বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে অনিয়মের মহোৎসব। কালের খবর ইপিজেড থানা কমিউনিটি পুলিশিং এর উদ্যোগে আইন শৃঙ্খলা ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর শাহজাদপুরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উড়ে গেল সি লাইন বাসের ছাদ, ১জন নিহত। কালের খবর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণার আত্মহত্যা। কালের খবর
চনপাড়ার ‘অপরাধ জগতের সম্রাট’ বজলু বাহিনীর প্রধান বজলু গ্রেফতার। কালের খবর

চনপাড়ার ‘অপরাধ জগতের সম্রাট’ বজলু বাহিনীর প্রধান বজলু গ্রেফতার। কালের খবর

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের (চনপাড়া বস্তি) অঘোষিত ‘রাজা’ বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বারকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার বিকাল ৪টায় চনপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আলোচিত বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা খোঁজা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ২৮ সেপ্টেম্বর র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলা এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা এক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফারদিন হত্যার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সে বিষয়েও আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।

এর আগে ১০ নভেম্বর রাতে মাদক ও হত্যাসহ ২৩ মামলার আসামি শাহীন মিয়া ওরফে সিটি শাহীন র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। শাহীন ছিল বজলুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর চনপাড়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে বজলু ও তার সহযোগীরা র‌্যাবের ওপর আক্রমণ চালায়। এ ঘটনায় মামলা হলে ১০ নভেম্বর র‌্যাব ফের চনপাড়ায় অভিযান চালায়। এ সময় সিটি শাহীনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন অস্ত্রধারী র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব পালটা গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হন শাহীন।

বজলু বাহিনীর অপকর্ম নিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : “সবাই যেখানে অসহায়/সন্ত্রাসের জনপদ চনপাড়ার অঘোষিত ‘রাজা’ বজলু”। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ এলাকার সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। চনপাড়ার অস্ত্র ব্যবসা, প্লট বাণিজ্য, নৌকার ঘাট, বাজার, পরিবহণ, জুয়া এবং সালিশি বৈঠকসহ চনপাড়ার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণই বজলুর হাতে। বজলুর নেতৃত্বে চনপাড়ায় চলছে ত্রাসের রাজত্ব। তার আছে অস্ত্রধারী বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রয়োজনে যাকে-তাকে অপহরণ করে আনা হয় তার ডেরায়। টর্চার সেলে রেখে করা হয় অমানুষিক নির্যাতন। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলে না। কারণ, ভুক্তভোগীদের মতে, বজলুই চনপাড়া এলাকার অঘোষিত রাজা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্ত্র ও খুনের মামলায় একসময়ের জেলখাটা বজলু সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন। অবৈধ টাকার জোরে তিনি স্থানীয় কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটিও হাতিয়ে নেন। হন ইউপি সদস্য।

জানা যায়, চনপাড়ায় মাদকের স্পট একশর বেশি। বজলুর ছত্রছায়ায় সেখানকার মাদক ব্যবসা চলছিল কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। প্রতিটি সিন্ডিকেটের একটি বা দুটি করে ওয়াচ পার্টি থাকে। এদের কাজ হচ্ছে পোশাকে বা সাদা পোশাকের পুলিশ-র‌্যাব দেখলেই সতর্ক করা। ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মদ, গাঁজা বিক্রির জন্য পৃথক সিন্ডিকেট আছে বজলু বাহিনীর। কেউ কারও ব্যবসায় নাক গলাবে না-এটাই বজলুর অলিখিত নিয়ম। ব্যতিক্রম ঘটলেই চলত হামলা-নির্যাতন। সংঘর্ষ এবং খুনাখুনির ঘটনাও ঘটত মাঝেমধ্যে। চনপাড়ায় জুয়ার স্পট রয়েছে ২৫টির বেশি। অত্যাধুনিক অস্ত্র বেচাকেনা এবং ভাড়া দেওয়া হয় এই বস্তি থেকে।

স্থানীয় হারুন অর রশীদ মিয়াজি জানান, চনপাড়ার গাজী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেতুবন্ধ এলাকায় বজলুর রহমানের দুটি টর্চার সেল আছে। তার দেহরক্ষীরা জোর করে মানুষকে তুলে নিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করতেন। তিনি বলেন, কেউ চাঁদা না দিলে বাড়িঘরে হামলা চালাতেন বজলুরের ক্যাডাররা। হারুন অর রশীদ মিয়াজি আরও বলেন, কেউ বজলুর কথা না শুনলে তাকে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়া হয়। মাস দুয়েক আগে শাকিল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীকে ১৩০০ ইয়াবা ও ২০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে পুলিশে দিয়েছে।

জানা যায়, তিন বছর আগেও চনপাড়ার ‘নিয়ন্ত্রক’ ছিলেন দুজন। একজন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য বিউটি আক্তার ওরফে কুট্টি এবং অন্যজন ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিউটির স্বামী এমএ হাসান এবং ২০১৯ সালের জুনে বিউটি খুন হলে বদলে যায় পরিস্থিতি। চনপাড়ার একক ‘নিয়ন্ত্রণ’ চলে আসে বজলুর কাছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যারাই চনপাড়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছে, তারাই হত্যার শিকার হয়েছে। কুট্টি এবং হাসান ছাড়াও আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে চান মিয়া, ফিরোজ সরকার, ফারুক মিয়া, পুলিশের এএসআই হানিফ মিয়া, ফালান মিয়া, আব্দুর রহমান, খোরশেদ মিয়া, মনির হোসেন, আসলাম হোসেন, আনোয়ার, সজল ও সামসু হত্যা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বজলু সব সময় চলাফেরা করতেন তিনজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। তার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আছে জয়নাল আবেদীন, রাজু আহমেদ রাজা, রায়হান, ইউসুফ, সাদ্দাম হোসেন ওরফে স্বপন, সায়েম, নাজমা, রিপন, শাওন, রেহান মিয়া, জাকির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শাহীন, হাসান, মিজু, রাজা, রায়হান, রুমা প্রমুখ।

সূত্র আরও জানায়, ২০০৩ সালে রূপগঞ্জের সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে ঝাড়ু-জুতা মিছিল করে আলোচনায় আসে বজলু। ২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় গ্রেফতার হন তিনি। ওই সময় তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা ছিল।

গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন বুয়েট ছাত্র ফারদিন। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। র‌্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের তদন্তে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বজলুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রায়হান বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন ফারদিন। এটা সত্য হলে ফারদিন খুনের সঙ্গে বজলুর সংশ্লিষ্টতা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে বজলুর সংশ্লিষ্টতা আমরা খতিয়ে দেখব।

এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, ফারদিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে রুবেল ও স্বপন নামে দুই লেগুনাচালকসহ অন্তত চারজনকে খুঁজছে তারা। কারণ, ঘটনার দিন রাত সোয়া ২টার দিকে ফারদিনকে যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় তুলেন সাদা টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি। তিনিও লেগুনাচালক। নিজের লেগুনায় না তুলে ফারদিনকে তুলেছেন অন্যের লেগুনায়। লেগুনাটির গন্তব্য ছিল যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের তারাবর দিকে। শুক্রবার একাধিকবার যোগাযোগ করেও ফারদিন হত্যার বিষয়ে ডিবি থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com