মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার, কালের খবর :
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫ এর বিধি উপেক্ষা করে মাদ্রাসায় পাঠদানের যোগ্যতা দিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর নিয়োগ পেয়েছেন পল্লবী কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে মাহাবুবুর রহমান , নিয়োগ কমিটিতে একজন ডিপ্লোমাধারী ছিল, তাই নিয়োগ কমিটিও ছিল অবৈধ আর এই উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান আবার অবৈধভাবে তিন বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন পল্লবী কলেজে, আমলে নেয়নি ২৯ শে জুন ২০২২ সালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপনও। এরপর জুনিয়রদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসিয়ে সিনিয়রদের বঞ্চিত করেছেন ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করার জন্য এই মাহাবুর রহমান । কলেজে গড়ে তুলেছেন একক আধিপত্য । ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বসান একটি অবহেলিত রুমে আর নিজে বসেন এসি সহ সবকিছু দিয়ে সাজানো রুমে এবং কলেজের সকল কাগজপত্র তার নিয়ন্ত্রণে রাখেন কোন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বুঝিয়ে দেন না , এমনই একাধিক অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অবশেষে সেই অভিযোগ গড়ালো দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় পর্যন্ত । হাইকোর্টে রীট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক জায়গায় এ বিষয়ে একাধিক ব্যক্তি ধারা অভিযোগ হয় বলে জানা যায় এবং তৎকালীন গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য জাহাঙ্গীর এইচ শিকদার নামে ব্যক্তির মহামান্য হাইকোর্টে করা রিট নং ১৪৭১৪ /২০১৭ এর নির্দেশনা মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার প্রো- ভাইস চ্যান্সেলর বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো: মশিউর রহমান কর্তৃক উভয় পক্ষের শুনানী শেষে যে প্রতিবেদন দেন, সে প্রতিবেদনে উঠে আসে তার নিয়োগ কমিটিতে একজন ডিপ্লোমাধারী সদস্য ছিলেন যা নিয়মের বাইরে । এসব অভিযোগ ওঠার পর উক্ত কলেজে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় কলেজর মিটিংয়ে প্রধান চেয়ারে বসেন এই উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান আর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বসেন তার সামনে একটি ছোট চেয়ারে । বিশেষ ক্লাসের নামে বাধ্যতামূলকভাবে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে এবং শিক্ষা বোর্ডের নিয়মের বাহিরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ফরম ফিলাপের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে এবং লাবনী নামে একজন ছাত্রী ১০ হাজার টাকা নিয়ে কলেজে গেলেও তার এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৩ ইং এর ফরম ফিলাপ করেনি তাই লাবনীর পড়ালেখা এখন বন্ধ । তার এই অপকর্মে যে সকল স্টাফগণ সম্মতি না দেন তাদের হুমকি ধামকি সহ নানা হয়রানি অভিযোগ রয়েছে এই মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে । অভিযোগ রয়েছে খোদেজা নামে এক মহিলার কাছ থেকে অফিস সহায়ক( চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে একজন শিক্ষক দিয়ে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে পরে চাকরি দিতে না পেরে ৪০ হাজার টাকা এশিয়া ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে গত ১৫ ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে কলেজের দোয়া অনুষ্ঠানের কোন গুরুত্ব না দিয়ে অন্যত্র ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে দুপুর ১২ টার পরে অনুষ্ঠানে আসেে, অথচ এই মাহবুবুর রহমানই বর্তমান আওয়ামী লীগের কিছু ব্যক্তির নাম ভাঙ্গিয়ে এই কলেজে একক আধিপত্য বিস্তার করছেন যা দুদক অনুসন্ধান করলে সবকিছুই বেরিয়ে আসবে বলে সুশীল সমাজ মনে করেন । এই সকল বিষয় নিয়ে সম্প্রীতিকালে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন, আমার সংবাদ, রুপবানী , শিক্ষা বার্তা, জাতীয় সাপ্তাহিক শেষ সংবাদ সহ একাধিক পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদনও হয়ে আসছে আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করায় জনমনে নানা প্রশ্ন জেগে উঠেছে ।
সরাসরি কলেজে গিয়ে উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের কাছে কোন ডিগ্রী কলেজ থেকে পাঠ দানের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে চাকরি নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন মাদ্রাসায় পাঠদানের যোগ্যতা নিয়ে উপাধ্যক্ষ পদে চাকরি নিয়েছেন। জানা যায় খলিলুর রহমান কামিল মাদ্রাসা, আমিশা পাড়া, সোনাই মুড়ী, নোয়াখালী জেলার একটি মাদ্রাসায় তিনি সহকারি অধ্যাপক হিসেবে পাঠদান করতেন। তার পিতা- মৃত বজলুর রহমান, মাতা- মৃত সাফিয়া খাতুন, কোথাও আবেদন করলে ঠিকানা হিসেবে উক্ত মাদ্রাসার ঠিকানাই তিনি ব্যবহার করতেন ।
এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা বলেন উপাধ্যক্ষ নিয়োগ বিধিতে কোন মাদ্রাসায় পাঠদানের অভিজ্ঞতার কথা বলা নেই, ডিগ্রী কলেজে পাঠদানের অভিজ্ঞতার কথা বলা রয়েছে, আর এসব ভুল করছেন কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি আবু মো: শায়খুল ইসলাম তাই আমাদের করার কিছু নেই।
এ ব্যাপারে জানতে গভর্নিং বডির সভাপতি আবু মো: শায়খুল ইসলাম এর মুঠোফোনে কল দিয়ে না পেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে লিখে উপাধ্যক্ষ নিয়োগে ডিগ্রী কলেজে পাঠদানের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন নাকি মাদ্রাসায় পাঠদানের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় এবং ডিপ্লোমা স্নাতক সমতুল্য কিনা তার কোন উত্তর দেননি এবং কল দিলে তিনি কলটি কেটে দেন এবং পুনরায় কলও দেননি ।
আরো অভিযোগ রয়েছে বিধি মোতাবেক দুইটি জাতীয় পত্রিকায় অধ্যক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের শর্ত থাকা সত্ত্বেও ২০২২ সালের ২২শে নভেম্বর শুধু একটি জাতীয় দৈনিকে অধ্যক্ষ শূন্যপদে আবশ্যক উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় পুনরায় ১৯শে জানুয়ারি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি কলেজ নোটিশ বোর্ডে দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। উপাধ্যক্ষ নিজে অধ্যক্ষের প্রার্থী হন এবং কলেজের অপর এক সহকারী অধ্যাপক অধ্যক্ষ পদে আবেদন করলে তার আবেদন হাতে হাতে গ্রহণ না করায় তিনি ডাকযোগে পাঠালেও তা গ্রহণ করা হয়নি। চলতি বছরের ১৬শে মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজকে অধ্যক্ষ নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি পত্র দেন।
অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহসেনা মুক্তা মিথ্যাচার করে ছাত্রছাত্রী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে ১৮ই জুন কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে গোপনে ওইদিনই অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর পরিপন্থি মাদ্রাসা পর্যায়ের পাঠদানের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপাধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে বর্তমান সভাপতি নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ করান। আর উপাধ্যক্ষ এর নিয়োগ নিয়ে রিট চলমান থাকায় ১৮ই জুন একটি লিগ্যাল নোটিশসহ তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশিতে প্রেরণ করেন। এসব উপেক্ষা করে সভাপতি ২০শে জুন গভর্নিং বডির সভায় অধ্যক্ষ নিয়োগের সুপারিশ অনুমোদন করে। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, উপাধ্যক্ষের নিয়োগের বিষয়ে চলমান দুইটি রিটের নিষ্পত্তি না করে গভর্নিং বডির সভাপতি আবু মো. শায়খুল ইসলাম, মো. মাহবুবুর রহমানকে উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ অনুমোদন করেন। এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ মহসেনা মুক্তা পদত্যাগ করেন আর শেখ মোহসেনা মুক্তা দায়িত্বে থাকাকালীন অধ্যক্ষ
নিয়োগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহণ না করায় আবার গত ২৭ আগস্ট দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও যুগান্তর পত্রিকায় অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খোন্দকার মাহমুদ আলম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ।
১৯৯৮ সালে শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রেরিত চিঠির মাধ্যমে মনোনীত পল্লবী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা দুদকে অভিযোগকারী মো: ইসমাইল হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন মাহবুবুর রহমানের নিয়োগ যে অবৈধ আমার কাছে তার প্রমাণ রয়েছে তাই আমি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর তদন্ত দাবী করে আবেদন করেছি এবং বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি । অবশেষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ আবুল বাশার কে এসব অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন ।
সূত্র :
দৈনিক মানবজমিন ও দৈনিক আমার সংবাদ