শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ অপরাহ্ন
রত্না আহমেদ ফারুক, নবীনগর, (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিবেদক, কালের খবর :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে মেঘনা নদীতে অবাধে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ। এরই মধ্যে শনিবার রাতে বাঁধের ৫০ ফুট এলাকায় দেখা দিয়েছে আকস্মিক ভাঙন। এতে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙন থেকে রক্ষায় ২০১৮ সালে সোনা বালুয়া-ধরাভাঙা ঘাট থেকে এমপি টিলা পর্যন্ত ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। কিন্তু শনিবার রাতে বাঁধের এমপি টিলা এলাকায় ৫০ ফুটের মতো অংশ আকস্মিকভাবে নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। এজন্য অবাধে বালু তোলাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী জানায়, নদীর জাফরাবাদ মৌজায় নতুন চর এলাকার মেঘনা নদীতে ৩২ একর দীর্ঘ একটি সুনির্দিষ্ট সীমানার বালুমহাল ইজার দেয় জেলা প্রশাসন। বার্ষিক ৯ কোটি টাকার বিনিময়ে বালুমহাল ইজারা পায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শোভনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মুন্সি এন্টারপ্রাইজ।
কিন্তু ইজারার শর্ত অনুয়ায়ী সর্বোচ্চ ২০টি ড্রেজারের মাধ্যমে সকাল-সন্ধ্যা বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও, ইজারাদারের লোকজন নদীতে প্রতিদিন ৫০-৬০টি ড্রেজার লাগিয়ে সীমানা অতিক্রম করে গত ৪-৫ মাস ধরে দিনে-রাতে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করছেন।
অতিরিক্ত ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করায় বর্তমানে নদী তীরবর্তী সোনাবালুয়া ঘাট, ধরাভাঙা নৌকা ঘাট, এমপি টিলা ঘাট, নূরজাহানপুর গ্রাম ও ঈদগাহ, নদী তীররবর্তী কবরস্থানসহ নদী পাড়ের গ্রামগুলো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় স্থানীয়রা আগামী মাসে হতে যাওয়া বালুমহালের নতুন দরপত্র বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যাপক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘এই বালুমহাল এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নিয়মনীতি ভঙ্গ করে প্রতিদিন ৬০-৭০টি ড্রেজার লাগিয়ে দিনে-রাতে সামনে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার কারণে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো যেকোনো সময় চরম ভাঙনের কবলে পড়বে। যার আলামত গতকাল রাতে কিছুটা আমরা দেখলাম।
জানতে চাইলে ইজারাদার শাহাদৎ হোসেন শোভন জানান, বালু উত্তোলনের সময় সরকারের নিয়মনীতিকে সামান্যতমও লঙ্ঘন করা হচ্ছে না। আমরা ৩২ একরের বাইরে এক চুল পরিমাণও যাচ্ছি না।’
তবে ড্রেজারের সংখ্যার সত্যতা কিছুটা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে এই বালু ব্যবসায় শতাধিক পার্টনার রয়েছে। এজন্য ব্যবহারের সর্বোচ্চ ২০টি সংখ্যা আমি হয়তো সব সময় রক্ষা করতে পারছি না।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই ছাত্র লীগ নেতা বলেন, ‘এই বালু ব্যবসা করতে গিয়ে প্রায় বাঘা বাঘা লোকজনকেই আমাকে “সুযোগ-সুবিধা” দিতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে যাদেরকে চাহিদার তুলনায় সুযোগ-সুবিধা ও চাহিদা মোতাবেক মোটা অঙ্ক দিতে পারিনাই, তারাই মূলত মানববন্ধনসহ নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বালুমহাল এলাকায় শর্তের বাইরে অতিরিক্তি ড্রেজার মেশিন পাওয়া যাওয়ায় ইতোমধ্যে ইজারাদারের ৯ জন লোককে জেল জরিমানাও করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে কেন বালুমহাল এলাকায় হঠাৎ ধস নামল, সেটি তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে ইতোমধ্যে নবীনগরের ইউএনওকে নির্দেশ দিয়েছি। আর বালুমহাল ইজারা বন্ধ করার এখন আর তেমন কোনো সুযোগ নেই। কারণ ইতোমধ্যে বালুমহাল ইজারার দরপত্র ডাকা হয়ে গেছে।