শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সিরাজগঞ্জে খিরা চাষে লাভবান কৃষক, খিরা যাচ্ছে সারাদেশে। কালের খবর তীব্র গরমে পথচারীদের সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ফায়ার সার্ভিস। কালের খবর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে পশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। কালের খবর সমাজে “শান্তি স্থাপন ও সহিংসতা নিরসনে — সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর
রক্ষকই যখন ভক্ষক। কালের খবর

রক্ষকই যখন ভক্ষক। কালের খবর

সম্পাদকীয়, কালের খবর :

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন। তবে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে দ্রুততম সময়ে ব্যাপক অবনতি কিছু মাত্রায় রোধ করা সম্ভব। জনবহুল দেশ হলেও বাংলাদেশ এখনো শিল্পায়নের দিক থেকে পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে। পরিবেশগত দিক থেকে এটি এক ধরনের সুবিধাজনক অবস্থান।

এক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষ ভূমিকা প্রত্যাশিত। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত একটি সংবাদে পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত এক সরকারি কর্মকর্তার অনিয়মের যে খবর জানা গেল তা গভীর উদ্বেগের। পরিবেশ রক্ষার নামে কুমিল্লায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন পরিবেশ ধ্বংসের কাজে সহায়তা করে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত  উপপরিচালক (ডিডি) শওকত আরা কলিসহ কর্মকর্তারা ঘুষের কারবারের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। টাকা দিলেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয় থেকে মিলছে যেকোনো ধরনের ছাড়পত্র। এইভাবে অনিয়ম ও ঘুষের বিনিময়ে অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটেরভাটা থেকে শুরু করে কারাখানা। আর এই কাজে উপপরিচালক শওকত আরা কলি ব্যবহার করেন নিজের স্বামীকে। ঘুষের লেনদেন হয় তার স্বামী লোকমান হোসেন সরকারের ব্যাংক হিসাবে। লোকমান হোসেন কুমিল্লার ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

বছরের পর বছর অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন এই দম্পতি।কুমিল্লা জেলা জুড়ে বছরের পর বছর ধরে অনুমোদনহীন ইটভাটা ও অবৈধ কলকারখানাগুলো চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে। আর এজন্য লেনদেন হয়েছে কোটি কোটি টাকা। একদিকে পাহাড় কাটা, জলাশয় ও পুকুর ভরাট এবং অবৈধ ইটভাটার দাপটে পুরো জেলার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শওকত আরা কলিসহ তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাগামহীন ঘুষ কারবার চলছে অনেকটাই প্রকাশ্যে। পরিবেশ রক্ষার এ কার্যালয় যেন ঘুষের হাটে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নীরবতার কারণে দখল-দূষণে কুমিল্লার প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন অনেকটাই বিপন্ন। গোমতী নদী ঘিরে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। নদীর শতাধিক স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার কোথাও নদীর বাঁধের ভেতরের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে মাটি কেটে ও বালু উত্তোলন করে বিকৃত করে ফেলা হচ্ছে নদীর দুইপাড় এবং চরের কৃষিজমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। কুমিল্লায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই দিন-রাতে এভাবে পাহাড় নিধন চলছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা এসব রোধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কুমিল্লার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা মহানগরীর ভেতরে পাঁচটি, দেবিদ্বার পৌরসভার ভেতরে দুটি, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভায় তিনটি, চান্দিনা পৌরসভায় দুটি এবং নাঙ্গলকোট পৌরসভায় দুটি অবৈধ ইটভাটাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে অনুমোদন ছাড়াই। কুমিল্লায় মোট ৩১৪টি ইটভাটা নিয়মিত ইট প্রস্তুত করছে। এসব ভাটার বেশিরভাগই পরিবেশের ক্ষতি করে ইট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও আইন অনুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন-পৌরসভা, উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান-জলাভূমি, কৃষিজমি, সংকটাপন্ন এলাকা এবং সড়কের পাশে কোনো ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টোপথে চলছে কুমিল্লার বেশিরভাগ ইটভাটা।

এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কুমিল্লার পরিবেশ অধিদপ্তরের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে অংশ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পরিবেশ দূষণ-সংক্রান্ত অপরাধগুলোর যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। অপরাধীদের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড এবং পরিবেশ দূষণকারী স্থাপনা-প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। সেবা প্রতিষ্ঠান নিজের কাজে স্বচ্ছতা না আনতে পারলে এ রকম অভিযোগ আসতেই থাকবে। কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে ও দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা করতে হবে পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতি-বৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com