সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ অপরাহ্ন
মোঃ আশরাফ উদ্দিন, চট্রগ্রাম, সীতাকুণ্ড, কালের খবর : শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ পতনের আগ পর্যন্ত আধিপত্য বাদ শক্তির হাতে দেশকে তুলে দিতে মরিয়া ছিল বলে জানিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মো. শাহজাহান।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকালে সীতাকুণ্ড আলিয়া মাদ্রাসার হলরুমে আয়োজিত শিবিরের সাবেক দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সীতাকুণ্ড উপজেলার শিবিরের সাবেক সাথী ও সদস্যদের নিয়ে এ সম্মেলনের আয়োজন করে উপজেলা জামায়াত। এতে সহস্রাধিক সাবেক সাথী-সদস্য অংশ নেন।
এসময় মাওলানা মো. শাহজাহান বলেন, ৫৩ বছরের ইতিহাসে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কোন নেতা বা দায়িত্বশীল বাংলাদেশ বিরোধী, আধিপত্যবাদের পক্ষে কোন কথা বা বাক্য উচ্চারণ করেননি। বাংলাদেশের কোন ব্যক্তি এমন উদাহরণ দিতে পারবে না। অথচ যারা এদেশের জন্ম দিয়েছে বলে, এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে দাবি করে তাদের দলের অনেক নেতা, নেত্রীর অনেক বক্তব্য বাংলাদেশ বিরোধী আমরা বের করতে পারব। আধিপত্য বাদের পক্ষের তাদের পুরো রাজনীতি নিহীত ছিল। পতনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তারা আধিপত্য বাদ শক্তির হাতে প্রিয় মাতৃভূমিকে তুলে দিতে তৎপর ছিল। তাদের আমলে এই প্রিয় মাতৃভূমিকে ৭০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতো পাশের দেশ ভারত। তারা পুরোটাই তুলে দিত এই দেশটাকে ভারতের হাতে। এখনও সেই দেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই নতুন বাংলাদেশ শহীদদের রক্তের ফসল, মজলুমদের চোখের পানির ফসল। এতে আপনার আমার কোন কৃতিত্ব নাই, এই সকল কৃতিত্ব ওইসব শহীদদের যারা এই জমিনের জন্য রক্ত দিয়েছে, প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে। পরিবর্তিত এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে, শহীদদের মর্যাদা দিতে ছাত্রশিবিরের সাবেক দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে। অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমার মনে হয় দ্বীনকে বিজয়ী করতে এটি শেষ সুযোগ। আর আমরা যদি এই সুযোগকে কাজে না লাগাই তাহলে আর কখনও সময় পাব কিনা সন্দেহ। আমরা যদি এই সুযোগের খারাপ ব্যবহার করি, অন্যায় কাজে লাগাই, তাদের মতো হয়ে ওঠি। তাহলে মহান আল্লাহ আমাদের থেকেও এই সুযোগ তুলে নিবেন।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের জন্য আমাদেরকে সবকিছু ভুলে সংগঠনের জন্য কাজ করতে হবে। মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ শহীদ ভাইদের হাতে বিদেশে রাজকীয় জীবনযাপন করার অফার ছিল। আমরাও অনেকে তাদেরকে সেই পরামর্শ দিয়েছিলাম। তারা শুনেননি। শাহাদাতের জন্য যেই জীবন প্রস্তুুত সেই জীবন কারো পরামর্শ শুনে না। প্রিয় ভাইয়েরা আমাদেরকে দ্বীন কায়েম করতে হলে ইসলামী আন্দোলনে দুর্বার ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদেরকে মানোন্নয়ন করতে হবে। রুকনিয়াত নিয়ে শপথের পথে এগিয়ে যেতে হবে। বায়াত বিহীন মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু।
জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে প্রায় ২ দশক পর বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক দায়িত্বশীল (সাবেক সাথী ও সদস্য যারা রোকন নন) সম্মেলন করে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর আলাউদ্দিন সিকদার।
জেলা আমীর তার বক্তব্যে বলেন, ১১ শহীদের রক্তস্নাত এই সীতাকুণ্ডের ময়দান। এখানে অনেক রক্ত, ত্যাগ, তীতিক্ষা, শ্রম, ঘাম আমাদের। সুতারং কোন বাতিলের কাছে, চক্রান্তের কাছে, আধিপত্য বাদ শক্তির কাছে আমরা মাথা নোয়াব না, এই ময়দান ছেড়ে দিব না। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ সংগঠনকে জনগণের মাঝে এক অনন্য উচ্চ মাত্রায় নিয়ে গেছে। এ মাত্রা আরও অগ্রগতি করতে হবে আমাদের। আগামী দিনে ইসলাম কায়েমের জন্য আমাদের সংগঠনে মজবুতি অনিবার্য। এজন্য ফরজ কাজ ইসলামী আন্দোলনের সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে দ্বীন কায়েমের পথে অবিচল থাকতে হবে। পাশাপাশি আগামী দিনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সকল কিছু ভুলে গিয়ে জামায়াতের ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্যকে বিজয়ী করতে কাজ করতে হবে। ইসলামের স্বার্থে আমরা সব ভেদাভেদ, মান-অভিমান ভুলে সীমাবদ্ধতাগুলোকে ছাপিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীনকে বিজয়ী করতে। এজন্য আমাদেরকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
এতে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী, উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাজিদ চৌধুরী, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, নায়েবে আমীর রাশেদুজ্জামান মজুমদার, সেক্রেটারি আবু তাহের, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণের সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি কুতুব উদ্দিন শিবলী, মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক আবুল হোসেন, শিল্প ও বাণিজ্য এবং যুব ও ক্রীড়া বিভাগের সম্পাদক শামসুল হুদাসহ, শূরা সদস্য ও কর্ম পরিষদ সদস্য মিছবাহুল আলম রাসেল, মাওলানা নুরুল কবির, মিরসরাই জামায়াতের সাবেক আমী নুরুল করিম।