বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ পূর্বাহ্ন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি, কালের খবর : গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কালিরবাজার-গুনভরি সড়কের পূর্বছালুয়া সেতু নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। ফলে আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীসহ লক্ষাধিক মানুষের চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে বন্যার সময় সেতুটি ভেঙ্গে যায়। সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করা যায় না। সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে এরপর আর সেটি মেরামত করা হয়নি। পরে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি বাশের সাকো তৈরি করে দেওয়া হয়। প্রতিদিন এই বাশের সাকো দিয়ে পূর্ব ছালুয়া, পশ্চিম ছালুয়া, উড়িয়া, নয়াপাড়া, উচেরভিটা, খামার ও ফজলুপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২-৩ হাজার মানুষ চলাচল করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিধ্বস্ত সেতুর দুইপাশে পাকা রাস্তা। মাঝখানে বিধ্বস্ত সেতুর জায়গায় বাশ দিয়ে সাকো তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণের পর সাকোটি সংস্কার না করায় নড়বড়ে হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বাশের হাদলাগুলো এতো নরম হয়েছে পাড়া দিলেই ভেঙ্গে যায়। পারাপারের সময় নড়াচড়া করে সাকোটি। এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে মোটর সাইকেল-সাইকেল ও পায়ে হেটে মানুষ চলাচল করছে। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সাকোটির পুনঃনির্মাণ না করায় সাকো দিয়ে চলাচল করতে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পাহাতে হচ্ছে।
কয়েকজন এলাকাবাসি অভিযোগ করে বলেন, ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার বানিয়ে কি লাভ আমাদের। ভোটের আগে তো অনেক কথা বলে এটা করবে-সেটা করবে এলাকায় কোন দুর্ভোগ থাকবে না। অথচ দুই বছর থেকে একটি সেতুর অভাবে এলাকার লাখ লাখ মানুষের এতো কষ্ট তারা তো একদিন খোঁজ নিতেও আসলো না কোন ব্যবস্তা করলো না। তিন মাস আগে স্পিকার সাহেব সেতুর কাজের উদ্বোধন করে গেল আজও কাজ শুরু হলো না। এদিকে উদ্বোধনি ফলক পর্যন্ত রাস্তার পাশে উল্টে পড়ে আছে।
পুর্ব ছালুয়া গ্রামের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, এই সেতুটি বন্যায় বিধ্বস্ত হবার দুই বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটি সংস্কার কিংবা নতুন করে এখানে সেতু নির্মাণে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। কারণ ভয় লাগে কখন যে ভেঙ্গে পড়ে।
একই গ্রামের ব্যবসায়ী বকুল মিয়া বলেন, রিকশাভ্যান চলাচল করলেও দুই বছর ধরে এই সড়কে কোনো ভারী যানবাহন চলছে না। ফলে উদাখালি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ব্যবসায়ীরা মালামাল পরিবহন করতে পারছেন না। তাদের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার ঘুরে বাধের রাস্তা দিয়ে মালামাল বহন করতে হয়। এতে করে বেশি মালামাল বহন করা যায় না। হিসাব করে দেখা যায় মালও আসে অল্প ভাড়াও দিতে হয় বেশি। এভাবে মালামাল নিয়ে এসে বিক্রি করে ব্যবসায় তেমন প্রসার ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না।
উড়িয়া গ্রামের অটো চালক মিঠু মিয়া বলেন, দুই বছর যাবৎ এই সেতুর কারণে আমাদের অনেক ভোগান্তি। সেতু বিধ্বস্তর পরে যে বাশের সাকোটি তৈরি হয় সেটি দিয়ে সাইকেল-মোটর সাইকেল এবং মানুষ ছাড়া অন্যকোন যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলে একপাশের রিক্সা-ভ্যান, অটো-সিএনজি অন্যপার্শ্বে যেতে পারে না। এর কারণে অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হয়।
মোটর সাইকেল নিয়ে সাকো পার হওয়ার সময় আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, গ্রাম অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। শুধু তাই নয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তারপরও এটি সংস্কারে এতো অবহেলা কেন? উদ্বোধনের তিন মাস পেরিয়ে গেল তবুল কাজ শুরু করা হলো না। কর্তৃপক্ষ বলে পানি শুকালে কাজ করবে। কিন্তু এখানে তো সারা বছর পানি জমে থাকে তাহলে কাজ করবে কখন।
উদাখালি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, সেতুটি নির্মাণ করা খুবই জরুরী। এই সেতুর কারণে অনেক মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে। তিন মাস আগে সেতুর কাজের উদ্বোধন হয়েছে কিন্তু সেতুর জয়গার গভীরতা অনেক বেশি তাই কাজ শুরু হয়নি। পানি শুকালেই হয়তো কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ছাবিউল ইসলাম বলেন, কাজের স্টিমেট অনুয়ায়ী যেখানে পাইল তৈরির কথা ছিল সেখানে পুরাতন সেতুর কিছু অংশ রয়েছে তা বের করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারছে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন করে স্টিমেটের আবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই অনুমোদন পাওয়া যাবে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।