শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১২ পূর্বাহ্ন
মোঃ মুন্না হুসাইন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি, কালের খবর : তাড়াশে উৎপাদিত হচ্ছে তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে সারাদেশে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালী গ্রাম হ্যাচারি পল্লী নামে পরিচিত। হারিকেনের আলোতে হাঁসের বাচ্চা ফুটানো গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের পেশা। তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে প্রতিদিনই ফুটছে হাঁসের এক লক্ষ থেকে দুই লক্ষাধিক বাচ্চা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রেতারা ভিড় জমায় হ্যাচারি পল্লীতে। প্রতিদিন হাজার হাজার হাঁসের বাচ্চা বিক্রি হয়। প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও পিছিয়ে নেই হ্যাচারি পল্লীর লোকজন। অনলাইনে অর্ডার করলেও নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় হাঁসের বাচ্চা।
মহেশরৌহালীর হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন ও বিক্রিতে দেশের মধ্যে সেরা মোকাম বাজার হয়ে উঠেছে। তাড়াশ উপজেলার মহেশরৌহালী গ্রামটি হাটিকুমরল মহাসড়কের পাশেই। গত কয়েক বছরে গ্রামটিতে ছোট বড় মিলে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ টি হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন খামার গড়ে উঠেছে। খামারগুলো বাচ্চা উৎপাদন হ্যাচারি নামেও পরিচিতি পেয়েছে। এখানকার খামার মালিকেরা আগে অন্য পেশায় নিয়োজিত ছিল বলে জানা গেছে। প্রায় ২০ বছর আগে মো. আলম ফকির (৪২) মহেশরৌহালী গ্রামে প্রথম হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন খামার গড়ে তোলেন। তিনি পূর্বে কৃষি কাজ করতেন। তার খামারটি এখন সবচেয়ে বড় খামার। প্রতিটি হাঁসের ডিম এ বছরের কেনা হচ্চে ১৮ থেকে ১৯ টাকায় কিনে বাচ্চা ফুটিয়ে এক দিনের বাচ্চা প্রতি পিচ ৩২ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
এ গ্রামের আরো কয়েকটি খামার মালিক হলেন মো. আলিম ফকির, আলামিন ফকির, রিপন ফকির, আলতাপ ফকির, মোস্তফা প্রমুখ। প্রতিবেদনে হ্যাচারির প্রতিষ্ঠাতা মো. আলম ফকির বলেন, খামারে একসাঙ্গে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার ডিম বাচ্চা উৎপাদনে জন্য বসানো হয়ে থাকে। পাবনা, সিংড়া, নাটোর, রাজশাহী, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশসহ আরো বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁসের ডিম কিনে আনা হয়। তার খামারসহ অন্য খামারগুলোয় উৎপাদিত হাঁসের বাচ্চা পাবনা, যশোর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ বাংলাদেশের প্রায় সব জেলার ব্যবসায়ীরাই পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যান। এসব ব্যবসায়ীদের থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা হাঁসের বাচ্চা কিনে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া খামারীরাও কিনে থাকেন।
তাড়াশ উপজেলার বিরল গ্রামের মো. রিপন বলেন, আগে অন্য পেশায় ছিলাম। এখন নিজ বাড়িতে হাঁসের খামার করেছি। আমাদের এলাকায় এমন আরো অনেক খামার আছে।
এদিকে মহেশরৌহালী গ্রামের বিভিন্ন হ্যাচারিতে গিয়ে জানা যায়, গ্রামীণ বসতি নারীরাও এখান থেকে হাঁসের বাচ্চা কিনে নিয়ে যান। কিনতে আসা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা বাড়ীতে পালনের জন্য ১০০ থেকে ২০০টি বাচ্চা নিচ্ছেন।
গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবারে ছেলে-মেয়েরা ওই পেশায় নিয়জিত রয়েছেন। এরি মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন গ্রামের অধিকাংশ পরিবার। তাড়াশ উপজেলার বিরল গ্রামের মো. রিপন এ পদ্ধতি শিখে স্বপ্ন জয় করেছেন রিপন বলেন, আগে অন্য পেশায় ছিলাম। এখন নিজ বাড়ীতে হাঁসের খামার করেছি। আমাদের এলাকায় এমন আরো অনেক খামার আছে। এলাকার খামারীদের সহযোগিতায় এক হাজার ডিম কিনে তুষ ও হারিকেনের আলোয় বাচ্চা ফুটিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে তা বিক্রি করি। লাভজনক হওয়ায় উৎপাদন দিন দিন বাড়াতে থাকেন। পরে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এসে আমার কাছ থেকে এক দিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা কিনে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতে থাকেন।
তাড়াশ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউল আলম বলেন, গত কয়েক বছরে উপজেলার মহেশরৌহালী সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ছয় শতাধিক খামার গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই এখানে হারিকেন পদ্ধতিতে উৎপাদিত হাসের বাচ্চা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে খামারিদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।