সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
হাফিজুর শেখ চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি, কালের খবর : যশোরের চৌগাছায় ভৈরব নদের পাড়ের মাটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে অবৈধভাবে ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়া থামছেই না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার নিষেধ করার পরও বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতেও ‘মাটি চুরি’ করে ট্রাক-ট্রলি ভরে নিয়ে গেছে চক্রটির সদস্যরা। এদিকে চক্রটির মূলহোতা পাতিবিলা গ্রামের বাসিন্দা ও পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ক্ষমতার উৎস কোথায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
কৃষকদের অনুমতি ছাড়াই ভৈরব পাড়ের মাটি কেটে ফসলী জমির ওপর দিয়ে ট্রাক্টরের ট্রলি ও ড্রামট্রাকে করে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে চক্রটি। এতে একদিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে ভৈরব খননকরে জলাধার সৃষ্টির সরকারি উদ্যোগ বিনষ্ট হচ্ছে।
নিয়ামতপুর, ইছাপুর, মুক্তদহ, রোস্তমপুর ও সাদিপুর গ্রামের কৃষকরা জানিয়েছেন, মাটি কেটে নেয়ার সময় তারা বলে আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছি। তা না হলে বারবার তোমরা বাধা দিয়েও কি আমাদের থামাতে পেরেছো?
বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে পাতিবিলা ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের মাটি কাটতে থাকেন চক্রটির সদস্যরা। রাতেই স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ইরুফা সুলতানার কাছে মুঠোফোনে অভিযোগ করে
অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে মুঠোফোনে মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তখন তারা সাদিপুরে মাটি কাটা বন্ধ করেন। তবে গভীর রাতে আবারো নিয়ামতপুর পালপাড়া থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে বলে মুঠোফোনে জানিয়েছেন গ্রামের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে রোস্তমপুর গ্রামের মাঠ থেকে মাটি কেটে নেয়ার সময় স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা মুঠোফোনে মাটি কাটা গ্রুপটির নেতা পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে নদের মাটি কাটা থেকে নিবৃত করেন। সেসময় তিনি ভবিষ্যতে যেন আর মাটি কেটে না নেয়া হয় সে বিষয়েও সতর্ক করেছিলেন। তবে সে আদেশের পর একদিন বন্ধ রেখে আবারো স্থান পরির্তন করে মাটি কাটা শুরু করে মাটি খেকো দূর্বৃত্তরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে চক্রটি। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয়েছে। তবুও থামেনি তাদের এই অপকর্ম। নিয়ামতপুরের শহরের ইছাপুর মাঠের মুক্তদাহ মোড় থেকে মাটি কাটা শুরু করে। এরপর কাটে রোস্তমপুর গ্রাম থেকে। বৃহস্পতিবার কাটতে শুরু করে সাদিপুর গ্রাম থেকে। একই দিন গভীর রাতে আবারো কেটে নেয় নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে।
চৌগাছা থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চৌগাছা থানা পুলিশ মুক্তদহ মোড় থেকে কয়েকটি মাটি বোঝাই ড্রামট্রাক থানা হেফাজতে নেয়। থানায় তারা মুচলেকা দেন আর মাটি কাটবেন না। স্থানীয়রা বলছেন, বারবার প্রশাসন বাধা দিচ্ছে আর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর গ্রামের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, নদের পাড় থেকে রাতে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে নদে জলাধার সৃষ্টি ব্যহত হচ্ছে। বর্ষায় নদের পানি উপচে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে।
অন্যদিকে গভীর রাতে গ্রামের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে এসব গাড়িগুলো যাওয়ায় গাড়ির শব্দে মানুষের নানা অসুবিধা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এরআগে একবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক চালকের তিনমাস জেল দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, অভিযান চালালে দেখা যায় গরীব চালকরাই জেল-জরিমানার শিকার হয়। মূল হোতারা ধরা ছোয়ার বাইরেই থাকেন। একারণে এই অপকর্ম তারা থামায় না।
চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও চৌগাছা পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই সিদ্দিকের লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় আমার নাম-পরিচয় পর্যন্ত ব্যবহার করে।
চক্রটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আহবান জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পাতিবিলা গ্রামের এই সিদ্দিক স্থানীয় কিছু লোককে সাথে করে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রশাসন বারবার বাঁধা দেয়ার পরও সে কিভাবে মাটি ছিনতাই করার সাহস দেখায়। তার এত ক্ষমতার উৎস কোথায়?
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন, গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পাতিবিলা ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান লালের পক্ষে নির্বাচন করায় সিদ্দিককে দলের সব পদ-পদবী থেকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাচনে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সিদ্দিক আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ পাঠানোর পর তারা মাটি কাটা থেকে নিবৃত হয়। আগেও তাদের এভাবে মাটি নেয়া বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। তারা আর এভাবে মাটি কাটবেন না বলে কথা দিয়েছিলেন। তবুও অভিযোগ আসছে। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে।