রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন
নাটোরের বড়াইগ্রামে বিনা বেগম (৫০) নামে এক ভণ্ড মহিলা কবিরাজের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন হাজারও মানুষ। এ ঘটনায় প্রতারণার স্বীকার লোকজনসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, বিনা বেগম দীর্ঘদিন যাবত সংসারে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, বন্ধ্যত্ব, পছন্দের মানুষকে পাইয়ে দেয়া, অবাধ্য সন্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনা, প্যারালাইসিসসহ নানাবিধ সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছিলেন। এ কাজে তার কাছে থাকা জিন তাকে সহযোগিতা করে বলে তিনি রোগীদের বোঝাতেন।
এসব ক্ষেত্রে তিনি প্রতারণার অংশ হিসেবে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে আসন বসান। এ সময় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যারা আসেন তাদের কারও বাড়িতে শত্রুতাবশত তাবিজ, কারও বাড়িতে শামুক বা গাছ পুঁতে রাখা আছে এবং এ কারণেই বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
একই সঙ্গে জিনের সাহায্যে এসব তাবিজ বা গাছ তুলে এনে সমস্যার সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এজন্য তিনি এক হাজার ৭৮০ টাকা ফি নেন। এরপর বাড়ি বন্ধ করার জন্য ৫০০ টাকা, তাবিজ দেয়ার জন্য ৩০০ টাকা এবং জনপ্রতি ২০ টাকা করে নজরানা ফি নেন। কিন্তু জিনের মাধ্যমে তাবিজ কবজ তুলে আনার গোপন রহস্য ফাঁস হওয়াসহ তার এসব তদবিরে কোনো কাজ না হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি চিকিৎসা নিতে যাওয়া উপজেলার খোকশা গ্রামের নাসরিন বেগম জানান, আমি একটি বিষয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম। চিকিৎসা হিসেবে টাকার বিনিময়ে আমাকে একটি তাবিজ দেন, কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় তাবিজ খুলে দেখি ভিতরে শুধু দুটি শিমুলের বিচি আছে।
দিঘলকান্দি গ্রামের শ্রাবন্তী খাতুন জানান, আমি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে লোকমুখে শুনে বিনা বেগমের কাছে চিকিৎসা নিতে যাই। এ সময় আমার বাড়িতে প্রতিপক্ষের পুঁতে রাখা তাবিজ তুলে দেয়া এবং আমার শরীর বন্ধ করার তাবিজ বাবদ মোট দুই হাজার ৮০ টাকা নেন। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় আমি তাবিজ খুলে দেখি তার ভিতরে কিছুই নেই, শুধু মোম দিয়ে আটকানো।
একই গ্রামের আজিজুল ইসলাম জানান, বিনা বেগমের চিকিৎসা পদ্ধতিতে আমার মনে সন্দেহ হলে আমি তার আসন পদ্ধতিটি গভীরভাবে খেয়াল করি। এ সময় দেখি যে, বিনা বেগম তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে লুকিয়ে রাখা একটি কৌটা থেকে তাবিজ, শামুক বা গাছের শিকড় উঠানে ছুঁড়ে দিচ্ছেন এবং এগুলো রোগীদের বাড়ি থেকে জিনে উঠিয়ে এনে ফেলছে বলে জানাচ্ছেন। তখন বিষয়টি আমি হাতেনাতে ধরে ফেললে বিনা বেগম টাকা ও সঙ্গে থাকা কৌটা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। আমার কাছে এ প্রতারণার পুরো ভিডিও ফুটেজ আছে।
এ ব্যাপারে সরেজমিন কথা বলার জন্য বিনা বেগমের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ সময় তার স্বামী লোকমান হোসেন জানান, প্রতারণার বিষয়টি সঠিক নয়, তবে ঘটনার পর থেকে আমি তাকে এ চিকিৎসা বন্ধ করতে বলেছি।
বড়াইগ্রাম থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, আমি মৌখিক অভিযোগ পেয়ে তাদের এ প্রতারণা বন্ধ করতে বলেছি। কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।