শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন
আব্দুর রউফ ভূঁইয়া, ব্যুরো প্রধান কিশোরগঞ্জ, কালের খবর : কিশোরগঞ্জে নিজ মেয়েকে হত্যার দায়ে মা আছমা আক্তার (৩৬) কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ নারী ওশিশুনির্যাতনদমনট্রাইবুনাল-১ আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রোববার (৩০ এপ্রিল) দুপুর ১ টায় কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এই রায় প্রদান করেন। এ সময় আসামি আমামি আছমা আক্তার আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আছমা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব চরপাড়া গ্রামের মো. সুরুজ মিয়ার মেয়ে।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আছমা আক্তার ২০০৮ সালে নাটোর জেলার আশরাফ উদ্দিনের সাথে প্রেম করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের ঘরে ২০১০ সালে শিউলী আক্তার মায়া নামে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ২০১৩ সালে আছমা আক্তারের স্বামী আশরাফ উদ্দিন ঢাকা মহানগরীর মহাখালী এলাকায় সড়ক
দূর্ঘটনায় মারা যায়। পরে আছমা আক্তার তার মেয়ে শিউলী আক্তার মায়াকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই বসবাস করতেন। ২০১৭ সালে পুনরায় আছমা আক্তারের গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এলাকার আব্দুল কাদেরের সাথে বিবাহ হয়। দ্বিতীয় বিয়ের পরও আছমা আক্তার তার মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। নিহত শিউলি আক্তার মায়া স্থানীয়স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে ৩য় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতেন। এদিকে আছমা আক্তারের স্বামী আঃ কাদের ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর শ্বশুর বাড়ি এসে ৩ থেকে ৪ দিন থাকতেন এবং আছমা আক্তার তার মেয়েকে নিয়ে মাঝে মাঝে আব্দুল কাদেরের বাড়িতে বেড়াতে যেত। তাদের সংসারে বিভিন্ন বিষয় নিয়া ঝগড়া ঝাটি হত। এই কারণে ২ বছর আব্দুলকাদের শ্বশুর বাড়িতে আসেনি। তবে আছমা আক্তার তার মেয়েকে নিয়া স্বামীর বাড়ীতে আসা যাওয়া করত। হঠাৎ একদিন আছমা আক্তার স্বামীর বাড়ি থেকে এসে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দেন। ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তার ভাইয়ের শ্বাশুড়ী তাদের বাড়িতে আসলে ঘরে ঢুকতে বাধা দেন আছমা। এ নিয়েও পরিবারেরসদস্যদের সাথে মনোমালিন্য হয়। পরদিন সকালে তার ১০ বছর বয়সী শিউলী আক্তার মায়াকে স্কুল থেকে ডেকে এনে জোরপূর্বক ইদুঁর মারার একটি ট্যাবলেট খাওয়ান। পরে তার মা মনোয়ারা বেগম বাধা দিলে তাকে ধাক্কা দিয়ে মোবাইলের এয়ারফোনের তার পেঁচিয়ে মেয়ে শিউলীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় এদিন রাতেই শিউলীর নানা সুরুজ মিয়াবাদী হয়ে মেয়ে আছমাকে একমাত্র আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান তদন্ত শেষে আছমাকে একমাত্র আসামি হিসেবে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালত মামলার দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য শেষে রবিবার ৩০ এপ্রিল-২৩ ইং রোববার দুপুর বেলা ১টায় এই রায় ঘোষণা দেন মামলার বিচারক।
কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (স্পেশাল পিপি) অ্যাডভোকেট এম এ আফজল বিকালে সংবাদ মাধ্যম কে মামলার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।