গতকাল সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত থেকে চুরি ডাকাতি রোধ করতে গ্রামের মোড়ে মোড়ে ও সড়কে রাত জেগে পালা বদল করে পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামের সচেতন যুবকেরা। এর আগে গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে একটি বাড়িতে চুরির চেষ্টা চালায় চোরচক্র। বাড়ির গৃহবধূ শাহিনুর আক্তার (২৮) জানান, শনিবার মধ্যরাতে ঘর থেকে বের হলে বাড়িতে অপরিচিত কাউকে দ্রুতগতিতে হেঁটে যেতে দেখেন। তিনি ভয়ে ঘরে গিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তার ঘরের জানালায় কেউ একজন ধাক্কা মারেন। এই খবর মুঠোফোনে তিনি তার দেবর উজ্জ্বলকে (২২) জানালে বাড়িতে আতঙ্ক দেখা দেয়। চোর তৎক্ষণাৎ দৌড়ে পালিয়ে যায়। শাহিনুর বলেন, ঘনঘন লোডশেডিং থাকায় চুরির উপদ্রব বেশি হচ্ছে। এরই বদৌলত যুবকেরা রাতে পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিলঘর বাজারের মুদি দোকানদার বাবুল মিয়া (৪৭) নামক এক ভুক্তভোগী জানান, গত ২১ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ২টায় তার দোকান এবং গোডাউনের মোট ১২টি তালা ভেঙ্গে তার মালামাল চুরি করা হয়। এসময় তার দোকানে থাকা কসমেটিকস জাতীয় সকল দ্রব্য, ১৯টি লেকটোজেন-১, ২ব্যারেল সয়াবিন তেল, ৩টি চালের বস্তা, ১টি মসুর ডালের বস্তা, ১টি আটার বস্তা, ১টি লবণের বস্তা, ৩টি চিনির বস্তা, ১টি চিড়ার বস্তা, ২৫টি এলপি গ্যাসসহ আরো বিভিন্ন সামগ্রী মিলে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় চোরেরা।
একই রাতে, উক্ত বাজারের মাইক ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মোঃ সুমন মিয়ার (২৫) দোকানেও চুরি হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোঃ সুমন মিয়া জানান, প্রতিদিনের মতো সেদিনও (২১ আগস্ট) দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাই। সকালে এসে দেখি আমার দোকানের তালা ভেঙ্গে ১২টি ঢাকনাসহ ডেগচি, ৩টি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৪টি ব্যাটারি, ১টি মিক্সিং মেশিনসহ মোট দেড় লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করা হয়। এ ব্যাপারে সুমন মিয়া বাদী হয়ে কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
কাতার প্রবাসী মোঃ জাহাঙ্গীর সরকার জানান, বিলঘর গ্রামটি রানীয়ারা-বিষ্ণপুর নির্জন রাস্তার সাথে মিলিত হওয়ার কারণে অন্যান্য গ্রামের তুলনায় এ গ্রামে চোরের আনাগোনা তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামবাসী চোরের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, চোরচক্র ঘরে হামলা করে যুবতী মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট করছে। এ নিয়ে আমরা অত্যাধিক পেরেশানি ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ব্যাপারে তিনি প্রশাসন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের এমপি মাননীয় আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ ব্যাপারে অবগত আছেন। তাই তাদের নিকট আমরা নিরাপত্তার দাবি করছি। তিনি আরো বলেন, প্রায় প্রতিদিনই চোরেরা এ এলাকায় হানা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সুযোগ বুঝে টার্গেট করা বাড়িতে চুরি করতে হানা দিচ্ছে। এতে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চুরির ঘটনায় তেমন কোনো প্রতিকার না পাওয়ার কারণে চোরদের বাড় এতটা বাড়তে পেরেছে। তারা দাবি করছেন, পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযানে ব্যস্ত। তদুপরি, সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের ধরপাকড়ের অভিযান তো আছেই। ফলে, পুলিশ এসব ব্যাপারে কান দেয়ার সময় পাচ্ছে না। এই সুযোগে চোরেরা অধিকতর সক্রিয় ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এটা মলমপার্টির দুষ্কৃতীকারীদের জন্যও একটি অভয়-অবস্থা তৈরি করে দিয়েছে। চুরি ডাকাতির ঘটনাসহ অন্যান্য দুষ্কর্মও তাই ক্রমাগত বাড়ছে। পক্ষান্তরে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্রয় লাভ ও সহযোগিতা পাওয়া অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক ধরনের অসহায়ত্ব ও হতাশা তাদের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে। এরকম পরিস্থিতি কোনো বিবেচনাতেই কাম্য হতে পারেনা।
মানুষের জানের নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। তারপরেই আছে মালের নিরাপত্তা। জানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা অনেক দিন ধরেই উধাও। গৃহে মালামালের নিরাপত্তাও এখন যেতে বসেছে। জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই নিরাপত্তা দেয়ার কথা। ডিউটির চাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এতই বিরক্ত ও ক্লান্ত যে, এক ধরনের নিরাসক্তি তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
গ্রামবাসীরা জানান, উল্লেখিত এলাকায় নিয়মিত পুলিশ টহল, চুরির মামলার দ্রুত তদন্ত ও বিচার করা প্রয়োজন। তারা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো চোরকে গ্রেফতার করার কিছুদিন পর তারা ছাড়া পেয়ে আবারও একই কাজ করছে। তাই পুলিশের কাছে চোরের যে তালিকা আছে সে অনুযায়ী গ্রেফতার এবং শাস্তির ব্যবস্থা করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গতকাল সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে জানান, রানীয়ারা বিষ্ণপুর হয়ে মাইজখারের দিকে যাওয়া রাস্তাটি ব্যবহার করেই চোরচক্রটি বিলঘর গ্রামে হানা দিচ্ছে। বিশেষ করে বিলের মাঝখানের উঁচু ব্রিজের আশেপাশের এলাকায় বখাটে ছেলেদের তথা চোর-ডাকাতের অবস্থান থাকতে পারে। এ বিষয়ে কসবা থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।