সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
মো: মোক্তার আহমেদ, কালের খবর :
সুপ্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগন এবং উপস্থিত সবাই আমার সালাম গ্রহণ করুন (আসসালামু আলাইকুম)। আধুনিক সভ্যতায় তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত ও হয়রানির শিকার এক জনপদের লাখো মানুষের পক্ষে আজ আমরা এক ‘সংগ্রামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা’ শুরু করছি।
‘ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন চাই’ এই দাবী আদায়ের লক্ষ্যে গঠিত সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে আজ ১৬ নভেম্বর শনিবার ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ ময়নামতির পবিত্র কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এই সংবাদ সম্মেলন। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে আমাদের আহ্বানে সারা দিয়ে আপনার এখানে উপস্থিত হয়েছেন। এজন্য সকলকে আন্তরিক
ধন্যবাদ।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত ‘ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন’ দাবিপূরণে ‘ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির’ আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ও ঘোষণা এবং কেন আমরা চার ইউনিয়নবাসী নতুন উপজেলা চাই এর বিদ্যমান যৌক্তিকতা তুলে ধরবো। আমরা প্রত্যাশা করছি আমাদের দাবীর যৌক্তিকতা
আপনার বহুল প্রচারিত গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করবেন।
সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুগণ, ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়ন সমন্বয়ে ‘ময়নামতি নামে উপজেলা বাস্তবায়ন চাই’। আমরা চার ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর দাবি বাস্তবায়নে আসুন সকলে একসঙ্গে এগিয়ে যাই। চারটি ইউনিয়নের মধ্যে জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় ‘ময়নামতি ও মোকাম ইউনিয়নকে’ আরো ‘একাধিক ইউনিয়নে বিভক্ত’ এবং ‘ময়নামতি ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রের কয়েকটি গ্রাম ও মহল্লার সমন্বয়ে পৌরসভা’ গঠনের বাস্তবতা বিদ্যমান রয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, উপজেলা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ একক। কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে একটি উপজেলা গঠিত হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৯৫ টি উপজেলা রয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের জুলাই মাসে পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে কক্সবাজার জেলায় ঈদগাঁও নামে নতুন উপজেলা গঠিত হয়। এটি দেশের ৪৯৫ তম উপজেলা। নতুন গঠিত এই ঈদগাঁও উপজেলার চেয়ে জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা আমাদের চার ইউনিয়নে বেশি। আরো কম ইউনিয়ন ও জনসংখ্যাসহ অন্যান্য সুবিধাদি আমাদের তুলনায় কম হওয়া সত্ত্বেও এমন বেশ ক’টি উপজেলা পরিষদ দেশে বাস্তবায়ন হয়েছে। তাই দেশের ৪৯৬ তম উপজেলা হউক ‘ময়নামতি’। এজন্য সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবীর যৌক্তিকতা তুলে ধরে তা আদায়ে সোচ্চার থাকবো। চার ইউনিয়নের অবহেলিত জনগনের পক্ষে গনমাধ্যমে দাবীর যৌক্তিকতা তুলে ধরতে জোড়ালো ভুমিকা রাখতে
অনুরোধ করছি।
সাংবাদিক বন্ধুগন, কেন নতুন উপজেলা জরুরি?
ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর ও ভারেল্লা দক্ষিণ বর্তমানে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার অন্তর্ভুক্ত
ইউনিয়ন। বুড়িচং উপজেলায় এই চার ইউনিয়নসহ মোট ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। ‘বুড়িচং উপজেলা সদর’ অপর পাঁচটি ইউনিয়নের ‘মধ্যবর্তী স্থানে’ অবস্থিত। ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর, ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়ন গোমতি নদী দ্বারা উপজেলার সাথে পুরোপুরি বিভক্ত। এই চার ইউনিয়নবাসী গোমতি নদীর সম্পূর্ণ পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এই চার ইউনিয়নবাসীকে জেলা সদর হয়ে গোমতি নদী পেরিয়ে আরো ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব
ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহার করে বিভিন্ন সেবার প্রয়োজন উপজেলা সদরে যেতে হয়। একসময় গোমতি নদী নৌকায় পাড় হয়ে বেবি টেক্সি করে উপজেলা সদরে যেতে হতো। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
জাতির বিবেক সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুগন,
ভৌগলিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ এলাকা থেকে তুলনামূলক ও অবকাঠামোগতভাবে পিছিয়ে থাকা জনপদ ‘বুড়িচং উপজেলা সদরে’ ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নবাসীর মতো ভোগান্তির নজীর বাংলাদেশে খুব কমই রয়েছে। দীর্ঘ ৫৫ বছর ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ এই চার ইউনিয়নবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই সময়ে চার ইউনিয়নবাসীর উপজেলা সদরে আসা যাওয়ায় বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক প্রাণহানি ঘটেছে। পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে অনেককেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে। উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুগন,
আমরা উল্লেখ করতে চাই যে, ১৯৭০ সালে পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র থানা হিসেবে বুড়িচং থানার যাত্রা শুরু। এরপর বুড়িচং থানার ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯৭৮ সালে ব্রাহ্মণপাড়া থানার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে বুড়িচং উপজেলার যাত্রা শুরু হয়। অথচ ময়নামতি বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। ময়নামতি প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন এর জন্য বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ‘ময়নামতি অঞ্চল’ দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার প্রাণকেন্দ্র ছিল। বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল ‘এই ময়নামতি অঞ্চল’। ময়নামতি অঞ্চল থেকে জেলা সদর কুমিল্লার দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ এই চার ইউনিয়নের সঙ্গে বুড়িচং উপজেলা সদরের দূরত্ব ‘ক্ষেত্রবিশেষে ৮ থেকে ৪০ কিলোমিটার’।প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগন,আমাদের চার ইউনিয়নের উপর দিয়ে দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক’, ‘চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-সিলেট’ মহাসড়ক রয়েছে। গোমতি নদীর পশ্চিমাংশে ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর,ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নের অবস্থান। অপরদিকে গোমতি নদীর পূর্বাংশে বুড়িচং উপজেলার বাকি পাঁচটি ইউনিয়নের অবস্থান। বাকি ‘পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যখানে বুড়িচং সদর ইউনিয়নে স্থাপিত ‘বুড়িচং উপজেলা পরিষদ’। এটিই প্রমাণ করে ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী ধরে বৈষম্য ও ভোগান্তির শিকার। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ এই চার ইউনিয়নবাসীর জন্য শুরু থেকেই দূরূহ ও কষ্টসাধ্য। ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক পটভূমি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষি, শিল্প, পর্যটন, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বসহ সার্বিক বিবেচনায় ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়ন সমন্বয়ে ‘নতুন উপজেলা’ প্রতিষ্ঠা এখন একটি জাজ্জ্বল্যমান বাস্তবতা।আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বুড়িচং থানা হিসেবে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে এবং পরবর্তীতে বুড়িচং উপজেলা হিসেবে যাত্রা শুরু করলে নানা ভোগান্তির কারণে ‘ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নবাসী’ আলাদা উপজেলা প্রতিষ্ঠার দাবী জানিয়ে আসছিলো। ময়নামতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আমির আলী ও প্রয়াত জহিরুল ইসলাম (জহির চেয়ারম্যান), মোকাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জুনাব আলী চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিভিন্ন ফেরামে এই দাবী জানিয়ে আসছিলো।
চার ইউনিয়নে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব, পেশাজীবি নেতৃত্ব, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ‘ময়নামতি উপজেলা’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার এবং আমাদের লড়াইয়ে একাত্ম।
এখানে আমরা উল্লেখ করতে চাই যে,
‘ময়নামতি উপজেলা’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আন্তরিকতা প্রকাশ করেছিলেন। ‘এখন ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়নের দাবিপূরণ নিশ্চিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যাত্রা শুরু হল। দলমত নির্বিশেষে চার ইউনিয়নবাসীর পক্ষে ‘ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি’ উপজেলা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক কর্মসূচি নিয়ে আগামীর পথে
এগিয়ে যাবে-ইনশাআল্লাহ।”
প্রিয় ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নবাসী, ‘আসুন একসঙ্গে ‘ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন চাই’ এবং দাবী আদায়ে গঠিত কমিটির সকল কর্মসূচি সফল করি। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সকলকে আবারো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সহায় হোন। আমিন।প্রকৌশলী মো: আব্দুল মুনতাকিম এডভোকেট দিদারুল আলম দিদার আহবায়ক, সয়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি।সদস্য সচিব, ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি