শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন
সখীপুর, (টাঙ্গাইল ) প্রতিনিধি, কালের খবর :
টাঙ্গাইলের সখিপুর পিডিবি অফিস দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেটের কারনে তাদের পছন্দ মতো কোন কর্মকর্তা না আসলেই নানান ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২/৩ বছর যাবৎ বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত সংবাদের শিরোনাম হয়ে আসছে সখিপুর পিডিবি অফিস। বিদ্যুৎ অফিসে বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে আলোচনায় জানা যায়, বিদ্যুৎ সেবা মান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে গ্রাহক হয়রানি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহন করলেই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট গ্রাহকগনকে পুজি করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহনকারীদের খপ্পরে পড়তে হয় বিদ্যুৎ অফিসকে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পত্রিকায় সংবাদ যাই হোক না কেন সংবাদের পিছনে উৎস বিদ্যুৎ অফিসের বর্তমান অথবা সাবেক কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ। এই অফিসে শাসনই যেন বারণ। শাসন করলেই হতে হয় বিতর্কিত। দৃশ্যপটের বাইরে থেকে দুষ্টরা দালালদের সামনে রেখে অপপ্রচারের লিপ্ত থাকেন বলে মনে করছেন অনেকেই। পিডিবি সখিপুর অফিসের বর্তমান অবস্থা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার শক্ত প্রকৃতির ও নিয়মের বিষয়ে কড়া। তবে স্যার ভাল কাজ করা সত্তে¡ও স্যারকে সরানোর পাঁয়তারায় রয়েছেন অনৈতিক সুবিধা বি ত সিন্ডিকেটা । বিদ্যুৎ কর্মচারীর এমন কথার সমর্থন করে বিদ্যুৎ অফিসের আরেক কর্মচারী লাইনম্যান সরকার দীনেশ চন্দ্র বলেন ইদানিংকালে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়াতে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজে ও বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীসহ রাত্রিকালীন টহল দিচ্ছেন, তিনি নিজে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না আমাদেরকেও ঘুমাতে দেন না। শেষমেশ স্যার নিজেই হাতে নাতে ট্রান্সফরমার চোর ধরার পর থেকে ট্রান্সফরমার চুরি আপতত বন্ধ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। গত কয়েক বছর যাবৎ যেসব দালালরা বিদ্যুৎ অফিসের সেবাকে পন্য বানিয়েছে, সেসব দালালদের উৎপাত বন্ধ করতে বিদ্যুৎ অফিসের নতুন পদক্ষেপকে মেনে নিতে পারছে না অনেকেই এবং পিডিবি’র প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতেই অপ-প্রচারকে হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। পত্রিকার এক সংবাদে আরো প্রকাশ করা হয়েছে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে বানিজ্য করে অন্তর নামের এখানকার ঠিকাদারই নাকি কর্মকর্তা/কর্মচারী সখিপুর দপ্তরে বদলি করে আনা নেওয়া করে। কোন কর্মকর্তা/কর্মচারীর নিকট হতে এ বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায় নি। এ বিষয়ে ঠিকাদার অন্তর আহমেদ বলেন “আমি একজন সাধারণ মানুষ, মেধা ও পরিশ্রম খাটিয়ে বড় হওয়ার চেষ্টা করাকে অসাধুরা হিংসা করে, বিদ্যুৎ অফিস কেন্দ্রীক আমার ঠিকাদারী ব্যবসা। আমার ঠিকাদারী ব্যবসা বন্ধ করতে অপ-প্রচারের মাধ্যমে আমাকে পিডিবি’র বড় বড় কর্মকর্তার শত্রæ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত ভুল বোঝাবুঝি থেকে সখিপুর পিডিবি দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সাহেব আমার উপর রেগে গিয়ে থানায় জিডি করেছেন, তার সাথে বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক, অথচ পুরানো বিষয়টিকে সামনে এনে পুনরায় প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে”। সখিপুর সাগরদিঘী তে মোড় মকরম চৌরাস্থা, হাবিবুল্লাহ মাষ্টারের, ভারতের চালা ,দাঢ়িপাকা এলাকায় ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনের লাখ লাখ টাকা বিদ্যুৎ অফিসের অন্তর নামের একজন ঠিকাদার নিয়েছেন মর্মে পত্রিকার এক সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা যাচাই করার জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল ও সেই উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম এর সজেমিন পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ঠিকাদার অন্তর কর্তৃক টাকা লেন দেনের কোন প্রকার সত্যতা পায়নি। তদন্ত প্রতিবেদন এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাছাড়া সেই সব এলাকার বেশিরভাগ সাধারণ গ্রাহক অন্তর কে চিনেনই না। পত্রিকার সংবাদে বলা হয়েছে পিডিবি সখিপুর দপ্তরের সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী অচ্যু দাশ, জাহিদ ও শফিকুলের সাথে ঠিকাদার অন্তরের বৈরিতা রয়েছে। সখিপুর পিডিবি’র গত অর্থবছরে এপিপিভূক্ত সমাপ্ত হওয়া চলমান কাজ উপ-সহকারী প্রকৌশলী অচ্যু দাশ, জাহিদ ও শফিকুলই সরেজমিন মেজারমেন্ট নিয়ে ঠিকাদার অন্তরের বিল সার্টিফাই করছিল। কাজের মান ভাল/ সঠিক না থাকলে বিল সার্টিফাই করে ঠিকাদার অন্তরকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পক্ষে উপ-সহকারী প্রকৌশলী অচ্যু দাশ, জাহিদ ও শফিকুলরা থাকত না। ঠিকাদারী কাজের মাধ্যমে অন্তর যেসব এলাকায় বিদ্যুতায়ন করেছে সেসব এলাকায় মানুষজন পিডিবি’র সেবায় সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে ঐ এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকগন জানিয়েছেন। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল ভাল হোক আর খারাপ হোক যাচাই না করেই অপ-প্রচারের মাধ্যমে ঠিকাদারকে জড়িয়ে পিডিবিকে নিয়ে অপ-প্রচার করছেন মর্মে সখিপুর পিডিবি প্রকৌশলীগন মনে করেন। বিদ্যুৎ অফিসের অনেকেই মনে করছেন যে, পিডিবি’র ক্ষতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বদলী করে দেওয়া সাবেক উচ্চমান সহকারী মাহমুদুল হাসান এর ইশারায় এসব হচ্ছে। এই মাহমুদুল হাসানের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে তদন্তে পিডিবি ঢাকা দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা, ময়মনসিংহ দপ্তরের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবুল কালাম আজাদ এবং টাঙ্গাইল দপ্তরের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ উবাইদুল ইসলাম কর্তৃক গত ০৬/০৮/২০২২ইং তারিখে স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার প্রেক্ষিতে মাহমুদুলকে সখিপুর পিডিবি থেকে বদলী করে বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-১, টাঙ্গাইল দপ্তরে গত ২৮/১১/২০২২ইং তারিখে বদলী করা হয়েছিল। তিনি কাগজে কলমে বদলীকৃত দপ্তরে যোগদান করলেও বাসা স্থানান্তর না করেই বাসা নিয়ে রয়ে গেছেন সখিপুরে। সখিপুর পিডিবি অফিসের বর্তমান উচ্চমান সহকারী জিয়ারত হোসেনকে ঘুষ দিয়ে অন্যত্র বদলী করে দিয়ে তিনি পুনরায় সখিপুর দপ্তরে বদলী হয়ে আসবেন বলে লোকমুখে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে মাহমুদুলের মত অসাধু কর্মচারী বদলী হয়ে আসলে গ্রাহক হয়রানিসহ নানা ক্ষতিরমূখে পড়বে সখিপুর পিডিবি অফিস, এমনটাই ধারনা গ্রাহক ও সেবা প্রত্যাশিদের। এ বিষয়ে বর্তমান উচ্চমান সহকারী জিয়ারত হোসেন বলেন, মাহমুদুল ভাল না খারাপ কিছুই জানি না, তবে উনার নামের বরাত দিয়ে আমাকেসহ অজ্ঞাত অনেককেই বদলী করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, এতে আমি অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। সখিপুর পিডিবি অফিসে অনেক গ্রাহকের ধারণা নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার যোগদানের পর বিনা টাকায় গ্রাহক সেবা দিলেও স্বল্প জনবল দিয়ে তথ্য যাচাইয়ের জন্য সময় নিয়ে থাকেন। আগে টাকা দিলেই সবকিছু হয়ে যেতো, এতো যাচাই-বাছাই লাগতো না, টাকা পেলে মাহমুদুলই অলরাউন্ডার ছিল বলে মনে করছেন তারা। পিডিবি’র বিদ্যুৎ সেবা সংক্রান্ত সখিপুর পৌর মেয়র বলেন “বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী অত্যন্ত ভদ্র মানুষ, নিয়মের বাইরে কোন কাজ করতে চায় না বলে জানি, দালালদের পিডিবি’র আঙ্গিনা থেকে তিনি উৎখাত করেছেন বলে অসাধুরা তার ক্ষতি করার চেষ্টায় আছে, তার জন্য সখিপুর পৌরবাসী ভালো সেবা পাচ্ছে”। সখিপুর পিডিবি’র বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদারের নিকট জানতে চাওয়া হলে, তিনি এ প্রতিবেদককে জানান যে, “আমি নতুন এসেছি, বিধি মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি, দালাল-চাটুকারদের প্রশ্রয় দেই না, একটি মহল প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে অপ-প্রচার করে ব্যক্তি সুনাম ও পিডিবি’র ক্ষতি করতে তৎপর রয়েছেন। পূর্বপরিচয় না থাকা মাহমুদুল নামের এক সাবেক কর্মচারী বরাত দিয়ে অনেকেই আমাকে নানাভাবে বিব্রত করার চেষ্টা করছে, তবে সত্যিই যদি মাহমুদুল নামে অত্র দপ্তরের সাবেক কোন কর্মচারী পিডিবি’তে থেকে থাকে তবে কোনক্রমই নির্বাহী প্রকৌশলী’র মতো তার জেষ্ঠ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বিব্রত করার ”েষ্টায় লিপ্ত থাকাটা তার অনুচিত”। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই মনে মনে করছেন “মাহমুদুল হাসানকে তার উপয্ক্তু শাস্তি দিতে পিডিবি কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হওয়ায় সখিপুর পিডিবি’র ভাবমূর্তি নষ্ট করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে। মাহমুদুলকে ময়মনসিংহ জোনের বাইরে বদলী করলে এমন পরিস্থিতির মুখে সখিপুর পিডিবি’কে পড়তে হতো না”। সখিপুর পিডিবি’র গ্রাহকসেবা সুষ্ঠভাবে বজায় রেখে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের রোষানল থেকে সখিপুর পিডিবি অফিস রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ গ্রাহকগণ।