রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক,কালের খবর :
হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে সতীর্থদের কাঁধে চেপে শিহান মাদুশনকা নিজেই শুধু মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেন না, সঙ্গে যেন ম্যাচ থেকে বের করে নিয়ে গেলেন বাংলাদেশকেও। কারণ নিজের দ্বিতীয় ওভারে এই লঙ্কান পেসারের হানা জোড়া আঘাত শুরুতেই স্বাগতিকদের ২১১ রানের লক্ষ্য তাড়ার শক্তি একরকম শুষে নিয়েছিল।
শুষে যে নিয়েছিল, ম্যাচের শেষে সেটিও প্রমাণিত। ২২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ম্যাচ জেতার বদলে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা হয়ে গেল মান বাঁচানোর লড়াই। যে লড়াইয়ে তেমন কোনো সঙ্গী না পাওয়া অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহকে বেশ খানিকক্ষণ চালিয়ে যেতে হলো নিঃসঙ্গ লড়াই। ৩১ বলে ৪ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় খেলা তাঁর ৪১ রানের ইনিংসটি হারের ব্যবধানও কমাতে পারল যথেষ্টই। বিশাল রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৭৫ রানের হার তো অন্তত শতাধিক রানে হারার চেয়ে অবশ্যই সম্মানজনক!
অথচ ত্রিদেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট থেকে শুরু করে টেস্ট সিরিজ হয়ে ঢাকায় সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি, সব হারানো বাংলাদেশ দলের সিলেটে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যাওয়ার সঙ্গে কিছুটা সম্মান পুনরুদ্ধারের ব্যাপারও জড়িয়ে ছিল। কিন্তু সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে যা হলো, তা ঢাকার চেয়েও খারাপ। ঢাকায় তবু ব্যাটিংটা ভালো হয়েছিল। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান করেও বাজে বোলিংয়ে মাসুল দিতে হয়েছিল। কিন্তু সিলেটে তো ঠিকঠাক হলো না কিছুই।
এবারও ক্যাচ পড়তে থাকল, বোলাররা দেদার রান বিলাতে থাকলেন। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম (অপু) আবারও উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে থাকলেন। এবার কোনো উইকেট পেলেন না, কিন্তু দুই শ ছাড়ানো ইনিংসে লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা তাঁর ৪ ওভারের তিনটিতে বাউন্ডারি মারতে পারেননি একটিও! তাঁকে সমীহ করে খেলা কুশল মেন্ডিস অন্যদের ওপর ঠিকই চড়াও হয়েছেন, করেছেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি (৬ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৪২ বলে ৭০ রান)। বল থেমে আসতে থাকা উইকেটে অতটা স্বচ্ছন্দ না হলেও দানুস্কা গুনাথিলকা (৩৭ বলে ৪২) কাজের কাজ ঠিকই করে দিয়ে গেলেন। ওপেনিংয়েই ৯৮ রানের পার্টনারশিপে ম্যাচের লাগাম ধরিয়ে দিয়ে গেলেন সফরকারীদের।
এমন শুরু কাজে লাগিয়ে থিসারা পেরেরা (১৭ বলে ৩১), উপুল থারাঙ্গা (১৩ বলে ২৫) ও দাসুন শনাকাদের (১১ বলে ৩০*) খুব বড় কিছু করার দরকারও ছিল না। তবে লঙ্কানদের রান তাড়ায় ‘বড়’ কিছু করতেই হতো স্বাগতিক দলের একাধিক ব্যাটসম্যানের। প্রথম ওভারেই তামিমের মারা ছক্কার পর অবশ্য বড় হারে লক্ষণ দেখা যেতে শুরু করল। আকিলা ধনাঞ্জয়ার করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম তিনটি বল ডট যাওয়াটা যেন সইতেই পারছিলেন না প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ফিফটি করা সৌম্য সরকার। তাই ওয়াইড বল তাড়া করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন খালি হাতে। এরপরই মাদুশনকার সেই ওভার। আগের বলেই থার্ডম্যান দিয়ে ছক্কা মারার পর টাইমিংয়ের গড়বড়ে মিড অনে ক্যাচ মুশফিকুর রহিম। ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটের কানা নিয়ে ক্যাচ সেই একই জায়গায়। ম্যাচে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ব্যাপারটিও যেন সেখানেই সারা হয়ে যায়।
বিশেষ করে পার্থক্যটা গড়া হয়ে যায় পাওয়ার প্লেতে (প্রথম ৬ ওভার)। ওই সময়ে শ্রীলঙ্কা যেখানে বিনা উইকেটে তুলেছিল ৬৬ রান, সেখানে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৪০ রান। ওই সময়ের পর ফিল্ডিং আঁটোসাঁটো হলে রান তোলা কিছুটা কঠিন হয় এবং বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে এর প্রভাবও ছিল। লঙ্কানরা ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৯১ রান তুলে ফেললেও পাওয়ার প্লে’র পর দ্রুতই তামিম ইকবাল (দুটো করে বাউন্ডারি ও ছক্কায় ২৩ বলে ২৯ রান) এবং আরিফুল হককেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই ১০ ওভারে ৭৯ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারানো স্বাগতিকদের হারের ব্যবধান কমানো ছাড়া করার ছিল না আর কিছুই। রান আউট হওয়ার আগে সেই কাজটি করে গেছেন ‘স্টপগ্যাপ’ অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহই। তাই টি-টোয়েন্টি এখনো অমীমাংসিত রহস্যই রয়ে গেল বাংলাদেশের কাছে। অথচ টেস্ট ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিস কিনা এক বছর পর এই ফরম্যাটে ফিরেই টানা দুই ফিফটিতে আবারও ম্যাচের সেরা। সুবাদে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও!
কালের খবর/১৯/২/১৮