বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন
মাত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অবস্থায় শামীম ওসমান ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে পোস্টার লাগাতে গিয়ে পুলিশের বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছিলেন। ৭৮ সালে সরকারি তোলারাম কলেজের ভিপি থাকাকালীন সময়ে চাষাড়ায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গাড়িবহর আটকে দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর থেকেই জাতীয় রাজনীতির মাঠে বলিষ্ঠ নেতা হয়ে উঠেন শামীম ওসমান। ৮০’র দশকের প্রথমভাগে সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে তার রাজনৈতিক পথচলা শুরু। ৮১ সালে তিনি তোলারাম কলেজে ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও কাঁপিয়েছেন প্রভাবশালী এই নেতা। সেসময় স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণ করেন তিনি। দলীয় সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন শামীম ওসমান। ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সেসময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালিন সহ সভাপতি সিদ্ধিরগঞ্জের মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে। অজানা কারনে তা পরে বদল করে দেয়া হয় শামীম ওসমানকে। সেবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর দেশের সবচেয়ে আলোচিতদের মধ্যে ছিলেন শামীম ওসমান। প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে, গোলাম আযমসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে, নারায়ণগঞ্জের কয়েকশ’ বছরের কলঙ্ক টানবাজার পতিতাপল্লী উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন করে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়ার লং মার্চ আটকে দিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হন শামীম ওসমান। জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি একটি আসনের এমপি হয়েও জেলার অন্য ৪টি আসন শাসন করতেন। তার একেক অনুসারী ছিলেন একেক পাড়া মহল্লার কর্তা! এমনকি সরকার গঠনের পর আড়াইহাজারে উপ নির্বাচনে এমদাদুল হক ভুঁইয়াকে জেতানোর পেছনেও তার ভূমিকা ছিলো। গোটা ৫ বছর দাপিয়ে বেড়ানোর পর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকার গঠন করার পর শামীম ওসমান সহ তার অনুগতরা দেশ ছাড়েন। ওয়ান ইলেভেনের পর ৯ম সংসদ নির্বাচনে বিদেশে থাকা শামীম ওসমানকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। জয়লাভের পর দলটি সরকার গঠনের কিছু দিন পর দেশে ফেরেন শামীম ওসমান। এরপর কখনও তৎকালিন এমপি সারাহ বেগম কবরী, কখনও সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেন তিনি। ওই সময়ে কেউ কেউ মনে করতো, শামীম ওসমানের রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আইভীর কাছে লক্ষাধিক ভোটে হারার পর রাজনীতি অঙ্গনে তার পতনের কথাই বেশী শোনা যেতো। তবে ২০১৪ সালে ১০ম সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ থেকে শামীম ওসমানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সব ধারণা পাল্টে দেয়। সেই থেকে নানা বাধা বিপত্তি ওসমান পরিবারের আধিপত্য নতুন রূপ নেয়। নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সেভেন মার্ডার কিংবা মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যা নিয়ে সুশিল সমাজ বরাবরের মতোই আঙুল তোলেন ওসমানদের দিকে। তার মধ্যে শামীম ওসমানের নাম তাদের মুখে বেশি শোনা যায়। তাদের অভিযোগের পাল্টা জবাবও মিডিয়ায় বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিয়েছেন শামীম ওসমান। একটি নামকে ঘিরে বছরের পর বছর ধরে নানা আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। আর তা শুধু নারায়ণগঞ্জেই সিমাবদ্ধ ছিলোনা বরং সারাদেশের মানুষই শামীম ওসমানকে নিয়ে কথা বলতো। প্রভাবশালী এই সাংসদের সেই হুঙ্কার এখন আর দেখা যায় না। বরং যেকোন বিষয়ে হাতজোড় করে কাজ আদায় দেখা যায় তাকে। সম্প্রতি, ডিএনডি প্রকল্পের জন্য দূর্ভোগে পরা মানুষের কাছে দু’হাত জুড়ে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। এরপর করোনায় চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ডাক্তারদের কাছে হাত জোড় করেছেন। যুগের পরিক্রমায় প্রভাবশালী এই সাংসদের হুঙ্কার এখন হাতজোড়ে পরিণত হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন নগরীর সাধারণ মানুষ।