বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক : শতাধিক বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকা সৌদি আরবে নিয়োগদাতাদের নির্যাতন থেকে পালিয়ে দেশে ফিরেছে। দেশ ফিরতে তাদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। কখনও বা কয়েক বছর। বাংলাদেশি ও সৌদি কর্তৃপক্ষের তরফে তাদের দেশে ফিরতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুতে এ সময় লেগেছে। স্থানীয় এনজিও কর্মীদের তথ্যমতে, দেশে ফেরা এসব গৃহপরিচারিকাদের বেশিরভাগই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ইংল্যান্ড ভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এর এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই গৃহপরিচারিকাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের সাক্ষ্য বহন করা কিছু ছবি মিডল ইস্ট আই’ এর কাছে এসেছে। এতে দেখা গেছে নির্যাতিতা এসব নারীর শরীরে ক্ষত, মারধোরের দাগ, পোড়া দাগ এমনটি ছিদ্র করার চিহ্নও রয়েছে।
বাংলাদেশে ফেরা এমন একজন ২১ বছরের রোবিনা। সৌদিআরবে তিনি ছয়মাস গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করেছেন। মিডল ইস্ট আইকে রোবিনা বলেন, ‘আমার গৃহকর্তা আমাকে বেশ কয়েকবার যৌন নির্যাতন করার চেষ্টা করে। যখনই আমি না বলতাম তারা আমি বাধা দেয়া বন্ধ করার আগ পর্যন্ত মারধোর করতো।‘
যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ফলে এই পরিচারিকাদের অনেকের জন্য জীবনের বাস্তবতা পাল্টে গেছে। তাদের এই কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হচ্ছে নির্মমভাবে। অনেকতে তাদের পরিবার প্রত্যাখ্যান করেছে। কাউকে আবার একঘরে করে রেখেছে স্থানীয় সম্প্রদায়।
এমনই এক নারীকে তার স্বামী ফেরত নিতে অস্বীকার জানালে বাধ্য হয়ে এখন তার আশ্রয় হয়েছে স্থানীয় এক এনজিওর আশ্রয়কেন্দ্রে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাকের নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি অভিবাসন কার্যক্রম রয়েছে। ব্র্যাক জানায়, তাদের কাছে এমন কয়েক ডজন পরিচারিকা এসেছেন যারা যৌন নিপীড়িত হওয়ার কারণে পরিবারের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।
বাংলাদেশি এক গৃহকর্মীকে এভাবে ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়েছে তার নিয়োগদাতা (ছবি:মিডল ইস্ট আই)
ব্র্যাকের অভিবাসন কার্যক্রমের কর্মকর্তা শরিফুল হাসান বলেন, দেশে ফেরা নারীদের প্রত্যেকেই কোন না কোন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মিডল ইস্ট আই’কে তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রত্যেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন- যৌন নির্যাতন, শারীরিক নির্যাতন আর মজুরি না দেয়া। কেই কেউ বলেছেন, তাদের নিয়োগদাতা পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ধর্ষণ করেছে। আবার অন্যরা অভিযোগ করেছেন, তাদের যৌন বাণিজ্যে নামতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে নিপীড়ন করা হয়েছে।‘
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকাদের নির্যাতন করায় অভিযুক্ত কোন নিয়োগদাতাকেই সৌদি কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করেনি বা তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয় নি। ওই নিয়োগকর্তারা জানেন যে, তারা যদি একজন বাংলাদেশি মেয়েকে নির্যাতন করেন তাহলে কিছুই হবে না ।’
রিপোর্টে বলা হয়, নির্যাতনের তীব্রতার মুখে এসব নারী কর্মস্থল থেকে পালিয়ে বাইরের সহায়তা নিতে বাধ্য হন। কয়েকজন পালিয়ে আশ্রয় নেন সৌদি আরবে বাংলাদেশি দূতাবাস পরিচালিত কয়েকটি সেফহাউসে। অন্য গৃহকর্মীরা স্থানীয় সৌদি কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন। পরে তাদের বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করার আগ পর্যন্ত অভিবাসন ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
ব্র্যাকের অভিবাসন কার্যক্রমের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ফেরাদের নিয়ে এবছর দেশে ফেরা গৃহপরিচারিকাদের সংখ্যা কমপক্ষে ২০০০ হবে।
এসব পরিচারিকাদের ফেরত আনা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও সৌদি আরবের নানা অভিবাসন ক্যাম্প আর আশ্রয়কেন্দ্রে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় দিন গুনছেন শ’ শ’ নারী।
এ নিয়ে মন্তব্য চেয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করলেও কোন জবাব পায় নি মিডল ইস্ট আই।
…দৈনিক কালের খবর