বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : প্রায় রাতেই ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা। পুলিশ জানিয়েছে, এসব অটোরিকশা চুরি হয় পরিকল্পনা করে, দলবেঁধে। একাধিক চোরচক্র এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। আর প্রতিটি চক্র বা দলের কলকাঠি নাড়ে একজন করে গডফাদার। তেমনই এক গডফাদারের নাম ‘কানা শহিদ’। রাজধানীর পথে পথে রয়েছে তার ছিনতাই দলের সদস্য। ডিএমপি’র প্রতিটি থানায় আছে তার বিরুদ্ধে সিএনজি ছিনতাইয়ের মামলা। অথচ তার টিকিটিরও দেখাও পায় না পুলিশ!
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে কানা শহিদের অস্বাভাবিক এক উত্থানের গল্প। মাত্র ১০ বছর আগেও ঢাকার রাস্তায় অটোরিকশা চালাতো শহিদ। এরমধ্যে এক দুর্ঘটনায় চোখ হারায় সে। বুঝতে পারেন চালক হিসেবে কাজ হারিয়েছে সে। এ পরিস্থিতিতে সবাই যেখানে নিজের চরম বিপদ দেখতে পান, শহিদ সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায়। অটোরিকশার সঙ্গেই থাকতে চায় সে, কিন্তু ভালো কিছুর বদলে অন্ধকার পথ বেছে নেয় । শুরুতে একা, পরে রীতিমত দল গড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরি করতে থাকে সে। লোকের কাছে সে পরিচিত হয় ‘কানা শহিদ’ নামে।
বর্তমানে সিএনজিচালকদের কাছে আতঙ্কের প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠা এই কানা শহিদকে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অটোরিকশা চোর। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি থানাতেই তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ও বহুতল ভবনের মালিক শহিদ। রাজধানীর প্রত্যেক সিএনজি চোর তাকে ‘গুরু’ বলে মানে। তার অধীনে কাজ করে প্রায় একশো চোর। গ্রেফতার হলে তাকে ছাড়িয়ে আনতে রয়েছে আইনজীবী আর দালালও।
শহিদ এখন প্রতিমাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয় করে বলে গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রগুলোর দাবি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরির ক্ষেত্রেও বিশাল জাল বিছিয়ে রেখেছে শহিদ। পুরো শহরকে দশটি অংশে ভাগ করে প্রত্যেক অংশের দায়িত্ব বিশ্বস্ত একেকজনের কাছে দিয়ে রেখেছে সে। আর অংশগুলোতে গড়ে ওঠা চক্রগুলো প্রতিদিন যেসব সিএনজি চুরি করে সেগুলোর বিক্রি বা ফিরিয়ে দেওয়া বাবদ আদায় করা অংশের ভাগ নিয়মিতই পৌঁছে যায় শহিদের কাছে।
পুলিশের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ৪৮ বছর বয়সী কানা শহিদই ঢাকায় সিএনজি চোরচক্রের প্রতিষ্ঠাতা। সে ও তার সহযোগীরা মিলে এ যাবৎ প্রায় দুই হাজার অটোরিকশা চুরি করেছে রাজধানীতে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল শহিদ। তবে প্রতিবারই জামিনে বের হয়ে এসে আবারও একই অপরাধে জড়িয়েছে সে।
ডিএমপির এডিশনাল কমিশনার (ডিবি) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, সচেতনতার অভাবেই চোরদের ফাঁদে ধরা দেয় সিএনজি চালকেরা। আমরা নিয়মিতভাবেই এসব চোরকে ধরছি, কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আবারও নিজের ব্যবসায় ফিরে যাচ্ছে এসব অপরাধী।
চুরির কবলে পড়লে চালকদের পুলিশের সাহায্য নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। এমনকি দালালরা যোগাযোগ করলেও আগে পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা বলছেন তারা।
গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রাহুল পাটোয়ারী বলেন, সিএনজিচালকরা সচেতন হতে শুরু করায় এসব চোর এখন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইককে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। শহরের নির্দিষ্ট অংশে চলাচল করা এই ইজি বাইক এখন চোরদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।