শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
রাজধানীর কোলঘেঁষা ডেমরা বালু নদে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে ব্যাপক আকারে। এ কারণে প্রতিনিয়ত ওই নদে আটকে যাচ্ছে বালুবাহী মাঝারি ও বড় বালুভর্তি বাল্কহেড। গত ৪ দিন ধরে ঢাকার ভাটারা থানাধীন বালু নদের বেরাইদ এলাকায় মক্কা মদিনা ৫, টিউলিপ ও অঞ্জুমান-২ নামে ২৬ হাজার ফুটের ৩টি বড় বড় বাল্কহেড নাব্য সংকটে আটকে যাওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ২ কিলোমিটার বাল্কহেড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আর শুষ্ক মৌসুমে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এতে শীতকালে শত শত কোটি টাকার বাল্কহেড বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে বাল্কহেড শ্রমিকের মজুরিতেও ভাটা পড়ে বলে তারা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খনন বা ড্রেজিংয়ের অভাবে গত কয়েক বছর ধরে বালু নদে ফকিরখালি, বেরাইদ, নাওড়া, নগরপাড়া ও ডেমরা এলাকায় নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় অন্তত ১২ হাত পানির প্রয়োজন হয় বাল্কহেড চলাচল করতে। এ ক্ষেত্রে এসব এলাকায় এখন ৭ হাত পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ নদের ৩১টি মৌজায় বিআইডব্লিউটিএ ২০১৩-১৪ সালে রক্ষণাবেক্ষণ (মেইনট্যানেন্স) ড্রেজিং করেছে। তার পর আর কোনো খনন বা ড্রেজিং করা হয়নি বলে নদের তলদেশ অনেক ভরাট হয়ে গেছে। আর এ নদ দিয়ে বাল্কহেডের মাধ্যমে বালু বহন করে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলো ভরাট করে আধুনিক নগরে রূপান্তর করা হচ্ছে। অথচ তা ব্যাহত হচ্ছে নাব্য সংকটে। তবে শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে এ নদ দিয়ে ১২০০ থেকে ১৬০০ ফুটের বেশি বড় বাল্কহেড চলাচল করতে পারে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার ক্ষিলগাঁওয়ের বালু নদের ইটাখোলা থেকে ইদারকান্দি, ফকিরখালি ও ভাটারা থানাধীন বেরাইদ বাজার এলাকা পর্যন্ত বালুভর্তি বাল্কহেডের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর নাব্যতা সংকটেই গত ৪ দিন ধরে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে তা অপসারণ করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে জোয়ারের পানির অপেক্ষায় রয়েছে দীর্ঘ প্রায় দুই মাইলের বাল্কহেড যানজট। তা ছাড়া প্রতিবছরই ঢাকার বালুরপাড়, ফকিরখালি, ইদারকান্দি, বেরাইদসহ বালু নদের অধিকাংশ এলাকায় নাব সংকট দেখা দেয়। নদের তলদেশ ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বেরাইদ বাজার এলাকার বাল্কহেড ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, বড় ৩টি বাল্কহেড বালু নদে প্রবেশ করায় এ দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানা সত্ত্বেও কেন এত বড় লোড জাহাজ এ নদ দিয়ে আনল বুঝলাম না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (ইআরপিডিএফ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচএম সুমন বলেন, বালু নদে নাব্য ফিরিয়ে আনতে বৃহৎ পরিকল্পনা প্রয়োজন যা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। একই সঙ্গে নদী বাঁচাতে জলবায়ু ঝুঁকি রাশের লক্ষ্যেও কাজ করছি। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের নিয়ে দ্রুত জরুরি এসব কাজ সমাধানে সবার এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে টঙ্গী নদী বন্দরের সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা সমর কৃষ্ণ সরকার বলেন, বড় ধরনের নাব্য সংকট বালু নদে। জরুরি ভিত্তিতে খনন প্রয়োজন, প্রয়োজন বৃহৎ পরিকল্পনারও। এত বড় বাল্কহেড যানজট লাগার একমাত্র কারণই হচ্ছে নাব্য সংকট। আর জোয়ারের পানি না আসা পর্যন্ত এ যানজট নিরসন সম্ভব নয়। বেরাইদ এলাকায় অনেকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে যানজট নিরসনে।