রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যশোরে দুই ঘন্টার ব্যবধানে দুই খুন। কালের খবর রাষ্ট্রের ক্ষতির উদ্দেশ্যে সংবাদ পরিবেশন মোটেও কাম্য নহে-বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন। কালের খবর বসুন্দিয়ায় ইউনিয়ন বিএনপি’র কর্মী সমাবেশ ও ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত। কালের খবর কুরআন নাজিলের মাসে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে : আহমদ আবদুল কাইয়ূম। কালের খবর শাকিবের জন্মদিনে শেষ ছক্কা হাঁকালেন অপু!। কালের খবর নারান্দিয়ার মুড়ির নেই কোনো জুড়ি। কালের খবর ইউএনও’র মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শামীমের কর্মসংস্থান মোহাঃ মাইনুল ইসলাম লাল্টু। কালের খবর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ৩০টি সড়ক বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নাম করণ। কালের খবর চট্রগ্রামের সিটি মেয়রের সাথে চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সৌজন্য সাক্ষাৎ। কালের খবর মুরাদনগরে ১৪৭ দরিদ্র পরবারের  মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ। কালের খবর
হাসিনা চীন বা ভারতের পাশে থাকাকে বেছে নেননি। কালের খবর

হাসিনা চীন বা ভারতের পাশে থাকাকে বেছে নেননি। কালের খবর

কালের খবর ডেস্ক :

শনিবার চীন সফর শেষ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানুয়ারিতে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর এটাই ছিল বাংলাদেশী এই নেতার প্রথম চীন সফর। তার এই সফর বহুল সাফল্য পেয়েছে।
চীনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন হাসিনা এবং চীনের সঙ্গে তিনি ৯টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। চীনের সঙ্গে বিদ্যুত, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা গভীরতর করেছেন হাসিনা। চীন প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং বাংলাদেশ, চায়না, ইন্ডিয়া, মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর অনুমোদনে বাংলাদেশের ভূমিকা বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক অবাক হওয়ার কিছু নয়, যেহেতু শেখ হাসিনার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো তার দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা।

বিশ্বব্যাংকের মতে, গত এক দশকে বার্ষিক ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটেছে গড়ে শতকরা ৬.৩ ভাগ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পৌঁছেছে শতকরা ৭.৩ ভাগে। এমনকি তা ভারত ও পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে।

দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশে উন্নততর অবকাঠামো, অধিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সমর্থন খুব বেশি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চীন শুধু ঋণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরই করে যাচ্ছে এমন না। একই সঙ্গে পরিবহন, বিদ্যুত বিতরণ ও টেলিযোগাযোগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে অবকাঠামোগত প্রকল্প নির্মাণে যুক্ত হয়েছে।

১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চীন কতটা উন্নত হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে দেখেছেন হাসিনা। বিভিন্ন সময়ে চীন যে পথ অনুসরণ করেছে তার প্রশংসা করেছেন তিনি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন ও বাংলাদেশ সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমানকে উন্নত করাকে ত্বরান্বিত করার অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
এ জন্যই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা হতে পারে পরিপূরক এবং তাতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় থাকবে।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের ইচ্ছা পোষণ করে বাংলাদেশ। এ সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়েছে হাসিনার সফরে। যদিও হাসিনার সরকার শরণার্থীদের প্রতি মানবিক সহায়তা দিয়েছেন, তবু সঙ্কট এখনও সমাধান হয় নি। আর শরণার্থীরা হয়ে আছেন বাংলাদেশের কাছে বোঝা।

বাংলাদেশে সামাজিক অর্থনৈতিক টানাপড়েনকে সহজ করার জন্য, শরণার্থীদের জন্য ২৫০০ টন চাল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। ২০১৭ সাল থেকেই এই সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে চীন। বিশেষ করে এই সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা ও পরামর্শকে উৎসাহিত করে চীন।

দৃশ্যত, বাংলাদেশ চাইছে চীন অব্যাহতভাবে এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা রাখুক। উন্নত অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য একটি স্থিতিশীল আঞ্চলিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণের জন্য।
সদ্য শেষ হওয়া শেখ হাসিনার সফরে তার দক্ষ পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন ঘটেছে। যদিও ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশে চীনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও চীনের ঘনিষ্ঠ হতে দ্বিধা করেননি হাসিনা। দেশের ভিতরে এবং বাইরে তাকে দেখা হয় ভারতপন্থি একজন রাজনীতিক হিসেবে। তিনি তরুণ বয়সে ভারতে ৬ বছর নির্বাসনে ছিলেন।
কিন্তু যখন কেউ সরকার প্রধান হিসেবে তার টানা তিনটি মেয়াদের দিকে তাকাবেন, তিনি দেখতে পাবেন তিনি তার প্রতিশ্রুতিতে ভাল করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখবেন। এবং তিনি সোনার বাংলা গড়তে বদ্ধপরিকর।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে ছিটমহল বিনিময়, পানিবন্টন ও সংযুক্তি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই এসব মৌলিক ভূরাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত ছিল। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে রেখেছে ভারত। এ অবস্থায় নয়া দিল্লির সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থা বাংলাদেশের জন্য কোনো সুবিধা দেবে না।

হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চীন বা ভারতের পাশে থাকাকে বেছে নেননি। এক্ষেত্রে তার মনে সর্বাগ্রে যেটা আছে, তা হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সব প্রতিবেশির সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। তার পররাষ্ট্রনীতিতে কোনোই অসঙ্গতি নেই।

দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে চীন তার সুফল বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ইচ্ছুক।
এই সময়ে ডিজিটাল অর্থনীতি ও যৌথভাবে ডিজিটাল সিল্ক রোড নির্মাণে দুই দেশের সহযোগিতাকে বৃদ্ধি করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন প্রসিডেন্ট শি জিনপিং। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য হাসিনার যে পরিকল্পনা রয়েছে তার সঙ্গে মিলে গেছে শি জিনপিংয়ের চিন্তাভাবনা। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি, যুব শক্তি ও মিডিয়া বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ককে উন্নত করতে আগ্রহী চীন। এর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে সন্ত্রাস মোকাবিলা ও আইন প্রয়োগকে কার্যকর করতে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে উন্নয়নকে সহযোগিতা করবে চীন।

বাংলাদেশে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করবে এবং উন্নয়নে নজর দিতে সক্ষমত হবে- এমনটা পূর্বাভাষ দেয়া যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে আস্থাশীল অংশীদার হবে চীন এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

(লেখক কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটি অব চায়না’র বাংলা স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক। তার এ লেখাটি চীন সরকার পরিচালিত গ্লোবাল টাইমস থেকে অনূদিত)

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com