সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
কালের খবর, ফরিদপুর : ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলি এলাকার একটি বাসা থেকে সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের এক শিক্ষিকা ও সোনালি ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। শিক্ষিকার লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় এবং ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষিকার স্বামী মটর পার্টস ব্যাবসায়ী শেখ শহিদুল ইসলামকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
নিহত ওই কলেজ শিক্ষিকার নাম সাজিয়া বেগম (৩৬)। তিনি সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি দুই ছেলে নিয়ে এই বাসার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাদের বাড়ি রাজধানীর সুত্রাপুর থানার বানিয়া নগর। নিহত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম ফারুক হাসান (৩৮)। তার বাড়ি যশোরের শার্শায় হলেও থাকতেন রাজধানীর আগারগাও এলাকার ৩৮ নং বাসায়। তিনি সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে লিগ্যাল মেটারস ডিভিশনে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এই জোড়া খুন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। সঠিক কোনো উত্তর মিলছে না এখনো। তবে শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তার মাঝে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইন চার্জ এএফএম নাসিম বলেন, শিক্ষিকার লাশ দরজার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় এবং ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ফ্যানের হুকের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার বুকেও আঘাতের ক্ষত রয়েছে। ফ্ল্যাট থেকে রক্তমাখা চুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে নিহত শিক্ষিকা ও ব্যাংক কর্মকর্তার মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সেটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে আমরাও ভেবেছিলাম শিক্ষিকাকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা। কিন্তু বেশ কিছু আলামত থেকে এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না। দুইটিই হত্যা বলে মনে করছি। বাকীটা তদন্ত করে আর ময়না তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বুঝা যাবে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জনান, নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা নিজের পরিচয় গোপন রেখে এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগেই তিনি ওই বাসায় উঠেন।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শিক্ষিকার স্বামী শেখ শহিদুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। তবে তার কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া গেছে কিনা তা এখনই বলতে চাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের এর প্রস্তুতি চলছে।
সাজিয়ার স্বামী শেখ মো. শহিদুল ইসলাম ও ফুফু আফসারী আহমেদ জানান, অন্যান্য দিনের মত রোববারও যথারীতি কলেজে যান সাজিয়া। বিকাল চারটায় স্বামীর সাথে ফোনে কথা হলে সাজিয়া বাসায় ফিরছেন বলে জানান। এরপর থেকে আর ফোন রিসিভ করেননি তিনি। রাত এগারোটার দিকে ফারুক হাসানের ফ্ল্যাটে তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় এবং সাজিয়ার লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। উভয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বাড়ির মালিকের ছেলে ডেভিড হাসান জানান, বছর খানেক আগে এই বাসা ভাড়া নেন সাজিয়া। তিনি তার দুই সন্তান নিয়ে বাসায় থাকতেন। স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করার কারণে মাঝে মাঝে এখানে আসতেন। ঘটনার দিন তার স্বামী ফরিদপুরের বাসাতেই ছিলেন।
আর ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক ১ মাস আগে বাসা ভাড়া নিলেও দুই দিন আগে তিনি বাসায় এসে উঠেন।
এদিকে ফারুক হাসান সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুরের কোন শাখায় কর্মরত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ফরিদপুর প্রিন্সিপাল শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শামসুল হক। তিনি জানান, ফারুক হাসানের ছবি দেখে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি (ফারুক) সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে লিগ্যাল মেটারস ডিভিশনে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের শিক্ষিকার এমন নির্মম মৃত্যুতে শোক পালন করছে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান মাহামুদ জানান, একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার আজকের তারিখের সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, আমরা একাধিক সূত্র ধরে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করি খুব শিগগিরই সত্যটা কী তা জানাতে পারবো।
…………দৈনিক কালের খবর,