সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই-আগষ্টে শহীদদের ছাড়া আর কারো প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কালের খবর পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল কাসাভা। কালের খবর চবি এক্স স্টুডেন্টস ক্লাব ঢাকা এর সভাপতি ব্যারিস্টার ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক স্বপন নির্বাচিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পন্ন। কালের খবর সীতাকুণ্ড হবে বাংলাদেশের অন্যতম মডেল উপজেলা : আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী। কালের খবর মাটিরাঙ্গার গুমতিতে মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মুরাদনগরে সামাজিক সংগঠনের শীতের কম্বল বিতরণ। কালের খবর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ‘স্বাধীনতা সোপানে’ শ্রদ্ধা নিবেদন। কালের খবর জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন। কালের খবর
দখল-চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করে শতকোটি টাকার মালিক কাউন্সিলর হাসু। কালের খবর

দখল-চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করে শতকোটি টাকার মালিক কাউন্সিলর হাসু। কালের খবর

কালের খবর রিপোর্ট :
তিনি একজন কাউন্সিলর। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জানমালের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ভার তার কাঁধে। কিন্তু সেই ভারের ধার ধারেন না তিনি। উল্টো দখল-চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করে বাসিন্দাদের জন্য এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন নিজেই। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাশেম হাসু। ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকেই এলাকায় দখল-চাঁদাবাজির শুরু। তখন ছিলেন বিএনপির অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ট। সরকার পরিবর্তন হলে সখ্যতা গড়েন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে।

এক পর্যায়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। এরপর শুরু করেন সরকারি দলের পরিচয়ে দখল-চাঁদাবাজি। তার বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়। দল থেকে বহিস্কার হলেও থেমে থাকেনি হাসুর অপকর্ম। দ্বিতীয় দফা স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হওয়ার পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। নেশা হয়ে উঠে অন্যের জমি-সম্পত্তি দখল করা। গত কয়েক বছরে দখল, জালিয়াতি আর নানা অপকর্ম করে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ব্যবহার করেন তিনটি দামি গাড়ি।

কাউন্সিলল হাসুর বাবা ফজর আলী এক সময় জীবিকার তাগিদে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। হাসু এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছিল রিকশা চুরির অভিযোগ। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে হাসু এলাকায় এখন আতঙ্কের নাম। অভিযোগ আছে কাউন্সিলর হাসু ও তার ভাই অবৈধ দখলবাজি করে শ’ শ’ বিঘা জমি, একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট ও দোকানের মালিক হয়েছেন। তার দখলে শুধু সাধারণ মানুষের সম্পত্তি নয় রয়েছে সরকারি খাসজমিও। আদাবর থানা এলাকায় কেউ নতুন ভবন বা অন্য কোনো স্থাপনা তৈরি করতে হলে হাসুকে চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দোকান, অফিস, হাসপাতাল থেকে মাসিক চাঁদা তোলেন। চাঁদা না দিলে বা তাদের মতের বাইরে কেউ গেলে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। টর্চার সেলে নির্যাতন করে জোরপূর্বক আদায় করে নিতেন চাঁদা। এ ছাড়া এলাকার বড় মাপের মাদক ব্যবসায়ীও তার আশীর্বাদপুষ্ট। মাদক ব্যবসা থেকেও হাসুর মাসে বড় অঙ্কের টাকা আসে। হাসু-কাসু নামে ‘স্টার লীগ’ পরিচালনা সব ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাউন্সিলর হাসু ও তার ভাই মিলে মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর, শেখেরটেক, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, নবোদয় হাউজিং, সিলিকন বেলী, বেড়িবাঁধের নিম্নাঞ্চল এলাকায় দখল করেছেন জমি। তাদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত জুল হোসেন, মাহবুব, শাহ আলম খান, রহমত উল্ল্যাহ ও আবুল কালাম নামে হাসু ও কাসু অসংখ্য বাড়ি ও জমি দখল করে প্রথমে রেজিস্ট্রি করতেন। পরে বিক্রি করে যে টাকা আসতো তার বড় অংশই হাসু ও কাসু নিতেন। হাসু চলাফেরা করেন টয়োটা হ্যারিয়ার, রেভ-৪ ও একটি প্রাডো গাড়িতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে অসংখ্য বাড়িঘর দখল করা এই দুই ভাইয়ের দৌরাত্ম্যে আদাবর এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও রীতিমতো অতিষ্ঠ। কাউকে তোয়াক্কা না করে তারা দুজনই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়ান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। অথচ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে মামলা-হামলাসহ নানা রকম হয়রানি করেন। তাই প্রাণের ভয়ে অনেকেই তাদের শেষ সম্বল হারিয়ে এখন অসহায়। এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাউন্সিলর হাশেমের ডান হাত হিসেবে পরিচিত মাদক সম্রাট সেলিম মিয়া। তিনি মাদক ব্যবসা করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কাউন্সিলরের নির্দেশে সেলিম শেখেরটেকের রফিক হাউজিং এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেলিমের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন মানিক, টিপু, মকবুল, হীরা, জলিল, আল আমিন, মাসুদ, জসিম, জুয়েল, মোহাম্মদ আলী, মকবুল, আলমসহ আরো অনেকে। সেলিমের বোন ওই এলাকার ইয়াবা সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত। কাউন্সিলর হওয়ার পরে আলিফ হাউজিং এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় হাসুর ক্যাডার বাহিনী প্রথমে পুলিশের সোর্সের ওপর পরে আদাবর থানার উপ-পরিদর্শক রঞ্জিতের ওপর হামলা করে। পুলিশের একটি মোটরসাইকেলও তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল। অভিযোগ আছে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে হাসু প্রতিমাসে মাসোহারা পান।

কাউন্সিলর হাসুর দখলবাজির যত অভিযোগ: অনুসন্ধানে কাউন্সিলর হাসু ও তার ভাই কাসুর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে, মামলা হামলা, ভুয়া দলিল তৈরি করে জাল স্বাক্ষরে সাধারণ মানুষের জমি দখলের নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, উত্তর আদাবরের ১৪৫/৩ নম্বরের দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি প্লট দখল। আদাবর ৬ নং রোডের মাথায় ২০৩ দাগে ৬৪ কাঠা, ২০৯ দাগে ১৬০ কাঠা জমি দখল। এই জমির মালিক আলী হোসেন। হাজী মো. ইউসুফ নামের এক ব্যক্তির শেখেরটেক এলাকায় ৩ কাঠা, বায়তুল আমান হাউজিংয়ে সাড়ে ৫ কাঠা জমি দখল। নবোদয় হাউজিং এলাকায় চারটি প্লট, মালেক গলিতে দুটি, আদাবরের বিভিন্ন রোডে সাতটি প্লট, আদাবরের ১০ নম্বর রোডের ৫৯৫ নম্বরের ১০ কাঠা প্লট, ১৩ নম্বর রোডে জমি দখল করে ১০টি দোকান, হোসনাবাদ মার্কেটের পাশে ১০ কাঠার প্লট দখল করে নিয়েছেন। আলিফ হাউজিংয়ের খাল দখল করে অফিস নির্মাণ, মনসুরাবাদ ব্রিজের পাশে জায়গা দখল করে অফিস নির্মাণ, কমফোর্ট হাউজিং ও সুনিবিড় মধ্যস্কুল এলাকায়ও কয়েকটি প্লট দখলে রয়েছে তার। আজিজ গার্মেন্টসের জায়গা মাদ্রাসার নামে লিখে নেয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শেখেরটেক ও বায়তুল আমান হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডের শেষ মাথায় ৫টি প্লট দখলে নিয়েছে হাসুর ঘনিষ্ঠ হাজী মোজাম্মেল হক ও অন্যরা। কমফোর্ট হাউজিংয়ের আদাবর ১৭/এ রোডের শেষ মাথায় ২টি প্লট, ১৬ নম্বর রোডের কাঁচা বাজারের সাত কাঠা জমি দখল এবং ১৬/এ রোডের মসজিদ গলিতে জমি দখল করে কাউন্সিলরের লোকজন ব্যবসা করছেন।

ভুক্তভোগীরা যা বলছেন: ২৫/১ শ্যামলীর আলী হোসেন বলেন, আদাবরে ৬ নং রোডের মাথায় ২০৩ দাগে ৬৪ কাঠা ও ২০৯ দাগে ১৬০ কাঠা পৈতৃক সম্পত্তি হাসু কাউন্সিলর দখল করে নিয়েছে। ২০৯ দাগের জমির জন্য ২০০৭ সালে মামলা করেছিলাম। সাত বছর মামলা চলার পর বিবাদী পক্ষ আদালতে কোনো জবাব দেয়নি। তাই আদালত কাগজপত্র দেখে আমাদের পক্ষে রায় দেন। আর ২০৩ দাগের জমিতে মামলা আছে। মামলাটি এখন বিচারাধীন। আলী হোসেন বলেন, হাসু কমিশনার আমাকে একটি হত্যা মামলার আসামি করে জেল খাটিয়েছেন। জেলে থাকা অবস্থায় আমার জমি দখল করে নেয়। তিনি বলেন, একসময় হাসুর কিছুই ছিল না। পুলিশ দিয়ে হয়রানি, মারধর ও নানারকম হুমকি-ধমকি দিয়ে জমি দখল করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আরেক ভুক্তভোগী মো. ইয়াছিন বলেন, বায়তুল আনাম ১০ নম্বর রোডের শেষ মাথায় ব্রিজের কাছাকাছি সাড়ে পাঁচ কাঠা ও শেখেরটেক ৭ নম্বর রোডের মাথায় মজিদবাগ এলাকার তিন কাঠা জমি কাউন্সিলর ও তার বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় কিছু লোক দখল করে নিয়েছে। এ নিয়ে আমরা থানায় জিডি-মামলা করেছি। আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এ জমি আজও উদ্ধার হয়নি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৮ই অক্টোবর হাসুর ক্যাডার বাহিনী আদাবর থানা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ৭জন নেতাকর্মী মারাত্বকভাবে আহত হন। এর কয়েক সপ্তাহ পরে ১৪ই নভেম্বর উত্তর আদাবরের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদের ওপরও হামলা করে হাসুর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। ওই সময় হাসু ৩০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এসব হামলা ছাড়াও আরও নানা অভিযোগ এনে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাকে বহিষ্কারের আবেদন করেন। পরে আওয়ামী লীগ থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখল, বাড়ি দখল, সন্ত্রাসীদের লালন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীর ওপর হামলা-নির্যাতন, বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে নিজের ছবি লাগানো, জয় বাংলার স্লোগান দিয়ে এলাকায় খুন, ডাকাতি, লুটপাট, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে সংগঠন বিরোধী কাজ করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হাশেম হাসু কালের খবরকে বলেন, আমি স্বর্ণের চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি। আমি তো ফকিরের ঘরে জন্মাইনি। আমার বিশাল সম্পত্তি আছে। এনবিআরে এ সংক্রান্ত ফাইলও আছে। চাঁদাবাজি করে আমি এসব করিনি। বরং নির্বাচিত হয়ে ১০ কাঠা জমি বিক্রি করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকতে পারে। কারণ আমি কাউন্সিলর। আমার পক্ষে-বিপক্ষে লোক আছে। অনেকেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে। আমি স্বতন্ত্র কাউন্সিলর। সরকারদলীয় কাউন্সিলর না যে, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না। ছাত্রলীগ নেতা ও মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা নিজেরা মারামারি করে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে। আর মাদকের সঙ্গে আমি জড়িত নই। এসব পুলিশ, র‌্যাব দেখবে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com