাদল। যে কাজের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারী বাজেট এনেছেন ১২৫ কোটি টাকা।
এই সকল চলমান উন্নয়নের প্রক্রিয়ার আরও একটি প্রকল্প সরকারী বরাদ্দের প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে রয়েছে। তা হলো নবীনগর হতে আশুগঞ্জ রাস্তা যা প্রী-একনেক এ পাস হয়ে আছে। আশা করা যাচ্ছে ইহা অতিদ্রুত একনেকের যে কোন সভায় অনুমোদন পাবে। ইহা পাস করে টেন্ডার করানোর জন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাদল। যার বাজেট ধরা আছে ৪৯৭ কোটি টাকা। ইহা সম্পন্ন হলে কৃষ্ণনগর, বড়াইল এবং বীরগাঁও ইউনিয়নবাসী অতি তাড়াতাড়ি ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এইরকম বরাদ্দ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সরকারী বরাদ্দের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ মসজিদ মন্দির, বাজার বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি নানাবিধ উন্নয়ন কার্য পরিচালনার জন্য ফয়জুর রহমান বাদলের মাধ্যমে সারে চার বৎসরে সম্পাদিত হয় প্রায় দুইশত সত্তর কোটি টাকার কাজ।
সেগুলোর ইউনিয়ন প্রতি অনুদান তুলে ধরা হলোঃ-
শিবপুর- ১১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৫ হাজার ৬শ’ ৩৮ টাকা, বিটঘর- ১৬ কোটি ৪৮ লক্ষ ৮১ হাজার ২শ’ ১৬ টাকা, নাটঘর- ১০ কোটি ১৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৪শ’ ৯২ টাকা, কাইতলা উত্তর- ১ কোটি ৫৮ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬শ’ ৪৭ টাকা, কাইতলা দক্ষিণ- ৫ কোটি ৩০ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬শ’ টাকা, বিদ্যাকুট- ৪ কোটি ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৫ টাকা, নবীনগর পূর্ব- ৯৫ লক্ষ ২৮ হাজার ৩শ’ ৬ টাকা, নবীনগর পশ্চিম- ২ কোটি ৭২ লক্ষ ৮১ হাজার ৩শ’ ৪ টাকা, শ্রীরামপুর- ৯ কোটি ২৩ লক্ষ ১০ হাজার ৩শ’ ৫ টাকা, বড়াইল- ১২ কোটি ৪১ লক্ষ ১৮ হাজার ৪শ’ ৯১ টাকা, কৃষ্ণনগর- ৬ কোটি ৫৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৩শ’ ৯ টাকা, বীরগাঁও- ৪ কোটি ১৫ লক্ষ ২০ হাজার ১শ’ ৬২ টাকা, শ্যামগ্রাম- ৪৬ কোটি ৮৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ৯শ’ ৫০ টাকা, রসুল্লাবাদ- ৬ কোটি ৯২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬শ’ ১৮ টাকা, রতনপুর- ১৬ কোটি ৬২ লক্ষ ২০ হাজার ২শ’ ৮২ টাকা, জিনদপুর- ১৪ কোটি ৪২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪শ’ ৫৮ টাকা, সাতমোড়া- ৪ কোটি ২১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬শ’ ৮৩ টাকা, ইব্রাহিমপুর- ২ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪২ হাজার ৫শ’ ৯ টাকা, সলিমগঞ্জ- ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ ২৮ হাজার ৯শ’ ১৭ টাকা, বড়িকান্দি- ১ কোটি ৫১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭শ’ ৮৭ টাকা। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে প্রতি ইউনিয়নে আলাদাভাবে সাড়ে ৪ বছরে বরাদ্দ দেন- ১৭ কোটি ৮৭ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬শ’ ৩২ টাকা। মসজিদ-মাদ্রাসা ও কবরস্থানে বরাদ্দ দেন- ২ কোটি ৮২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫শ’ ৩৩ টাকা। তৈরি করেছেন- মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, যার বরাদ্দ ছিল- ২ কোটি ১০ লাখ টাকা।
ফয়জুর রহমান বাদলের উন্নয়ন বাজেটে নবীনগর পৌরসভায় সাড়ে চার বৎসরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর প্রচেষ্টায় নবীনগর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সরকারীকরণ হয়েছে। চালু হয়েছে সরকারী কলেজে দুই বিষয়সহ অনার্স কোর্স। এডভোকেট জিকরুল আমেদ খোকন এমপি থাকাকালীন সময়ে নবীনগর হতে শিবপুর পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে ব্রীজসহ যে রাস্তা চালু করেন তাতেও ফয়জুর রহমান বাদলের প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত আর্থিক অনুদান ছিল।
ফয়জুর রহমান বাদল এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নবীনগর উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীর বিপুল সমর্থনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি’র উপস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদনের মাধ্যমে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। বাদলের উন্নয়নের কারণে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও সামান্য সমালোচনা করার সাহস পায় না। কারণ তারাও সত্যটা স্বীকার করে। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বিভিন্ন জায়গায় বাদলের কুৎসা রটায়। অবশ্য বাদলকে দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা খুবই আপন করে নিয়েছেন।
নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে ফয়জুর রহমান বাদল আপোষহীন। যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে যত নিকটস্থ আপন লোকের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিতেও বিন্দু পরিমান কার্পণ্য করেন নাই। মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবক, চাঁদাবাজ, মামলাবাজ এবং দুর্নীিিতবাজ এই প্রকৃতির লোকজনকে কঠোর হস্তে দমন করার ক্ষেত্রে বিন্দু পরিমাণ সময়ক্ষেপন করেন নাই। বাদলের ভিতরে প্রতিহিংসার রাজনীতির ছোঁয়াও নেই। ফয়জুর রহমান বাদলের সাড়ে চার বৎসর ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিরোধীদলের কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটাও থানায় মামলা হয়েছে বলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। নবীনগর উপজেলার এমন কোন ইউনিয়ন কিংবা গ্রামে একটা চাঁদাবাজি হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না। মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীর ব্যাপারে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন। তিনি প্রশাসনকে এমনও নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন- মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবী ধরা পরলে তার সুপারিশ করার জন্য উনার দলের যতবড় নেতাই সুপারিশ করতে আসুক না কেন আসামীর সাথে যেন সুপারিশকারীকেও আইনের আওতায় এনে সাজার ব্যবস্থা করেন।
কেন্দ্রীয় বা জাতীয় নেতা কিন্তু জন্ম নবীনগর উপজেলায়, করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নবীনগর নির্বাচনী আসন থেকে এমপি মনোনয়ন চাইবেন। সভা-সমাবেশ করছেন নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং গ্রামে।
নবীনগর উপজেলার সভা, সমাবেশ ও সেমিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সারা বাংলাদেশের নানা প্রকার উন্নয়নের গুণগান ফিরিস্তি গেয়ে মুখে ফেনা তুলছেন। কিন্তু একটি বারের জন্য একটি জনসভায়ও নবীনগর উপজেলায় বাদলকে ধন্যবাদ দিয়ে নবীনগর উপজেলার উন্নয়নের কথা একবারের জন্যও সাধারণ জনগণকে বলেন না। বাদলের উন্নয়ন মানে তো জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন, বাদলের উন্নয়ন মানে তো আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন। তাহলে কি আপনারা ভাবছেন- সত্য কথাগুলো বললে বাদল মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে যাবে? উন্নয়নের কথা তো আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন না সত্য, কিন্তু বিরোধী দলের দুই নির্বাচিত প্রতিনিধি বিভিন্ন সভা-সমবেশে গলা ফাটিয়ে বলেন- নবীনগরের উন্নয়নের প্রাণপুরুষ ফয়জুর রহমান বাদল। নবীনগরের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ফয়জুর রহমান বাদলকে আবারও এমপি নির্বাচিত করুন।
প্রিয় নেতৃবৃন্দকে বলছি, এমপি ফয়জুর রহমান বাদলের পূর্বে আরও ছয়জন এমপি হয়েছেন। এমন এমপি আছে চারবার নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি সপ্তাহে একবার কি দুইবার নবীনগর আসতেন শুধু কর্মীর বাচ্চার সাতদিনের দাওয়াত খাওয়ার জন্য, মুসলমানীর দাওয়াত খাওয়ার জন্য, ভাল আচরণ এবং গরীবের বন্ধুর রূপ দেখানোর জন্য, জমিতে কাজ করা অবস্থায় কাদা-মাটি মিশানো কৃষকের সাথে কোলাকুলি করার জন্য। কিন্তু লোক দেখানো ভালবাসাটা ছাড়া কি পেয়েছে নবীনগরবাসী বলতে পারেন কি?
বর্তমানে নবীনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় হাফ ডজনের উপরে হবে। যে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসবেন তার নির্বাচনই করবে নবীনগর উপজেলার আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকবৃন্দ। এটা বাদল হোক বা যে কেউ হোক। তাহলে বর্তমানে বিভিন্ন প্রার্থীগণের সভা সমাবেশে নৌকার এমপি’র উন্নয়নের কাজগুলো তুলে ধরতে এত ভয় বা কার্পণ্য কেন? ফয়জুর রহমান বাদল প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় নবীনগর উপজেলার মানুষের জীবন যাত্রার মানের আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছেন এটা তো সাধারণ জনগণ গলা ফাটিয়ে বলে বেড়ায়।
পরিশেষে বলবো, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ফয়জুর রহমান বাদল উনার সাড়ে ৪ বৎসরের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে যে কর্মকা- পরিচালনা করেছেন, তা নবীনগরবাসী অনন্তকাল সুখে-স্বাচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে। নিজের মানবিক গুণাবলী দ্বারা ধনী-গরীব সকল পেশার মানুষের শ্রদ্ধা-ভালবাসা যা অর্জন করার সবটুকুই উনি অর্জন করেছেন। এমপি নির্বাচিত হয়ে হাজার বছরের অবহেলিত নবীনগর উপজেলার নির্বাচিত এমপি’দের প্রতি জনগণের যে আস্থাহীনতা ছিল, উনার উন্নয়ন কর্মকা- দ্বারা রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ জনগণের আস্থা সৃষ্টি করেছেন। তিনিই একমাত্র নেতা, রাজনৈতিক নেতার মাঝে যে অনেক মানবিক গুণাবলী সন্নিবেশিত থাকে, দীর্ঘ সাড়ে ৪ বৎসরের উন্নয়ন কর্মকা- ও পরোপকারী মনোভাব দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছেন। সব নেতারই প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বি থাকেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কাউকে তিনি শত্রু মনে করেন নি। তিনি দুষ্টের দমন করে শিষ্টের লালন করেছেন। তিনি একজন ন্যায় বিচারক হিসেবে ন্যায় বিচারের স্বার্থে অপরাধীকে শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু কাউকে অত্যাচার করেন নি। সর্বোপরি তিনি ছিলেন ষ্পষ্টবাদী, পরোপকারী এবং ন্যায়-নীতির আদর্শের ধারক ও বাহক। তাই যতরকম মিথ্যে অপপ্রচারই উনার বিরুদ্ধে চালানো হোক না কেন, উনার উন্নয়ন কর্মকা-, সৎ সাহস, মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসা, আত্মসমালোচনা এবং কর্মীদের অন্যায় কর্ম হতে বিরত রাখা, সর্বোপরি একজন এমপি হিসেবে নয়, জনগণের একজন প্রকৃত নির্লোভ মানবদরদী বন্ধু হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছেন মানুষের মনে এবং অন্তরের খুবই গভীরে।
যদি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ফয়জুর রহমান বাদল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাও করেন, নবীনগর উপজেলায় নৌকা প্রতীক নিয়ে যত বড় মাপের নেতা কিংবা যত বড় বিত্তশালী-শিল্পপতিই নির্বাচন করতে আসুক না কেন, ফয়জুর রহমান বাদল এমপি’র ৫ বৎসরের উন্নয়ন কর্মকা-ের ফিরিস্তি না করে ভোট পাওয়ার প্রত্যাশা করাটা ‘উলু বনে মুক্তা ছড়ানো’র মতোই মনে হবে। তাছাড়া যে প্রার্থীই নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে আসুক, বাদল নির্বাচনী মাঠেন নেমে প্রচারণা না চালালে ভোট প্রত্যাশা করাটা ভুল হবে।
দলীয় নেতাকর্মীর নিকট বাদল এমপি কতটুকু মূল্যায়ন পায়, তা জানার প্রয়োজন নেই। কিন্তু নবীনগরের আওয়ামী লীগের মাঠের নেতা-কর্মী এবং আমজনতার উন্নয়নের প্রাণ পুরুষ হিসেবে ফয়জুর রহমান বাদলের নাম এখনও স্বীকৃত এবং ভবিষ্যতেও স্বীকৃত থাকবে। নবীনগর উপজেলার অসহায় মানুষের ভরসার জায়গা ফয়জুর রহমান বাদল। তাই সাধারণ, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের একান্ত কামনা আবারও ফয়জুর রহমান বাদলকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যেন প্রদান করেন। সবার একটাই প্রত্যাশাÑ ফয়জুর রহমান বাদল এমপি হলেই নবীনগর উপজেলাবাসী দীর্ঘদিনের আকাক্সিক্ষত গ্যাসের সংযোগ পাবে। গ্যাস সংযোগ হলে জ্বালানীর পাশাপাশি গড়ে উঠবে ব্যবসায়িক অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রায় সমাপ্তি টেনে এনেছেন ফয়জুর রহমান বাদল। শুধু নবীনগর উপজেলায় গ্যাসের সংযোগ হলেই পরিপূর্ণতা পাবে নবীনগরবাসী। যা ফয়জুর রহমান বাদল আর একবার এমপি না হলে প্রত্যাশা করাটা স্বপ্নের মতো মনে হয়। নবীনগরবাসীর দাবীÑ ফয়জুর রহমান বাদলকে আরেকবার নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে নবীনগরের অসমাপ্ত কাজগুলোর পরিসমাপ্তি টানার সুযোগ করে দেওয়ার। ফয়জুর রহমান বাদল ছাড়া নবীনগর উপজেলায় নৌকা প্রতীক নিয়ে যেই আসুক, নির্বাচিত হওয়াটা কষ্টদায়ক হবে। কারণ দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষের চাহিদা বাদল আবারও এমপি হোক। তাই নৌকার নিশ্চিত বিজয়ের জন্য ফয়জুর রহমান বাদলের বিকল্প নেই।
দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন ।