শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় তারুণ্যের উৎসবে বর্ণাঢ্য র‍্যালি। কালের খবর খাগড়াছড়িতে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত। কালের খবর মুন্সিগঞ্জে জাতীয় পার্টির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত। । ‘এবার টার্গেটে সাংবাদিকদের সন্তানেরা’ চট্টগ্রামের মানববন্ধনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে হতদরিদ্রের লাখ লাখ টাকা নিয়ে এনজিও উধাও। কালের খবর ঈশ্বরগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে ইউএনও’র মত বিনিময়। কালের খবর পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানবাধিকার সাংবাদিক ফাউন্ডেশনের ২২ তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর ফ্যাসিস্ট আ.লীগের নেতা মোঃ কামরুল ইসলাম নান্টুর রাজধানী ঢাকায় আবাসিক হোটেলের নামে অবৈধ পতিতা, মাদক ও অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা। কালের খবর শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় ইসলামী শ্রমনীতি চালু করতে হবে : আ ন ম শামসুল ইসলাম। কালের খবর
গোয়ালঘরে মা

গোয়ালঘরে মা

কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল বড়বাড়ির অশীতিপর বৃদ্ধা শমলা বিবি। ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ের জননী তিনি। ৪ মেয়ে থাকেন স্বামীর সংসারে। ছেলেদের সবাই মোটামুটি স্বচ্ছল । রয়েছেন স্বামীও। কিন্তু তিনি আরেক স্ত্রী গ্রহণ করায় খোঁজ নেন না শমলা বিবির।

৯০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধার নামে দুই শতক জায়গা ছিলো। সেটিও লিখে দিয়েছেন ছোট দুই ছেলে হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের নামে। এরপর থেকে ছেলেরাও আর তার কোন খোঁজ নেন না। স্বামী-সন্তান থেকেও যেন কেউ নেই শমলা বিবির।

শমলা বিবির ছেলেরা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি সুন্দর ঘরে বসবাস করেন। কিন্তু মায়ের স্থান হয়নি তাদের সঙ্গে। অগত্যা পরিত্যক্ত মালামালের মতো তারও ঠাঁই হয়েছে বাড়ির গোয়ালঘরে। গোয়ালঘরের এক কোণে মাথা গুজে খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটে তার।

গত দু’বছর ধরে গোয়ালঘরে গরুর পাশাপাশি নোংরা পরিবেশের মধ্যে একটি ভাঙা চৌকিতে শুয়ে দিন পার করছেন এই সর্বংসহা নারী। সেই গোয়ালঘরে জ্বলে না কোন বৈদ্যুতিক বাতি। এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠের মতোই সেখানে দিন-রাত কাটে তার। গোয়ালঘরের গোমূত্রের গর্ত, আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশে মশার অসহনীয় উৎপাতকে সঙ্গী করে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকেই নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন এই জনমদুঃখী মা।

শমলা বিবির এই অসহায়ত্ব পীড়া দেয় ঢাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে বাড়িতে বেড়াতে আসা মেয়ে নূরজাহান বেগমকে। ভাই হেলাল উদ্দিনকে তার বৈদ্যুতিক মিটার থেকে মায়ের থাকার ঘর গোয়ালঘরে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে বলেন। কিন্তু মাস শেষে তার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বহন করতে হবে বলে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান হেলাল। মায়ের দুর্ভোগ আর দুর্দশা সইতে না পেরে স্বামী মানিক মিয়াকে হোসেনপুর থানায় অভিযোগ দিতে পাঠান নূরজাহান।

গতকাল শনিবার দুপুরে মানিক মিয়া অভিযোগ নিয়ে হোসেনপুর থানায় গেলে বিষয়টি জানতে পারেন হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী। অভিযোগ শুনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী সেই মাকে দেখতে হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও অফিসার ফোর্সসহ বিকালেই ছুটে যান উপজেলার শাহেদল বড়বাড়িতে।

হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলীকে শমলা বিবি জানান, দুই বছর ধরে তিনি গোয়ালঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। সারাদিন গোয়ালঘরে, একবারও কেউ তার খোঁজ নিতে আসে না। এই বয়সটাই যেন তার কাছে এক বিরাট অভিশাপ।

এ সময় হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যকে ডেকে আনেন। দুই ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে শমলা বিবিকে ছোট ছেলে নিজাম উদ্দিনের ঘরে তুলে দেন তারা। শমলা বিবির ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন দ্বিতীয় ছেলে ইমান উদ্দিনের ব্যবসায়ী ছেলে ওমর ফারুক। এছাড়া ৪ ছেলে গিয়াস উদ্দিন, ইমান উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিন ১০ দিনের মধ্যে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী বলেন, শমলা বিবির চার ছেলে নতুন ঘর নির্মাণ করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে সেই অঙ্গীকার তারা কতটা রাখেন সেটি বলা যাচ্ছে না। এ কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে তারা এই দুখিনী মায়ের থাকার জন্য একটি নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়া ছাড়াও এই মায়ের থাকার জন্য যাবতীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থাও করে দেবে পুলিশ।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com