শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যৌথ বাহিনীর অভিযান: থানচি-রুমা-রোয়াংছড়ি ভ্রমণে বারণ সাতক্ষীরার দেবহাটায় ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত পাঁচ। কালের খবর সাপাহারে রাতের অন্ধকারে ফলন্ত আম গাছ কাটল দূর্বৃত্তরা। কালের খবর বাঘারপাড়ায় হাঙ্গার প্রজেক্টের সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার’র মতবিনিময়। কালের খবর রায়পুরায় মরহুম ডাঃরোস্তাম আলীর ২৭ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ইফতার ও দোয়া মাহফিল। কালের খবর ভাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করতে রায়পুরাতে দোয়া ও ইফতার। কালের খবর রিয়াদে বাংলাদেশ প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের ইফতার মাহফিলে প্রবাসীদের মিলন মেলা। কালের খবর ঢাকা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবসে গুনীজনদের আলোচনা সভা সম্পন্ন। কালের খবর আরজেএফ’র উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। কালের খবর সাতক্ষীরার সুন্দরবন রেঞ্জে ২৪ জন হরিন শিকারীর আত্মসমর্পণ। কালের খবর
এই দিনেই মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। কালের খবর

এই দিনেই মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। কালের খবর

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস আজ। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

সেনাসমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকালে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা।

বেশ কয়েকটি মামলায় প্রায় ১০ মাস ২৫ দিন কারাবন্দি ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনাকে ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন সরকার কেন গ্রেফতার করেছিল তা বোধহয় এত বছরে বাংলাদেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।

কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘মাইনাস টু’ থিয়োরি বাস্তবায়নের জন্য দু’নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসলে এর উদ্দেশ্য ছিল ‘মাইনাস শেখ হাসিনা’ থিয়োরি। ওই সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে রাজনীতিশূন্য করা, দেশকে বিরাজনীতিকরণের দিকে নিয়ে যাওয়া। অতএব জনবিচ্ছিন্ন ওই সরকারের মূল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা, যে কারণে তাকে ১৬ জুলাই (২০০৭ সাল) গ্রেফতার করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা সেই সময় ইমিডিয়েট পাস্ট প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন না। ১৬ জুলাই দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গিয়েছিল। যে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১৬ জুলাইয়ের ৫৯ দিন পর।

এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করার আইনগত ব্যাখ্যা ছিল না। বঙ্গবন্ধুকন্যা সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূকে দেখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি জানতে পেরেছিলেন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।

আমরা জানি, এর আগে ৭ মে শেখ হাসিনা সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি ভালো করেই জানতেন দেশে এলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে, তারপরও তিনি আইনি মোকাবিলা করার জন্য দেশে ফিরে এসেছিলেন।

অবশেষে সব আইনি মোকাবিলা করার মাধ্যমে ২০০৮ সালের ১১ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্তি পান। তারপরও ষড়যন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকে। সুধীজনখ্যাত ওই সরকারের অনেক সমর্থক বিরুদ্ধ মন্তব্য করতে থাকে। তাতে বাংলাদেশের রাজনীতি অঙ্গনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় নেতারা রুখে দাঁড়ান।

২.

১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ১৩তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেই সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ কারণে সেই সময়কার সরকারের ভেতরে উদ্বেগের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। ১৯৮১ সালে জিয়া সরকার অনুগতদের দিয়ে ‘শেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি’ পর্যন্ত গঠন করিয়েছিল। এতটা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে পথ চলতে হয়েছে। ছয়টি বছর কাটাতে হয়েছে অত্যন্ত অসহায়ত্ব ও দুর্ভোগ নিয়ে।

শেখ হাসিনা ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষ করে যখন বাংলাদেশে ফেরেন, তখন দেশের পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা সবারই জানা আছে। ‘আওয়ামী লীগ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ উচ্চারণ করাটাও ছিল অপরাধের কাজ। কবিরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লিখে জেল খেটেছেন। এমনই শ্বাসরুদ্ধকর ছিল সে সময়কার পরিস্থিতি। মৃত মুজিবকে মোকাবিলা করার জন্য ৪ আগস্ট ১৯৭৬ ইতঃপূর্বে জারি করা রাজনৈতিক দলবিধি সংশোধন করা হয়। প্রথমে জারি হওয়া দলবিধিতে ছিল, ‘ক্ষতিকর কার্যকলাপে’ লিপ্ত কোনো সংগঠনকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না।

৪ আগস্টের সংশোধনীতে ক্ষতিকর কার্যকলাপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ১০টি উপ-দফার উল্লেখ করা হয়। ১০ নম্বর উপ-দফায় বলা হয়-‘কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি বা উৎসাহিত করিবার জন্য পরিকল্পিত হয় কিংবা এইরূপ শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি বা উৎসাহিত করিতে পারে বলিয়া সম্ভাবনা রহিয়াছে।’

শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন, ছোট বোন শেখ রেহানা তখন লন্ডনে। শেখ রেহানার বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর হবে, লেখাপড়া আর শেষ করতে পারেননি। ১৯৭৮ সালে লন্ডনে এক চাচার বাসায় তার বিয়ে হয়েছিল মা-বাবার মনোনীত পাত্র ড. শফিক সিদ্দিকীর সঙ্গে। একটা প্লেনের টিকিটের অভাবে শেখ হাসিনা সেই বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। সেরকম একটা সময়ে শেখ রেহানার পাসপোর্টের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দেওয়া হয়েছিল।

জিয়াউর রহমানের নির্দেশে সেই পাসপোর্ট শেখ রেহানাকে দেওয়া হয়নি। জানি না এখনকার সময়ে আওয়ামী লীগের পুরোনো-নতুন মিলিয়ে নেতারা সে সময়কার পরিস্থিতি কতখানি উপলব্ধি করতে পারছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক ম্যাগাজিনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বক্স-আইটেম হিসাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়-১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতা দখলকালে নিহত পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমনকি যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। তিনি বলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব কাজ অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বলে আমি বিবেচনা করি, তার মধ্যে থাকবে দেশের প্রত্যেক মানুষের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।’ নিজের কর্তব্য পালনে তার পিতার অবদান সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (বঙ্গবন্ধুর) প্রতি বাংলাদেশের জনগণের প্রীতি ও ভালোবাসা ছিল অপরিমিত’, ‘আমাকে (আওয়ামী লীগের) সভাপতি নির্বাচিত করে পরোক্ষভাবে তাকেই সম্মান দেখানো হয়েছে। আমি তার অসমাপ্ত কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পারব’ (নিউজউইক, ১১ মে ১৯৮১)।

একবার ভাবুন তো, ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন, ওইদিন রাতে তার থাকার জায়গা দলের নেতারা কি ঠিক করে রাখতে পেরেছিলেন? বঙ্গবন্ধুর এক নিকটাত্মীয় সাবেক যুগ্ম সচিব সৈয়দ হোসেনের লালমাটিয়ায় দুরুমের বাসায় ছিলেন। শেখ হাসিনা তার বাবার বাড়ি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। এমনকি মিলাদ পড়তে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে নিহত হন, তখন তার জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর জামাতা ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ও বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠা কন্যা শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। বিদেশে ছিলেন বলেই তারা রক্ষা পেয়েছিলেন।

আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনা খুবই দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আদর্শের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দৈন্য নেই। কারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছে তা-ই আমাদের দিকনিদের্শক। সেই পথ ধরেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মকাণ্ডকে সফল করে তুলব।’ দীর্ঘ ৪০ বছরে শেখ হাসিনার ক্রমাগত সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে পেয়েছি এক আত্মপ্রত্যয়ী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

৩.

শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। জননেত্রী, দেশরত্ন, ভাষাকন্যা ইত্যাদি নানা বিশেষণে তাকে ভূষিত করা হয়। পুরোনো দিনের মানুষ একান্ত নিজের মতো করে বলেন, ‘শেখের বেটি’। বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার জন্য কত ধরনের চেষ্টাই না করেছে। শেখ হাসিনাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি।

অনেকের মনে থাকার কথা, ১/১১-এর সরকারের সময় ঢাকা শহরের ২৫ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে স্বাক্ষর দিয়েছে। শেখ হাসিনা তার সততা ও দেশপ্রেমের জন্য স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তার কাছে কাজটাই বড়। দেশের জনহিতকর কাজ, জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ। আমজনতা নিশ্চিত করে বলতে পারে- শেখ হাসিনা আমাদের, শেখ হাসিনার কাজ আমাদের কাজ।

বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে উন্নত দেশের নেতারা অবাক হয়ে বলেন, মাননীয় শেখ হাসিনা, আপনি তো উন্নয়ন বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন। শেখ হাসিনার চিন্তায় একটা জীবন্ত রূপ আছে। যে মৌল প্রত্যয়গুলো নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন তা কোনোদিনই পরিবর্তিত হয়নি। কয়েকটি মূলসূত্রে এ প্রত্যয়গুলো বিধৃত। সূত্রগুলো হলো- মানবতায় বিশ্বাস, শান্তি, প্রীতি, ঐক্য ও সংহতিতে সমাজ-আদর্শের সন্ধান, সর্ববিধ নিপীড়ন ও সংকীর্ণতার বিরোধিতা। যে পথ সহজ-সরল, যে পথ কেন্দ্র থেকে বহুমুখী, সে পথকে একমাত্র পথ হিসাবে গণ্য করা।

আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কয়েকদিন পর নয়াদিল্লিতে এক সাংবাদিক-সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর রাজনীতিতে ফিরে আসাকে তিনি কীভাবে দেখছেন। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘রাজনীতি আমার রক্তে মেশানো। ছাত্রজীবনে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। পরবর্তীকালে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, এটা ঠিক নয়।

জন্মের পর থেকে আমি কর্মচঞ্চল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। আমার পুরো জীবনটাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতির জন্যই মা-বাবা, ভাই ও আত্মীয়স্বজন হারিয়েছি। আমি রাজনীতির সঙ্গেই আছি। নতুন করে রাজনীতিতে এসেছি বলতে পারেন না। নতুন করে রাজনীতিতে প্রবেশের প্রশ্ন ওঠে না।’

সুভাষ সিংহ রায় : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com