শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
‌‌সম্প্রীতি সমাবেশ। কালের খবর সড়ক ও জনপদের ৩য় শ্রেণির কর্মকর্তার সম্পদের পাহাড়। কালের খবর  পেশাদার সাংবাদিকদের সবরকম সুরক্ষা দিতে কাজ করছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার : এম আব্দুল্লাহ। কালের খবর সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন। কালের খবর ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে হবে : ইউএনও মনজুর আলম। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান। কালের খবর ‘দেশ স্বাধীনের পর তৈরি সংবিধানে কোনো জাতির পিতা ছিল না’ : আদালতকে অ্যাটর্নি জেনারেল। কালের খবর দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে খরচ কমানোর ২৭ উপায়!। কালের খবর ওলামাদের মধ্যে রুহানী ঐক্য প্রয়োজন : জামায়াত আমির। কালের খবর আ.লীগ নেতা সুমন খান গ্রেফতার। কালের খবর
কংশ নদীতে বেপরোয়া বালু উত্তোলন, হুমকিতে ফসল রক্ষা বাঁধ। কালের খবর

কংশ নদীতে বেপরোয়া বালু উত্তোলন, হুমকিতে ফসল রক্ষা বাঁধ। কালের খবর

নেত্রকোনা প্রতিনিধি, কালের খবর :

নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের কংশ নদীতে ফসলরক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদী ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, আবাদি জমি ও জনপদ। হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কংশ নদী এক সময় খুবই খরস্রোতা ছিল। সারা বছর ওই নদে পানি থাকতো, বর্ষায় ভয়াল রূপ ধারণ করতো। নদীর পানি দক্ষিণ তীর চাপিয়ে তলিয়ে যেত ফসলি জমি। এলাকার ফসল রক্ষার জন্য গত ১৯৯২ সালের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকার ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করে।

এতে করে ইউনিয়নের বিজয়পুর, দুর্গাশ্রম, ঠাকুরাকোনা, পাহাড়পুর, তাতিয়র, শিমূলাটী, বাঘরুয়া, পাঁচপাই, বাংলাসহ কমপক্ষে ১৫টি গ্রামের হাজার হাজার হেক্টর ইরি বোরো ফসলি জমি অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পায়। ওই বাঁধ সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা থেকে জেলার পূর্বধলার জারিয়া পর্যন্ত লম্বায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার। বাঁধের ওপর দিয়ে জেলা সদর থেকে ঠাকুরাকোনা হয়ে ফকিরের বাজার, পাহাড়পুরসহ ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রামের মানুষ সারা বছর রিকশা, অটোরিকশা, মোটর সাইকেল, সিএনজিতে করে চলাচল করে থাকেন। গত ২০১০ সালের দিকে নদীর দক্ষিণ তীরে ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বাঘরুয়া, পাঁচপাই এলাকায় কংস নদের তীরে দেখা দেয় ভাঙন। এরই মধ্যে খালপাড়, বাঘরুয়া, পাঁচপাই গ্রামের অর্ধশত বাড়ি ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে আবাদি ও অনাবাদী জমি। এবারের বন্যায় নদীর তীর ভাঙন আরো ভয়াল রূপ ধারণ করে। তার ওপর গত কয়েকদিন ধরে রাতের আঁধারে এম.বি শাহজালাল, শাহপরান নামে বড় দুটি ট্রলারে করে রাতের আঁধারে বাঁধ এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। কংশ নদীর বাঘরুয়া, পাঁচপাই ও তাতিয়র অংশে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসল রক্ষা বাঁধ। ভেঙে বিলীন হয়ে যেতে পারে এলাকার মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনপদ, কবরস্থান ও বসতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু লোকজনের মদতে ট্রলারে ড্রেজার বসিয়ে রাতের আঁধারে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা। এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে মদতদাতারা তাদের নানা হুমকি প্রদান করে। এদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পায় না। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার ভূমিকে বিষয়টি জানানোর পর একদিন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের বালু উত্তোলন শুরু করে বালু ব্যবসায়ীরা।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই বছর আগে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বালির বস্তা দিয়ে দায়সারা বাঁধ রক্ষার জন্য চেষ্টা করে। যা পরবর্তী সময়ে নদী ভাঙনের মুখে পড়ে। এ বছর কংশ নদীর পানির ঢেউয়ে বাঁধটি আরো ভেঙে যায়। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে সম্পূর্ণ বাঁধটি। বন্ধ হয়ে যাবে বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করলেও রহস্যজনক কারণে কোনো কাজ হচ্ছে না। বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে না।
সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বাঘরুয়া ও পাঁচপাই এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধটি ভেঙে বাঁধের ওপর চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে গেছে। বালির বস্তাসহ নদীর তীরের মাটি ধসে পড়েছে। নদীর পাড়ে বেশ কিছু বাড়ি, আবাদি, অনাবাদি জমি, কবরস্থান, মসজিদ হুমকির মুখে রয়েছে।
সদর উপজেলার দুর্গাশ্রম গ্রামের সমাজসেবক মাসুম হায়দার জামাল বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের এলাকার বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। বাঁধটি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে বর্ষায় পানি প্রবেশ করে আমাদের এলাকার ফসল পানিতে তলিয়ে যাবে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, বাঘরুয়া গ্রামের অংশে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আছে। বাঁধের কাছে নদী থেকে বালু উত্তোলন খুবই বিপজ্জনক। বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছু নেই। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। এ ব্যাপারে প্রশাসন যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার জন্য অবহিত করা হবে।

ঠাকুরাকোনা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, কংশ নদে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। কিছুদিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা হয়েছিল। আদালত পরিচালনার সময় আমি ছিলাম।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আল মজিদ বলেন এ ব্যাপারে কয়েকদিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছিল। আবার নতুন করে বালু তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, ঠাকুরাকোনার কংশ নদীর ওই অংশে কোনো বালু মহাল নেই। বালু উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মতামত দিন

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com