রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন
পাবনা প্রতিনিধি, কালের খবর :
পাবনা শহরে ভাড়া বাসায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের পালিত কন্যা খুন হয়েছেন তাঁদেরই ‘পালক পুত্রের’ হাতে। টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ওই তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পাবনা জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রোববার দুপুরে তানভীর হোসেন (২৫) নামের ওই তরুণ জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তাঁর বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। তিনি পাবনা ফায়ার সার্ভিস জামে মসজিদে ইমামতি করেন। গত শনিবার অভিযান চালিয়ে হরিপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তানভীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জব্বার (৬০), তাঁর স্ত্রী ছুম্মা খাতুন (৫০) ও পালিত কন্যা সানজিদা খাতুন (১৩) পাবনা শহরের ভাড়া বাসায় খুন হন। শুক্রবার সকালে ওই ভাড়া বাড়ির নিচতলা থেকে পচা গন্ধ বের হয়। দুপুরে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে নিজ ঘর থেকে রক্তাক্ত ও অর্ধগলিত অবস্থায় মা-বাবা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে। ঘরটিও তছনছ অবস্থায় দেখা যায়। আবদুল জব্বারের পৈতৃক বাড়ি সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর ইউনিয়নের পাইকারহাট গ্রামে। প্রাথমিকভাবে খুনের ঘটনাটি ডাকাতির কারণে হয়েছে বলে ধারণা করে পুলিশ। এ নিয়ে গত শনিবার প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম রোববার দুপুরে জেলা পুলিশ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই খুনের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত করা হয়। শনিবার অভিযান চালিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে নিহত দম্পতির পালিত পুত্র তানভীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে লুটে নেওয়া দুই লাখ বাংলাদেশি টাকা, এক লাখ ভারতীর রুপি, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও চারটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।
তানভীরের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, তানভীর মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি মহল্লায় মুদিদোকান চালাতেন। দোকানের মালামাল কিনতে গিয়েই ছুম্মা খাতুনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। প্রথমে তানভীর ছুম্মা খাতুনকে মা বলে ডাকতে থাকেন। এরপর আবদুল জব্বারকে বাবা ডাকতে শুরু করেন। এভাবেই তিনি নিঃসন্তান দম্পতির পালিত পুত্র হয়ে যান। পরিবারটির ব্যাংক লেনদেন, সঞ্চয় পত্রের টাকা উত্তোলন, চিকিৎসা, বাজার—সব কাজেই তিনি সহযোগিতা করতেন। পবিত্র রমজান মাসে পরিবারটির সঙ্গে থেকে সাহরি-ইফতার করেন তানভীর। এরপরই তিনি খুন ও লুটের পরিকল্পনা আঁটেন। তানভীর গত ২৫ মে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। ৩১ মে রাত ১০টার দিকে পাবনায় ওই দম্পতির বাড়িতে ওঠেন। রাতে সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়ে ঘুমাতে যান। রাত দুইটার দিকে তিনি প্রথমে আবদুল জব্বারের মাথায় কাঠের বাটাম দিয়ে আঘাত ও ছুরি দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর পাশের ঘরে গিয়ে ছুম্মা খাতুন ও সানজিদাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে ভোরে পালিয়ে যান তানভীর।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় নিহত আবদুল জব্বারের ভাই আবদুল কাদের খুনের মামলা করেছেন। ওই মামলায় তানভীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।